Alternaria triticina
ছত্রাক
বাড়ন্ত গাছ রোগ প্রতিরোধী হয়ে থাকে। সবচেয়ে নিচের পাতায় সর্বদা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে উপরের পাতা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রামণ প্রথমে ক্ষুদ্র, ডিম্বাকৃতি, বিবর্ণ ক্ষত হিসাবে শুরু হয় যা অনিয়মিতভাবে নিচের পাতাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে, এবং ধীরে ধীরে উপরের পাতাগুলোতেও বিস্তৃত হয়। ধীরে ধীরে ক্ষত বেড়ে যায়, আকৃতিতে অনিয়মিত হয়ে ওঠে এবং গাঢ় বাদামী বা ধূসর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ক্ষতের চারিদিকে একটি উজ্জ্বল হলুদ কিনারার বলয় থাকতে পারে এবং সেটির ব্যাস ১ সেমি বা তারও বেশি হতে পারে। আর্দ্র অবস্থায় , ক্ষতগুলো কালো পাউডারের ন্যায় কনিডিয়া দ্বারা আবৃত থাকতে পারে। রোগের পরবর্তী পর্যায়ে, ক্ষতগুলো একত্রিত হয়ে যাওয়ার ফলে সম্পূর্ণ পাতা মারা যায়। গুরুতর ক্ষেত্রে, পাতার খোল, সুঙ্গা এবং ছড়া আক্রান্ত হয় এবং সংক্রামিত স্থানে পুড়ে যাওয়ার মত ছাঁচ লক্ষ্য করা যায়।
প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে ভিটাভেক্স প্রয়োগ করে শোধন করলে সংক্রামণ নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। ট্রাইকোডার্মা ভিরিদি এবং ভিটাভেক্স মিশ্রণ সংক্রমণকে আরও কার্যকরভাবে প্রতিহত (৯৮.৪% দ্বারা) করে। প্রথম এবং দ্বিতীয় দফার স্প্রেতে জিনেবের সাথে ইউরিয়া ( ২-৩ %) মিশ্রিত করুন। নিমপাতার নির্যাস থেকে প্রাপ্ত দ্রবন স্প্রে করুন। ছত্রাকনাশক প্রয়োগ এবং গরম জল দ্বারা শোধন করলে রোগের জীবাণু দমন করা সম্ভব। ট্রাইকোডার্মা ভিরিদি ( ২% ) এবং টি. হারজিয়ানাম ( ২% ) , অ্যাসপারজিলাস হিউমিকোলা এবং ব্যাসিলাস সাবটিলিস সাধারণত রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।
সম্ভাব্যক্ষেত্রে, সর্বদা জৈবিক দমনব্যবস্থা এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের সাথে সমন্বিত পদ্ধতি বিবেচনা করুন। ছত্রাকনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে ট্রিটিসিনা রোগের তীব্রতা ৭৫% হ্রাস এবং উদ্ভিদ ফলনের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। ম্যানকোজেব, জিরাম, জিনেব (০.২%), থিরাম, ফাইটোল্যান, প্রোপাইনেব, ক্লোরোথ্যালোনিল এবং নাবাম, প্রোপিকোনাজোল (০.১৫%), টেবুকোনাজোল এবং হেক্সাকোনাজোল (০.৫%) ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করুন। ম্যানকোজেবের সহনশীলতা উন্নয়ন প্রতিরোধে সমন্বিত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করুন।
অল্টারনেরিয়া ট্রিটিসিনা ছত্রাকের আক্রমণের ফলে ক্ষতিসাসাধন ঘটে। মাটি বাহিত এ সংক্রমণ বায়ুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। রোগাক্রান্ত বীজ ছোট হতে পারে এবং প্রায়ই বাদামী বিবর্ণতা সহ কুঞ্চিত অবস্থায় থাকে। সংক্রমিত জমিতে রোপিত ফসলে বা সংক্রমিত শস্যর অবশিষ্টাংশের সাথে সংস্পর্শের ফলে গম আক্রান্ত হয়, (উদাঃ, বৃষ্টির ঝাপটা বা সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে)। গ্রীষ্মের সময় মাটিতে সংক্রামিত ধ্বংসাবশেষে দুই মাসের মতন ছত্রাক বেঁচে থাকে, তবে চার মাস মাটি চাপা দেওয়া ধ্বংসাবশেষে টিকে থাকতে পারে। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সংবেদনশীলতাও বাড়ে। অল্টারনেরিয়া ট্রিটিসিনা চার সপ্তাহের কম বয়সী কচি গম চারাকে সংক্রামিত করতে পারে না। গাছের সাত সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত সাধারণত লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয় না। ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রোগের বিকাশের জন্য সর্বোত্তম। আক্রমণ গুরুতর হলে ক্ষতি ৮০% অতিক্রম করতে পারে।