চিনাবাদাম

চীনাবাদামের বাড নেক্রোসিস ভাইরাস রোগ

GBNV

ভাইরাস

সংক্ষেপে

  • পাতা ও বৃন্তের উপরে ছোপছোপ দাগ ও অসম আকারের ক্ষতচিহ্ন বেড়ে ওঠে।
  • আক্রান্ত উদ্ভিদ খর্বাকৃতি হয়, পর্বমধ্য ও সহায়ক মঞ্জরী হয় ছোট।
  • শীর্ষ মুকুল মারা যায় এবং ছোপ ছোপ দাগ নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে


চিনাবাদাম

উপসর্গ

রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হলো কচি পাতায় হালকা ক্লোরোফিল শূন্যতার দরুন ছোপছোপ দাগ দেখা যায় যা পরবর্তীতে সম্পূর্ণ ক্লোরোফিল শূন্য মরা কোষ সমন্বিত বৃত্তাকার দাগ ও ডোরাকাটা দাগে পরিণত হয়। মরা কোষ সমন্বিত দাগ পরবর্তীতে পত্রবৃন্ত, কাণ্ড ও প্রান্তিক কুঁড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ফুলের গঠন ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, যে কারণে এ রোগের নামকরণ করা হয়েছে বাড নেক্রোসিস রোগ। এ প্রক্রিয়া মোটামুটি উচ্চ তাপমাত্রায় ত্বরান্বিত হয়। আক্রান্ত উদ্ভিদ খর্বাকৃতির হয়, পাতা হয় বিকৃত গঠনের এবং সামগ্রিকভাবে ক্লোরোসিস রোগের সৃষ্টি হয়। উদ্ভিদের ভূগর্ভস্থ কাণ্ডে নানাবর্ণের ছাপযুক্ত দাগ ও বর্ণহীনতা দেখা দিতে পারে, এবং বীজগুলো দাগযুক্ত, ছোট ও কুঞ্চিত আকারের হতে পারে। প্রাথমিক স্তরে উদ্ভিদে সংক্রমণ দেখা দিলে ফলন হ্রাস পায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

থ্রিপসের বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে বীজ বপনের ২০ দিন পরে জোয়ার বা নারিকেল পাতা থেকে প্রাপ্ত নির্যাস স্প্রে করলে তা কার্যকরী হয়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ভাইরাসঘটিত সংক্রমণের জন্য রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকরী হয় না তবুও এ ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু রাসায়নিক নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পরে থাইয়ামেথক্সাম বা ডাইমিথোইয়েট স্প্রে করলে বাড নেক্রোসিসের আক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। ইমিডাক্লপ্রিড @ ২ মিলি/কেজি দ্বারা বীজ শোধন করলেও থ্রিপস পোকার আক্রমণ সফল ভাবে করা যায়।

এটা কি কারণে হয়েছে

চিনাবাদামের বাড নেক্রোসিস একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। উদ্ভিদে এ রোগের সংক্রমণ পুনঃপুন ঘটে এবং একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির পোকার কারণে (থ্রিপস পালমি) এ সংক্রমণ ঘটে থাকে, যা উদ্ভিদের কোষকলা ও প্রানরস খেয়ে বেঁচে থাকে। চীনাবাদাম গাছের অনুপস্থিতিতে এ থ্রিপস ক্ষেত ও ক্ষেতের আশেপাশে বিকল্প পরাশ্রয় প্রদানকারী উদ্ভিদ, যেমন— সাউদার্ন ম্যারিগোল্ড (ট্যাগেটেস মিন্যুটা) এবং সাবটেরেনিয়ান ক্লোভার (ট্রিফোলিয়াম সাবটেরেনিয়ান)-এ অবলম্বন করে বেঁচে থাকে। সে কারণে, এ ধরণের উদ্ভিদের নিধন পোকার বংশবিস্তার রোধের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ঘন করে চীনাবাদামের গাছ আবাদ করলেও ফসলকে থ্রিপস পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • বাজারে রোগ প্রতিরোধী জাত সুলভ হলে উক্ত জাত ব্যবহার করুন।
  • মৌসুমের প্রথমেই বীজ বপন করলে, এ রোগের জীবাণু বহনকারী পোকার উপদ্রব এড়ানো যেতে পারে।
  • বীজ বপনের সময় খেয়াল রাখুন যাতে ঘন করে বোনা হয়।
  • সাথী ফসল হিসাবে চীনাবাদামের সাথে ভুট্টা এবং “পার্ল মিলেট”-এর চাষ করুন যাতে এ রোগের জীবাণু বহণকারী পতঙ্গের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকে।
  • মুগডাল বা মাষকলাইয়ের মতো রোগের প্রতি সংবেদনশীল ফসলের কাছাকাছি চীনাবাদামের চাষ থেকে বিরত থাকুন।
  • এ রোগের জীবাণুবহনকারী কীটের বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে এমন আগাছা এবং পরাশ্রয় প্রদানকারী উদ্ভিদ উপড়ে ফেলুন।
  • রোগের প্রথম লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৬ সপ্তাহ পরে ক্ষেত থেকে উদ্ভিদের সকল অবশিষ্টাংশ সরিয়ে ফেলুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন