Diaporthe vexans
ছত্রাক
পাতায়, কাণ্ডে এবং ফলে লক্ষণ দেখা দেয়, তবে শেষেরটিতে উপসর্গ বেশি লক্ষণীয় হয়। ধূসর থেকে বাদামী রঙের হাল্কা কেন্দ্র বিশিষ্ট দাগ পাতার উপরে দেখা যায় এবং সংখ্যায় বহুগুণ বেড়ে যায় এবং এরকম অসংখ্য দাগ মিলিত হয়ে পত্রফলকের বৃহৎ অংশ জুড়ে ঢেকে ফেলে। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত পাতা হলুদ হয়ে যায়, এবং পরবর্তীতে পাতা নেতিয়ে পড়ে, পাতায় ফাটল ধরে, পাতার টিস্যু ছিঁড়ে যায় ( পাতা ঝলসানো)। কাণ্ড বাদামী থেকে গাঢ় বর্ণে রূপান্তরিত হয়, ফাটল ধরে এবং দাবানো ক্ষতের সংখ্যা বাড়তে পারে। কাণ্ডের গোড়ায় এ দাগ অবশেষে কাণ্ডের চারিদিকে ঘিরে ফেলে, ফলে জল এবং খাদ্যপ্রাণ উপরের অংশে উঠতে পারে না, এর ফলে এ রোগ গাছকে মেরে ফেলে। ফলের উপরে বাদামী, নরম ক্ষত দেখা যায়। দাগ বড় হলে, প্রায়ই একটির সাথে আরেকটি লেগে যায়। ফলের একটা বড় জায়গা ঢেকে ফেলে এবং কিনারা কালো সমকেন্দ্রিক গোলাকার দাগে ভরে যায়, অবশেষে ফল পচে যায়। পাতায় ও কাণ্ডের পুরনো ক্ষতে কালো ছোট ছোট বিন্দু লক্ষ্য করা যায়। যদি শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে, আক্রান্ত ফল গাছেই কুঁকড়িয়ে, শুকিয়ে, পিণ্ডবৎ হয়ে যায়।
জৈব ছত্রাকনাশক এ রোগের প্রকোপ ও প্রখরতা হ্রাস করতে পারে। পত্রপল্লবে কপার সংঘঠিত পণ্য ( উদা. বোর্দো মিশ্রন) স্প্রে করা যেতে পারে। নিমের নির্যাস সাধারণত নিরাপদ এবং পরিবেশ-বান্ধব সমাধান যেটি রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করে দেখা গেছে। গরম জল দিয়ে বীজ শোধনও বিবেচনা করা যেতে পারে (৫৬° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৫ মিনিট)।
সম্ভবমতো সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। মাঠে রোগের তীব্রতা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মানাঙ্ক স্পর্শ করলে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করার সুপারিশ আছে। গাছের পত্রপল্লবে যে সব সাধারণ ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো হচ্ছে অ্যাজোক্সিস্ট্রোবিন, বসক্যালিড, ক্যাপটান, ক্লোরোথ্যালোনিল, কপার অক্সিক্লোরাইড, ডাইথাইওকারবামেটস, ম্যানেব, ম্যানকোজেব, থায়োফ্যানেট মিথাইল,টোলক্লোফস- মিথাইল, ফাইরাক্লোস্ট্রোবিন। প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি ছত্রাকনাশক খুব কার্যকরী হয়। বীজ শোধনের মাধ্যমেও এ কাজ করা যায়, উদাহরণ হিসাবে থাইওফ্যানেট মিথাইলের (০.২%) নাম উল্লেখ করা যায়।
লক্ষণগুলোর কারন হলো ফোমোপ্সিস ভেক্সান নামক একটি ছত্রাক যে জীবাণুটি বেগুনে সীমাবদ্ধ থাকে ( যদিও টম্যাটো এবং মরিচে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে বলে কথিত আছে)। নষ্ট এবং ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাছের ভিতরে ছত্রাক টিকে থাকে এবং এটির বীজগুটি বাতাস এবং বৃষ্টির মাধ্যমে সুস্থ গাছে ছড়িয়ে পড়ে। অনুমান করা হয় যে, এ রোগ বীজেও বাহিত হয়। তাই প্রত্যয়িত বীজ সংগ্রহ ও স্বাস্থ্যবান চারা ব্যবহার করে এ রোগ প্রতিরোধ করা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। পাতার কোষ কলায় এ জীবাণু প্রবেশ করতে ৬ -১২ ঘন্টা সময় লাগতে পারে এবং আক্রমণ এবং রোগ বৃদ্ধির জন্য গরম আবহাওয়া (২৭-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও পর্যাপ্ত আপেক্ষিক আর্দ্রতা আবশ্যক। রক্ষণাগারে ৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৫০% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় এ রোগের বিস্তার ঘটতে পারে।