ভুট্টা

ভুট্টার পাতা ও খোলে ঝলসানো রোগ

Rhizoctonia solani

ছত্রাক

5 mins to read

সংক্ষেপে

  • পাতার উপর ও পাতার খোলে আর্দ্র, বিবর্ণ এককেন্দ্রিক স্তর এবং রিং দেখা যায়।
  • সংক্রামিত কোষকলায় হালকা বাদামী তুলোর মত মাইসেলিয়াম সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে তা মোচায় ছড়িয়ে পড়ে।
  • এক সপ্তাহের ব্যবধানে গাছ পুরোপুরি ঝলসে যেতে পারে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

2 বিবিধ ফসল

ভুট্টা

উপসর্গ

ফুল আসার ৪০-৫০ দিন আগে ভুট্টা গাছে এ ধরনের রোগ দেখা যায় তবে কচি গাছেও এ রোগ হতে পারে । লক্ষণগুলো প্রথমে পাতায়, পাতার খোলে, ভুট্টার ডগায় এবং পরবর্তীতে ভুট্টার মোচাতেও বিস্তার লাভ করতে পারে। পাতার উপর ও পাতার খোলে আর্দ্র, বিবর্ণ এককেন্দ্রিক স্তর এবং রিং দেখা যায় এবং এগুলো দেখতে বাদামী, তামাটে বা ধূসর বর্ণের। সাধারণত, উপসর্গগুলো প্রাথমিকভাবে মাটির একটু উপরে অবস্থিত প্রথম এবং দ্বিতীয় পাতার খোলের উপর দৃশ্যমান হয়। ধীরে ধীরে আক্রান্ত কোষকলার উপর কালো রঙের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোলাকার ফোঁটায় ভরা হাল্কা বাদামী বর্ণের তুলার মত বস্তু দৃশ্যমান হয়। ক্রমবর্ধমান মোচা গঠন সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয় এবং মোচার আবরণে ফাটল ধরে অকালে শুকিয়ে যায়। যদি চারা অবস্থায় গাছ সংক্রামিত হয় তবে বর্ধিষ্ণু অঞ্চল মরে যায় এবং এক সপ্তাহের ব্যবধানে সম্পূর্ণ গাছ ঝলসে যেতে পারে।

Recommendations

জৈব নিয়ন্ত্রণ

রোগের প্রকোপ এবং তীব্রতা হ্রাসের জন্য, ভুট্টার বীজ ১% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট দ্রবণ এবং ৫% ইথানলে ১০ মিনিটের জন্য রেখে জীবাণুমুক্ত করুন এবং পরে তিনবার জল দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে ফেলুন। ব্যাসিলাস সাবটিলিস সংগঠিত উপাদান এক্ষেত্রে ভাল কাজ করে। ছত্রাক জাতীয় ট্রাইকোডার্মা হারজিয়ানাম বা টি. ভিরিডি সংগঠিত উপাদানও সফলভাবে এ ধরনের রোগের বিস্তার দমন করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ভুট্টার বীজ ক্যাপটান, থাইরাম বা মেটাল্যাক্সিল দিয়ে শোধন করুন, জীবাণুমুক্ত জলে তিনবার ধুয়ে ফেলুন এবং পরে বাতাসে শুকিয়ে নিন। রোগ সংবেদনশীল জাত চাষের ক্ষেত্রে যেখানে রোগের তীব্রতা বেশী থাকে এমন অনুকূল আবহাওয়ায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করা অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিসঙ্গত। গুরুতর উপসর্গ প্রতিহত করতে প্রপিকোনাজল সংগঠিত উপাদান কার্যকরী।

এটা কি কারণে হয়েছে

রাইজোকটিনিয়া সোলানী নামক মৃত্তিকাবাহিত ছত্রাক দ্বারা ঝলসানো রোগ হয়ে থাকে এবং এ ধরনের ছত্রাক মাটি, সংক্রমিত ফসলের অবশিষ্টাংশ কিংবা আগাছাতেও বেঁচে থাকতে পারে। অনুকূল আর্দ্রতা ও তাপমাত্রায় ( সাধারনত ১৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোত্তম ) মরশুম শুরুর মুখে ছত্রাকের বৃদ্ধি শুরু হয় এবং নতুন আবাসে আক্রমণ করে থাকে। ৭০% আপেক্ষিক আর্দ্রতাতে রোগের বিস্তার বেশ নগণ্য অথবা নেই বললেই চলে , আর ৯০-১০০% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় রোগের বিস্তার সর্বাধিক হয়। জলসেচন, বন্যার জল এবং চাষের সরঞ্জাম ও কাপড়ের সাথে লেগে থাকা দূষিত মাটির মাধ্যমে ছত্রাক ছড়িয়ে থাকে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও এর আশেপাশের অঞ্চলের আর্দ্র ও উষ্ণ জলবায়ুতে এ ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষণীয়। গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে ছত্রাকনাশক দিয়ে দমন কষ্ট সাপেক্ষ এবং তাই এক্ষেত্রে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অতি প্রয়োজনীয় ।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • জমিতে অতি মাত্রায় ফসলের ঘনত্ব এড়িয়ে চলুন।
  • ফসল সংগ্রহের পর সংক্রমিত গাছ অপসারণ করুন এবং পুড়িয়ে ফেলুন।
  • জমি পরিষ্কার রাখুন এবং গাছ যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয় তা নিশ্চিত করুন।
  • নিম্নাংশের যে সমস্ত সংক্রামিত পাতা ও খোল মাটি স্পর্শ করে তা ছেঁটে ফেলুন।
  • ফসল আবর্তনের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে ।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন