ভুট্টা

ভুট্টার ডগার পচা রোগ

Gibberella fujikuroi

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • ডগা দুর্বল দেখায়।
  • ডগার উপর ছোট, কালো ছত্রাকের কাঠামো দৃশ্যমান হয়।
  • ভুট্টার মোচা বিবর্ণ হয় এবং গাছের খর্বাকৃতি বিকাশ পরিলক্ষিত হয়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে


ভুট্টা

উপসর্গ

পরিবেশগত অবস্থা এবং রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে লক্ষণ পৃথক হতে পারে। সংক্রামিত গাছ সহজেই এদের অস্বাভাবিক উচ্চতা দ্বারা সনাক্ত করা যায়, হয়ত দীর্ঘ বা খর্বাকার এবং ফ্যাকাশে চেহারা পরিলক্ষিত হয়। বীজ ক্ষতযুক্ত হয় ও পচা এবং বিকৃত দেখায়। কাণ্ডের ত্বক বিবর্ণ হয়, ছত্রাকের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়, গাছ খর্বাকৃতি বা পাতা গুচ্ছাকারে থাকে। পাতায় অস্বাভাবিক রঙ এবং ছত্রাকের বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। মোচায় কালো বা বাদামী ক্ষত দেখা যায়, খসখসে ধরণের হয় এবং মোচা পচা রোগে আক্রান্ত হয়। পুরো গাছ স্যাঁতসেঁতে থাকে এবং সেখানে প্রাথমিক অবয়ব এবং চারার চেহারা ঝলসানো হয়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

জীবাণু ছড়ানোর আগে সংক্রমণকারী পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে নিমের নির্যাস স্প্রে করুন। জীবাণুকে দমন করতে ট্রাইকোডার্মা স্পেসিস-র মতো জৈব নিয়ন্ত্রণকারী এজেন্ট প্রয়োগ করুন। স্যিউডোমোনাস ফ্ল্যুরোসেন্স কাণ্ড পচা রোগ নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর। এ দুটি উপাদানই বীজ শোধনের পাশাপাশি মাটিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ২৫০ কেজি খামারের জৈব সার ছিটিয়ে জমি শক্তিশালী করুন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। বীজ বপনের আগে তা ম্যানকোজেব ৫০% এবং কার্বেনডাজিম ২৫%-র দ্রবণ দিয়ে শোধন করুন।

এটা কি কারণে হয়েছে

এ রোগ মাটি বাহিত ছত্রাক গিবেরেল্লা ফুজিকুরোই দ্বারা হয়। জীবাণুর বীজগুটি বাতাস এবং বৃষ্টিপাত দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্ষতের মাধ্যমে ভুট্টার থোড়ে প্রবেশ করে। চারা বীজের অঙ্কুরোদ্গম থেকে টাসেল বের হওয়া পর্যন্ত লক্ষণ দেখা যায়। এটি বীজ, ফসলের অবশিষ্টাংশ বা ঘাসের মতো বিকল্প আবাসে বেঁচে থাকে। এটি রেশম, শিকড় এবং উদ্ভিদের কাণ্ডের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মূলতঃ পোকামাকড়ের ক্ষয়ক্ষতির ফলে সৃষ্ট ক্ষত দিয়ে মোচায় প্রবেশ করে। এটি অঙ্কুরিত হয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশমুখ থেকে শস্য অংশে আবাস গড়ে তোলে। বিকল্পভাবে, এটি উদ্ভিদের শিকড়ে কলোনী গড়তে শুরু করে এবং গাছের উপরের দিকে ধাপে ধাপে উঠতে শুরু করে। ভুটা পরিবেশগত (চাপ) বিভিন্ন অবস্থার অধীনে সংক্রামিত হতে পারে তবে আবহাওয়া উষ্ণ (২৬-২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) এবং আর্দ্র থাকলে এবং ফসল ফুল আসার পর্যায়ে পৌঁছে গেলে লক্ষণ তীব্র হয়ে ওঠে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • রোগমুক্ত বীজ এবং সহনশীল জাত যেমন এসসি ৬৩৭ জাতের ভুট্টা বীজ ব্যবহার করুন।
  • সামগ্রিক চাপ হ্রাস করে সুস্থ এবং শক্তিশালী ডগা বিকাশের বিষয় নিশ্চিত করুন।
  • মাঠে ৭০-৯০ সেমি. আন্তঃ-সারির ব্যবধান এবং গাছ থেকে গাছের মধ্যে ৩০-৫০ সেমি. ব্যবধান এবং ডগা পচা রোগের ইতিহাস নেই এমন প্রতি একর জমিতে ২৮,০০০ থেকে ৩২,০০০ টি গাছ সীমাবদ্ধ রাখুন।
  • সাবধানে সেচ অনুশীলন করুন, আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন এবং মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টির মাত্রা বজায় রাখুন।
  • জমিতে যত্ন সহকারে ফসল নিরীক্ষণ করুন এবং শস্যের পৃষ্ঠের সাদা রেখা, কচি পাতা হলুদ হওয়া এবং ফুলের পর্যায়ে নেতিয়ে পড়ার লক্ষণ এবং অগ্রবর্তী পর্যায়ে আক্রান্ত ডগার লালচে বাদামী ভাব আছে কিনা দেখুন।
  • রোগজীবাণু ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে দায়ী পোকার সংখ্যাকে নিম্ন মাত্রায় রাখুন।
  • গাছের বৃদ্ধির পরবর্তী পর্যায়ে ভাল সার প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
  • সংক্রামিত গাছ সরান এবং মাটিতে পুঁতে দিন।
  • মাটি ভাল করে চাষ দিন যেন আক্রান্ত ফসলের ধ্বংসাবশেষ মাটির নিচে পড়ে।
  • পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংরক্ষণাগার পরীক্ষা করে পরিষ্কার করুন এবং আর্দ্রতার পরিমাণ ১৫ % বা তার নিচে না হওয়া পর্যন্ত বীজ শুকান।
  • স্বল্প আর্দ্রতা এবং কম তাপমাত্রায় শস্য সংগ্রহ করুন।
  • তিন বছর পর পর মটরশুঁটি বা সয়াবিন দ্বারা ফসল আবর্তনের পরিকল্পনা করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন