তুলা

তুলা গাছের পাতায় সারকোস্পোরা দাগ রোগ

Mycosphaerella gossypina

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • প্রাথমিক অবস্থায়, পাতার উপরে লালচে ক্ষত লক্ষ্য করা যায়, পরে তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ও বেগুনী বা কালো কিনারাযুক্ত ধূসর থেকে বাদামী বর্ণে রূপান্তরিত হয়।
  • এই দাগগুলি যতই বড় হয়, ততই এর প্রান্তভাগ পর্যায়ক্রমে হালকা ও গাঢ় বর্ণের সমকেন্দ্রিক বৃত্তের আকার ধারণ করে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

তুলা

উপসর্গ

এই রোগ মূলতঃ বয়স্ক গাছের পুরাতন পাতায় আক্রমন করে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় এই পাতাগুলির উপরে লালচে রঙের ক্ষতের আবির্ভাব হয়। রোগ বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে, এই ক্ষতগুলি বৃদ্ধি পায় এবং এর কেন্দ্রভাগ সাদা থেকে হালকা বাদামী বা ধূসর বর্ণ ধারণ করে এবং এই ক্ষতের সীমারেখা বরাবর বেগুনী, গাঢ় বাদামী বা কালো বর্ণ লক্ষ্য করা যায়। এই ক্ষতগুলি গঠনে বৃত্তাকার বা অসমাকার হয় এবং সংক্রমণের সময়কালের উপর নির্ভর করে এর আকৃতি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। পরবর্তীতে একটি সমকেন্দ্রিক ক্ষতযুক্ত অঞ্চল তৈরী হয় এবং প্রান্তভাগগুলিতে পর্যায়ক্রমে গাঢ় বা হালকা বাদামী বা লাল বর্ণ লক্ষ্য করা যায়। আক্রান্ত পাতাগুলি ক্রমে ক্রমে বিবর্ণ হয়ে যেতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ঝরে পড়ে যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

এখনও পর্যন্ত কোন জৈবিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কথা জানা নেই। যদি আপনি এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো বা রোগের তীব্রতা হ্রাস করতে কোন উপায় প্রয়োগ করে সফল হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের জানান।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। রোগের প্রাক্কালে হেক্টর পিছু ২ কেজি ম্যানকোজেব (Mancozeb ) বা কপার অক্সিক্লোরাইড (Copper oxychloride ) স্প্রে করতে পারেন। ১৫ দিন অন্তর অন্তর দুই থেকে তিনবার ইহা স্প্রে করা যেতে পারে। যে ছত্রাকনাশকে কার্বেনডিজেম (Carbendizem ) আছে তা প্রতি লিটার জলে ৩ গ্রাম অথবা ক্যাপটান (Captan ) থাকে তাহলে প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম আছে তা প্রয়োগ করলে একই রকম ভাল ফলাফল পাবেন।

এটা কি কারণে হয়েছে

এই লক্ষণগুলি সারকোস্পোরা (Cercospora ) বর্গের মাইকোস্ফারেলা গোসিপিনা (Mycosphaerella gossypina) নামক ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট হয় যা তুলো গাছকে আক্রমণ করে। সয়াবীন বা মরিচ জাতীয় ফসলকে যে ধরণের ছত্রাক আক্রমণ করে তার থেকে এটি আলাদা। পাতায় সারকোস্পোরা বর্গের ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট দাগকে পাতার অন্যান্য রোগ যেমন টার্গেট স্পট, থেকে আলাদা করা বাস্তবক্ষেত্রে প্রায়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যাইহোক, এই রোগের বিশেষত্ব এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে এই রোগ প্রায় ক্ষেত্রেই যেখানে খরার প্রাদুর্ভাব ঘটে বা খনিজ পদার্থের অভাব (বিশেষ করে পটাসিয়াম) থাকে সেই স্থানের তুলা ফসলে লক্ষ্য করা যায়। সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগের মাধ্যমে এবং সঠিক জলসেচের মাধ্যমে যদি ফসলকে উপযুক্ত জীবনীশক্তি প্রদান করা যায়, তাহলে প্রাথমিক আক্রমণ উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়াও এই প্রক্রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাবও কমিয়ে আনবে। এই রোগের জন্য ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা সহায়ক হয়। বাতাসের মাধ্যমে এবং জলের ধারার মাধ্যমে ছত্রাকের রেণু সুস্থ পাতার সংস্পর্শে আসে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সম্ভব হলে রোগ প্রতিরোধকারী বা সহ্যগুণশক্তিসম্পন্ন জাতের বীজ বা চারাগাছ ব্যবহার করুন।
  • রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে কিনা তা নিয়মিতভাবে তদারকি করুন।
  • রোগাক্রান্ত উদ্ভিদ অপসারিত করুন এবং তুলা ক্ষেত থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করে দিন।
  • অনুমোদিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করে (বিশেষ করে পটাশিয়াম ) এবং সঠিক জলসেচের মাধ্যমে উদ্ভিদের ধকল কমান।
  • উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ অপসারিত করে দূরে কোথাও মাটিতে গভীর গর্তে বা পুড়িয়ে নষ্ট করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন