Mycovellosiella fulva
ছত্রাক
সাধারণত পাতার উভয়পাশে এবং মাঝে মাঝে ফলেও এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়। বয়স্ক পাতা প্রথমে সংক্রমিত হয় এবং ধীরে ধীরে উপরের দিকে কচি পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। পাতার উপরের পাশে হালকা সবুজ বা হলুদাভ অনিয়মিত ধরণের ছোট ছোট বিস্তৃত দাগ দেখা যায়। দাগের বিপরীত পাশে বিস্তৃত জায়গা মখমলের মত হয়ে যায় যা, জলপাই রঙ থেকে ধূসর বেগুনী রঙ ধারণ করে। এগুলো স্পোর উৎপাদনকারী অঙ্গ ও কনিডিয়া দ্বারা গঠিত। সময়ের সাথে সাথে যখন দাগ বড় হয় তখন সংক্রমিত পাতাও হলুদাভ থেকে বাদামী রঙ ধারণ করে এবং পাতাগুলো শুকিয়ে বাঁকা হয়ে যায়। আক্রমণ তীব্র হলে অপরিণত পাতাসহ সকল পাতাই ঝরে যায়। কখনও কখনও ফুল বা ফলেও এ রোগের সংক্রমণ দেখা যায়। রোগাক্রান্ত ফুল কালো হয়ে যায় এবং ফল ধারণের আগেই মারা যায়। কাঁচা ও পাকা উভয় ফলেই বোঁটার প্রান্তে অনিয়মিত ও মসৃণ কালো দাগ দেখা যায়। রোগের আক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে সংক্রমিত স্থান শুকিয়ে শক্ত হয় এবং নিচু হয়ে যায়।
জীবাণুমুক্ত করার জন্য গরম জল (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২৫ মিনিট) দিয়ে বীজ শোধন করার পরামর্শ রয়েছে। এক্রেমোনিয়াম স্ট্রিকটাম, ডাইসিমা পালভিন্যাটা, ট্রাইকোডার্মা হারজিনাম বা ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি এবং ট্রাইকোথেসিয়াম রোসিয়াম ছত্রাক মাইকোভেলোসিলা ফালভার শত্রু এবং এর দমনে সেগুলো ব্যবহার করা যায়। গ্রীণহাউজে এক্রেমোনিয়াম স্ট্রিকটাম, ট্রাইকোডার্মা ভিরিডির স্ট্রেইন ৩ এবং ট্রাইকোথেসিয়াম রোসিয়াম যথাক্রমে ৫৩, ৬৬ এবং ৮৪ শতাংশ হারে প্রয়োগে টমেটোর মাইকোভেলোসিলা ফালভা দমন হয়। ছোট পরিসরে, আপেল সিডার, রসুন বা দুধ এবং ভিনিগার মিশ্রণ এ ছত্রাক দমনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সম্ভমবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। রোগ বৃদ্ধির জন্য অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করলে সংক্রমণের পূর্বেই ছত্রাকনাশক ছিটাতে হবে। ক্লোরথ্যালোনিল (chlorothalonil), ম্যানেব (maneb), ম্যানকোজেব (mancozeb) এবং কপার ঘটিত ছত্রাক নাশক মাঠে ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। গ্রীণহাউজের জন্য ডাইফেনোকোনাজল (difenoconazole), ম্যাণ্ডিপ্রোপামিড (mandipropamid), সাইমোক্স্যানিল (cymoxanil), ফ্যামোক্স্যাডন (famoxadone) এবং সাইপ্রোডাইনিল (cyprodinil) ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
মাইকোভেলোসিলা ফালভা (Mycovellosiella fulva) ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়। এর রেণু কোন আবাস ছাড়াই কক্ষ তাপমাত্রায় ছয় মাস থেকে একবছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। পত্রপল্লব দীর্ঘসময় ধরে ভেজা থাকা এবং ৮৫ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা ছত্রাকরেণুর অঙ্কুরোদগমকে সহায়তা করে। অঙ্কুরোদগমের জন্য ৪ থেকে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন হলেও ২৪ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হল সর্বোত্তম তাপমাত্রা। শুষ্ক আবহাওয়া এবং পাতায় জলের অভাব ছত্রাকরেণুর অংকুরোদগমকে বাধাগ্রস্ত করে। কোষে অনুপ্রবেশের পর পত্রফলকের উভয়পাশে লক্ষণ প্রকাশিত হতে সাধারণত ১০ দিন সময় লাগে। পাতার নিচের দিকে ছত্রাকরেণু উৎপন্নকারী অঙ্গ গঠিত হয় এবং এ রেণুগুলি বাতাস এবং জলের ছিটা এমনকি শ্রমিকদের কাপড় চোপড়, উপকরণ ও পোকামাকড়ের মাধ্যমে এক গাছ থেকে অপর গাছে সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। জীবাণু সাধারণত উচ্চ আর্দ্রতায় পত্ররন্ধ্র দিয়ে পাতায় সংক্রমণ ঘটায়।