ক্যাপসিকাম ও মরিচ

আশুধ্বসা রোগ

Alternaria solani

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • পাতার গায়ে হলুদ অস্বচ্ছ সমকেন্দ্রিক বলয়াকার বর্ধনশীল দাগ দেখা যায়।
  • পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে।
  • ফল পচতে শুরু করে এবং মাটিতে ঝরে পড়ে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে


ক্যাপসিকাম ও মরিচ

উপসর্গ

পুরাতন পত্ররাজি, কাণ্ড এবং ফলে আশুধ্বষা রোগের লক্ষণ দেখা যায়। পাতায়, ধূসর থেকে বাদামী বর্ণের ক্ষত সমকেন্দ্রিক বৃত্তাকারে বাড়তে থাকে – যা দেখতে “চাকা চাকা দাগ” (bullseye) বলে মনে হয়। এ ক্ষতসমূহ উজ্জ্বল হলুদ রঙের অস্বচ্ছ দাগ দ্বারা বেষ্টিত থাকে। রোগ বৃদ্ধির কারনে সম্পূর্ণ পাতা ক্লোরোফিল শূন্য হয়ে ঝরে পড়ে, যা উল্লেখযোগ্যভাবে পত্রমোচন ঘটায়। যখন পাতা মরে যায় ও ঝরে পড়ে, ফলের সূর্যের আলোতে ঝলসে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একই ধরণের সমকেন্দ্রিক দাগ কালচে ক্ষত আকারে উদ্ভিদের কাণ্ড এবং ফলেও দেখা দেয়। ফল পচে যেতে শুরু করে এবং পরবর্তীতে ঝরে পড়ে যেতে পারে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

ব্যাসিলাস সাবটিলিস সমন্বিত পদার্থ অথবা তাম্র-উপাদান ভিত্তিক জৈব ছত্রাকনাশক হিসেবে স্বীকৃত যা এই রোগের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমত সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। বাজারে বিভিন্ন প্রকারের ছত্রাকনাশক পাওয়া যায় যা আলুর আশুধ্বসা রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অ্যাজোক্সিট্রবিন, পাইরাক্লোস্ট্রোবিন, ডাইফেনকোনাজল, বস্কালিড, ক্লোরোথ্যালোনিল, ফেনামিডোন, ম্যানেব, ম্যানকোজেব, ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন, ও জিরান ইত্যাদি ছত্রাকনাশক আলুর আশুধ্বসা রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক মিশ্রণ ব্যবহারের সুপারিশ রয়েছে। উপযুক্ত আবহাওয়ায় সময়মতো সকল পরিচর্যা শেষ করুন। এ উপাদানগুলো প্রয়োগ করার পর, ফসল সংগ্রহের পূর্বে একটি বিরতি দিন যাতে স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ থাকে।

এটা কি কারণে হয়েছে

অলটারনারিয়া সোলানি (Alternaria solani) ছত্রাক প্রাথমিকভাবে মাটিতে বিদ্যমান সংক্রমিত উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশের মধ্যে অথবা অন্য কোনো পরাশ্রয় দানকারী উদ্ভিদকে আশ্রয় করে শীত মরশুম অতিবাহিত করে। ক্রয়কৃত আলুবীজ বা চারাগাছ আগে থেকেই সংক্রমিত থাকতে পারে। নিচের দিকে থাকা পাতা সংক্রামিত মাটির সংস্পর্শে এসে প্রায়শই রোগাক্রান্ত হয়। ছত্রাকটির বৃদ্ধির জন্য উচ্চ তাপমাত্রার (২৪-২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পাশাপাশি উচ্চ আর্দ্রতারও (৯০%) দরকার হয়। দীর্ঘস্থায়ী আর্দ্র আবহাওয়া (অথবা আর্দ্র/শুষ্ক আবহাওয়া) থাকলে তা ছত্রাকরেণুর বৃদ্ধি ঘটায় যা বায়ু, বৃষ্টির ছাট বা উপরি সেচের মাধ্যমে ছড়ায়। গাছ সবুজ থাকতে অথবা আর্দ্র আবহাওয়াতে কন্দ সংগ্রহ করলে তা ক্ষতদাগ ও সংক্রমণের প্রতি অসহনশীল হয়। অতি বৃষ্টিপাতের পর রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়, বিশেষতঃ, গ্রীষ্ম ও অব- গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় অঞ্চলে এ প্রকোপ বেশি হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • জীবাণুমুক্ত প্রত্যয়িত বীজ বা চারাগাছ ব্যবহার করুন।
  • রোগ সহনশীল জাত নির্বাচন করুন।
  • উঁচু বীজতলায় চারা রোপণ করুন যাতে উত্তম নিকাশী ব্যবস্থা থাকে।
  • বায়ু প্রবাহের দিক অনুসরণ করে ফসলের সারি তৈরি করুন এবং ছায়াযুক্ত স্থান যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
  • বৃষ্টিপাত বা জলসেচের পর পত্রপল্লব যাতে দ্রুত শুকিয়ে যায় সেজন্য চারা পাতলা করে রোপণ করুন।
  • উদ্ভিদের সাথে যেন মাটির স্পর্শ না ঘটে সেজন্য জমিতে মালচ্‌ বিছিয়ে দিন।
  • রোগ সনাক্তকরনে ( বিশেষ করে আর্দ্র আবহাওয়াতে ) নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন।
  • গাছের নিচের দিকের পাতা যেগুলো মাটির খুব কাছাকাছি অবস্থায় থাকে সেগুলো অপসারিত করুন।
  • স্পষ্ট লক্ষণবিশিষ্ট পাতা অপসারন করুন এবং ধ্বংস করে ফেলুন।
  • গাছ শক্ত ও সতেজ রাখতে মাটিতে পর্যাপ্ত অনুখাদ্য দিন।
  • গাছকে খাড়া রাখতে খুঁটি ব্যবহার করুন।
  • পাতার আর্দ্রতা হ্রাসে ড্রিপ পদ্ধতিতে জলসেচ দিন।
  • গাছে সকালে সেচ দিন যাতে বিকালে পাতা শুকিয়ে যায়।
  • জমির ভিতরের এবং আশেপাশের অসহনশীল আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।
  • গাছ ভেজা থাকা অবস্থায় আন্তঃপরিচর্যা বন্ধ রাখুন।
  • ফসল সংগ্রহের পর, উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ অপসারণ করুন এবং পুড়িয়ে ফেলুন (জৈব সার বানাবেন না)।
  • ফসল তোলার পরে উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ গভীর চাষ দিয়ে মাটির সাথে মিশ্রিত করুন ( ৪৫ সেমি.-র গভীরে)।
  • ২-৩ বছর পর পর অনাবাসী ফসল দ্বারা একটি ফসল-চক্রের পরিকল্পনা করুন।
  • পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা আছে এমন ঠাণ্ডা স্থানে কন্দ সংরক্ষণ করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন