Pseudomonas syringae pv. syringae
ব্যাকটেরিয়া
প্রাথমিক অবস্থায় নিচের দিকে থাকা পাতার শিরা বরাবর পীত-সবুজ থেকে জলপাই রঙের স্বচ্ছ বিবর্ণ ক্ষতের আবির্ভাব হয়। এ ক্ষত ধীরে ধীরে উপরের দিকে থাকা পাতাগুলিতেও দেখা দিতে থাকে। উপযুক্ত অনুকূল আবহাওয়াতে, এ ক্ষতগুলি পাতার দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তার লাভ করে এবং একসঙ্গে মিলিত হওয়ার প্রবণতা দেখায়। রোগের প্রথম অবস্থায় ব্যাকটেরিয়ার দেহকোষ দিয়ে পরিপূর্ণ জলকণার মতো কণাকে মাঝেমাঝে পাতার আক্রান্ত কোষকলা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এ ক্ষতগুলির কেন্দ্রস্থলে বাদামী রঙের মৃত কোষকলাযুক্ত সরু দাগ দেখা যায় যা পরে শুকিয়ে ঝরে পড়ে যায়, যার ফলে পাতায় এক ধরনের খসখসে ভাব দেখা যায়। ভুট্টার কিছু প্রজাতির চারাগাছে কাণ্ডের পর্ব থেকে উৎপন্ন ও কাণ্ডকে ঘিরে থাকা পাতাগুলিতে বর্ণহীন সরু দাগ এবং কাণ্ডের উপরের পর্বগুলিতে বিকৃতভাব দেখা যায়।
দুঃখিত, এখনো পর্যন্ত পাতার হল্কাস দাগ রোগের জন্য কোন বিকল্প দমন পদ্ধতি জানা নেই। ভুট্টার পাতার হল্কাস দাগ রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ মেনে চলতে হবে।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। বর্তমানে যে রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু আছে তা তামা বা তাম্রঘটিত যৌগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অনেক স্প্রে আছে যেগুলির কার্যকারিতা খুবই সীমিত, যার ফলে যদি একবার মড়ক লাগে তবে এ রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা আরও বেশী কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
কোন জাতের ভুট্টার বীজ ব্যবহার করা হচ্ছে, আবহাওয়ার অবস্থা এবং রোগজীবাণু কতটা শক্তিশালী তার উপরেই নির্ভর করে রোগ লক্ষণগুলি কতটা প্রকাশ পাবে। মাটিতে পড়ে থাকা শস্যের অবশিষ্টাংশের উপর, বিভিন্ন বিকল্প আশ্রয়দাতার উপরে এবং আগাছা (জোয়ার, রাই শস্য, ত্রিপত্র গুল্ম বিশেষ) ও বর্ডার লাইন হিসাবে রোপিত শস্য জাতীয় উদ্ভিদের উপর এ রোগের ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকে। ব্যাকটেরিয়া জলসেচের মাধ্যমে, বাতাসের মাধ্যমে বা ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসা শ্রমিক ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে উদ্ভিদ থেকে উদ্ভিদে ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ভিদের গায়ে সৃষ্ট স্বাভাবিক খোলামুখ বা ক্ষতস্থানের মধ্যে দিয়ে প্রবেশের মাধ্যমে গোটা উদ্ভিদকেই রোগাক্রান্ত করার আগে উদ্ভিদের পাতার উপরে বিপুল সংখ্যায় বংশবৃদ্ধি করে। এ ব্যাকটেরিয়া শূন্য (০) থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে কিন্তু ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই হলো এদের পক্ষে সবচেয়ে অনুকূল। ভিজে আর্দ্র আবহাওয়াতে এ রোগের আক্রমণ সবথেকে মারাত্মক হয়ে ওঠে। মরশুমের শুরুতে যখন এ রোগের আবির্ভাব হয়, কিছু চাষীভাই জমির সমস্ত শস্যকে লাঙল দিয়ে কর্ষণ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেন।