Alternaria spp.
ছত্রাক
রোগের লক্ষণ জাতের বৈশিষ্ট্যের উপর অনেকটা নির্ভর করে। সাধারণতঃ জীবাণুর আক্রমণে বীজ থেকে নতুন বেড়ে ওঠা চারা গাছ ড্যাম্পিং-অফ রোগে মারা যায়। বড় গাছের পুরোনো পাতায় গাঢ়-বাদামী রঙের সমকেন্দ্রিক বৃত্তাকার সুসংগত কিনারাযুক্ত দাগ তৈরি হয়। সময়ের সাথে সাথে নির্দিষ্ট দাগের কেন্দ্র পাতলা এবং কাগজের মত দেখায় যা ধীরে ধীরে শুকিয়ে পড়ে এবং দেখতে বন্দুকের গুলির ছিদ্রের মতো দেখায়। দাগগুলো পরিপক্ক সয়াবিনের বীজেও দেখা যায়, যা ছোট, কুঞ্চিত ও বিবর্ণ হয়ে যায় এবং বীজে পচনের লক্ষণ দেখা যায়। যা হোক পরিপক্ক গাছে রোগ বিস্তার হয় বলে ফলনে তেমন একটা ক্ষতি হয় না এবং সেজন্য দমন ব্যবস্থার সুপারিশ প্রয়োজন পড়ে না।
সয়াবিনের পাতার অল্টারনেরিয়া দাগ রোগ দমনে কোনো প্রকার জৈবিক দমন ব্যবস্থা জানা যায়নি। সাধারণতঃ ২.৫ গ্রাম/লিটার কপার সংগঠিত ছত্রাকনাশক জৈব কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সম্ভবমতো সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন । মরশুমের শেষে এ রোগ দেখা দিলে তেমন কোনো দমন ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে না। মরশুমের শুরুতে আক্রমণ দেখা দিলে এবং আক্রমণের তীব্রতা বেশি থাকলে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করুন। এমতাবস্থায়, লক্ষণ দেখা মাত্রই ম্যানকোজেব, অ্যাজোক্সিস্ট্রবিন অথবা পাইরাক্লোস্ট্রবিন সংগঠিত উপাদান প্রয়োগ করা যেতে পারে। রোগের ব্যাপক বিস্তার সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে দমন ব্যবস্থা বিলম্বিত করা যাবে না। এ সকল ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করলেও সফল ভাবে রোগের প্রাদুর্ভাব দমন করা যায়।
সয়াবিনে অল্টারনেরিয়া গনের বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকের আক্রমনে এ রোগ দেখা দেয়। এ জীবাণু ফলের ত্বক ভেদ করতে পারে, এমনকি বীজে আক্রমণ করে এবং এই আক্রান্ত ফলের খোসাগুলিই এক মরশুম থেকে অন্য মরশুমে রোগের বিস্তারের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রোগ-সংবেদনশীল আগাছা এবং অপচনশীল ফসলের অবশিষ্টাংশে এই ছত্রাক শীতাবস্থা অতিবাহিত করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে গাছে রোগ বিস্তার প্রধানতঃ বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে হয়ে থাকে যা সাধারণতঃ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টির ঝাপটায় ছড়িয়ে পড়ে। যদি পাতায় প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা থাকে তবে ছত্রাকের বীজগুটি এক ঘন্টার মধ্যেই গজানোর সুযোগ পায় যা পাতার পত্ররন্ধ্র দিয়ে বা পোকায় করা ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। রোগ বিস্তারের উপযুক্ত তাপমাত্রা হল প্রায় ২০-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মরশুমের শেষে পুরোনো পাতায় এবং চারা অবস্থায় গাছ খুব রোগ সংবেদনশীল থাকে। বর্ষা মরশুম শেষে গাছের শারীরবৃত্তীয় বা গাছের খাদ্যপ্রাণের সমস্যা হলে এবং সেচ প্রদান করলে সংক্রমন ত্বরান্বিত হয়।