Fusarium solani
ছত্রাক
শিরা-উপশিরা স্পষ্ট ভেসে উঠা, পাতা হলুদ বর্ণ হয়ে যাওয়া এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। অল্প বয়স্ক গাছে পাতার শিরা-উপশিরা স্পষ্ট হয়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে পাতার বোঁটা নুইয়ে পড়া অন্যতম লক্ষণ। প্রথমে নীচের পাতায় হলুদাভ হয়ে যাওয়া লক্ষ্য করা যায়। এ কচি পাতা থেকে পরবর্তীতে বাকি পাতাগুলোতে লক্ষণগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত নেতিয়ে যায় এবং এমনকি মারাও যায়। পরবর্তী পর্যায়ে, ভাস্কুলারতন্ত্র বাদামী বর্ণ ধারণ করে। নীচের পাতা এবং পরে গাছের সমস্ত পাতা ঢলে পড়ে। ফসলের বৃদ্ধি থমকে যায় এমনকি মারাও যেতে পারে। নরম় গাঢ় বাদামী বা কালো ক্যাঙ্কারগুলো কাণ্ডের উপর প্রদর্শিত হয়, সাধারণত গিঁট এবং ক্ষতস্থানীয় স্থানে দেখা যায়, এটি কাণ্ডকে চারিদিক থেকে আবদ্ধ করে ফেলে। ক্ষতগুলো হালকা কমলা বর্ণের, খুব ছোট, ফ্লাস্ক-আকারের ছত্রাকের (পেরিটেসিয়া) বিকাশ ঘটায়। গাছে সাদা-তুলোর মত ছত্রাকের বৃদ্ধি হতে পারে। শিকড় যখন সংক্রামিত হয় তখন গাঢ় বাদামী, নরম এবং জলে সিক্ত থাকে। টমেটো ফলগুলোতে বৃতি থেকে শুরু করে বাকি অংশে কালো, জলসিক্ত ক্ষতের সৃষ্টি হয় ।
কোন কোন ফসলে ফিউসারিয়াম উইল্ট নিয়ন্ত্রণ করতে এ জীবাণুর সাথে প্রতিযোগিতা করে এমন ব্যাকটিরিয়া এবং ফিউসারিয়াম অক্সিস্পোরামের যে সব প্রজাতি রোগ সৃষ্টি করে না এদের জৈবিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ১% ডাব্লুপি বা ৫% এসসি, বীজ শোধনের জন্যও ব্যবহার করা যায় (১০ গ্রাম / কেজি বীজ)। ব্যাসিলাস সাবটিলিস, সিউডোমোনাস ফ্লুরেসসেন্স সংগঠিত পণ্যগুলোও বেশ কার্যকরী। ট্রাইকোডার্মা হার্জিয়ানাম মাটিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সম্ভবমতো সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। অন্য কোনও ব্যবস্থা কার্যকর না হলে সংক্রামিত স্থানে মৃত্তিকা সংগঠিত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করুন। বপন / চারা রোপণের আগে কপার অক্সিক্লোরাইড ( ৩ গ্রাম / লিটার জল ) সাথে মিশিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিন। কার্বেনডাজিম, ফাইপ্রোনিল, ফ্লুক্লোরালিন সংগঠিত অন্যান্য পণ্যগুলোও এ রোগের বিস্তার কমাতে প্রয়োগ করতে পারেন।
ফিউজারিয়াম সোলানি একটি ছত্রাক যা গাছের পরিবহন কোষকলায় জন্মায়, জল এবং খাদ্যপ্রাণের সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করে। টমেটো গাছের মূলের অগ্রভাগ বা শিকড়ের ক্ষতস্থানের মাধ্যমে সরাসরি সংক্রমণ হতে পারে। একবার কোন স্থানে জীবাণু প্রবেশ করলে, এটি বেশ কয়েক বছর ধরে সক্রিয় থাকে কারণ এরা সুপ্তাবস্থায় থাকে এমন বীজগুটি তৈরি করতে পারে। মৃত্তিকাবাহিত রোগ মাটিতে টিকে থাকে এবং বীজ, মাটি, জল, চারা, শ্রমিক, সেচের জল এবং বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে (সংক্রামিত ফসলের অবশিষ্টাংশ দ্বারাও বাহিত হতে পারে)। এ ছত্রাক একটি রোগ-সৃষ্টিকারী মারাত্মক জীবাণু যা বিভিন্ন বাহককে আক্রমণ করে। ফুল ধরার পর্যায়ে যদি আক্রমণ হয়, তবে গুরুতরভাবে ফলন হ্রাস পেতে পারে। কাণ্ডের ক্যাঙ্কার জলের ঊর্দ্ধমুখী প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে, যার ফলে গাছ নেতিয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত গাছের মৃত্যু ঘটে। ফিউজারিয়াম সোলানি মৃত বা মরা গাছের কোষকলাতে উপনিবেশ স্থাপন করতে পারে এবং সক্রিয়ভাবে রাতে স্পোর নির্গত করে। ছত্রাক জন্মানোর অনুকূল পরিস্থিতি হ'ল অধিকমাত্রায় মাটির আর্দ্রতা এবং মাটির তাপমাত্রা। জলের দুর্বল নিষ্কাশন ব্যবস্থা বা শীতকালে সুপ্তাবস্থা রোগ ছড়ানোর পক্ষে কাজ করে।