পেঁপে

পেঁপের ভাইরাসঘটিত পাতা মোড়ানো রোগ

PaLCV

ভাইরাস

সংক্ষেপে

  • উপরের দিকের পাতাগুলি ক্রমাগত নিচের দিকে ও ভিতরের দিকে মুখ করে গুটিয়ে যায়।
  • পত্রশিরাগুলি মোটা হয়ে পড়ে ও মধ্যবর্তী স্থান ফাঁকা হয়ে যায়।
  • পাতাগুলি চামড়ার মতো খসখসে ও ভঙ্গুর ধরনের হয়।
  • পত্রমোচনের ফলে গাছের বৃদ্ধি রোধ হয় এবং কয়েকটিমাত্র ছোট ও বিকৃত আকারের ফল গাছে অবস্থান করে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

পেঁপে

উপসর্গ

এই রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো পাতা নিচের দিকে বা ভিতরের দিকে গুটিয়ে যায়। অন্য লক্ষণগুলির মধ্যে পত্রশিরা মোটা হয়ে যাওয়া, মাঝেমধ্যে বাইরের দিকে পত্রশিরার স্ফীতি প্রভৃতি দেখা যায়। পাতাগুলি চামড়ার মতো খসখসে ও ভঙ্গুর জাতীয় হয়ে যায় এবং পত্রবৃন্ত বিকৃত হয়ে পাকিয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। গাছের উপরের দিকের পাতাগুলিতেই বেশী আক্রমণ হয়। রোগের পরবর্তী পর্যায়ে পত্রমোচন ঘটে। গাছের বৃদ্ধি রোধ হয় এবং গাছে ফুল ও ফল ধরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি ফল ধরেও তবে তা ছোট, আকারে বিকৃত হয় এবং অকালেই এগুলি ঝরে পড়ে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

সাদা তেলের দুগ্ধবৎ নির্যাস (১%) স্প্রে করলে জাবপোকার মাধ্যমে এই ভাইরাসের আত্মস্থীকরণ ও বিস্তার বাধাপ্রাপ্ত হয়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ভাইরাসের আক্রমণের বিরুদ্ধে কোন রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই। তবে সাদা মাছির বংশবৃদ্ধি সীমিত রাখার মাধ্যমে এই রোগের তীব্রতা কম রাখা যেতে পারে। বীজবপনের সময়ে কার্বোফুরান (carbofuran) মাটিতে প্রয়োগ করলে এবং ১০ দিনের ব্যবধানে ডাইমেথোয়েট (dimethoate) বা মেটাসিসটক্স (metasystox) ৪-৫ বার পাতায় স্প্রে করলে সাদা মাছির বংশবৃদ্ধি কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব।

এটা কি কারণে হয়েছে

এই রোগের ভাইরাসের প্রধান বাহক হলো বেসমিসিয়া ট্যাবাসি (Bemisia tabaci) নামক সাদা মাছি। এই মাছি এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে গিয়ে এই রোগের ভাইরাসের বিস্তারে সাহায্য করে। বাহকের শরীরে ভাইরাস সক্রিয় অবস্থায় থাকাকালীন সময়েই কয়েক সেকেন্ড সময়ের মধ্যেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে যায়। আক্রান্ত চারাগাছ বা রোগাক্রান্ত বীজের মাধ্যমে ও সেইসঙ্গে চারাগাছে কলম তৈরীর সময়ে ব্যবহৃত উপাদানের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। পেঁপে গাছের পাতা মোড়ানো ভাইরাস জমিতে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে না। পেঁপে ছাড়াও টম্যাটো ও তামাক গাছ এই ভাইরাসকে পরাশ্রয় প্রদান করে । এই ভাইরাস ব্যাপক বিস্তার লাভ করা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কিন্তু সামান্যই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপার লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এই রোগ মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতি ডেকে এনেছে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • রোগ প্রতিরোধী উদ্ভিদের জাত রোপণ করার চেষ্টা করুন।
  • পেঁপে গাছের আশেপাশে এই রোগের জীবাণুকে পরাশ্রয় প্রদান করে এমন ধরনের উদ্ভিদ বেড়ে উঠতে দেবেন না।
  • উপকারী পোকামাকড় যাতে অত্যধিক কীটনাশকের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলে নষ্ট করে দিন।
  • ফসল তোলার পরে উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ যাতে জমিতে পড়ে না থাকে সেদিকে নজর রাখুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন