গম

দানাশষ্যের পাউডারী মাইল্ডিউ

Blumeria graminis

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • পাতা, কাণ্ড ও শীষের উপরে সাদা, তুলোর মত ছোপ ছোপ দাগের সৃষ্টি হয়।
  • কোন কোন ফসলের ক্ষেত্রে, এ দাগের পরিবর্তে বড় ও সামান্য উঁচু ফুসকুড়ির মতো দেখা যায়।
  • রোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাউডারের মতো ছত্রাক সৃষ্টি হয় যা পড়ে ধূসর-তামাটে বর্ণে রূপান্তরিত হয়।
  • মরশুমের শেষের দিকে সাদা দাগের মাঝে সুস্পষ্ট কালো দাগ আবির্ভূত হয়।
  • ঘন করে বীজ বপন করলে, নাইট্রোজেন সারের অত্যধিক ব্যবহার করলে এবং একই বার বার ফসল চাষ করলে রোগ সংক্রমনের সহায়ক হয়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

2 বিবিধ ফসল
বার্লি
গম

গম

উপসর্গ

রোগের লক্ষণ নিচের পাতা থেকে উপরের পাতায় অগ্রসর হয় এবং দানাশষ্যের বৃদ্ধির যে কোন পর্যায়ে তা দেখা যেতে পারে। পাতা, কাণ্ড ও দানাশষ্যের শীষের উপরে সাদা,তুলোর মত ছোপ ছোপ দাগের সৃষ্টি হয়। পাউডারের মতো অঞ্চল সৃষ্টির আগেই কিন্তু দানাশষ্যের কোষকলার উপরে ক্লোরোফিলবিহীন হলুদ দাগ দেখা যায় যা মাঠ তদারকি করার সময়ে খুব সহজেই নজর এড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিছু ফসলের ক্ষেত্রে, এ দাগের পরিবর্তে বড়, সামান্য উঁচু ফুসকুড়ির মতো দেখা যায়। ছত্রাক এর জীবনচক্র সম্পূর্ণ করার সঙ্গে সঙ্গে এ পাউডারের মতো অংশ ধূসর-বাদামী বর্ণে রূপান্তরিত হয়। মরশুমের শেষভাগে, সাদা দাগের মাঝে সুষ্পষ্ট কালো দাগের আবির্ভাব হতে পারে এবং এ দাগ কেবলমাত্র বিবর্ধক কাঁচের সাহায্যে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই একমাত্র দেখা সম্ভব। নিচের দিকে থাকা পুরাতন পাতাকে ঘিরে আর্দ্রতার পরিমান বেশী থাকে বলে সাধারণতঃ রোগ লক্ষণ সেদিকে প্রকট হয়। ঘন করে বীজ বপন করলে, নাইট্রোজেন সারের অত্যধিক ব্যবহার করলে এবং একই বার বার ফসল চাষ করলে রোগ সংক্রমনের সহায়ক হয়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

ক্ষুদ্র জৈবিক খামারি ও বাগাঙ্কারি গন পাউডারি মাইল্ডিউ দমনে দুধের মিশ্রণ ব্যবহার করে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন। দুধের সঙ্গে জল মিশিয়ে (সাধারণতঃ ১:১০ অনুপাতে) পাতলা করে এবং রোগের প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে এমন সময়ে স্প্রে করা হয় অথবা প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এ ছত্রাককে নিয়ন্ত্রণ করতে বা এ রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে প্রতি সপ্তাহে এক বার করে এ মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। গমকে এ ছত্রাক এবং অন্যান্য ছত্রাকঘটিত রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে ডাইফেনকোন্যাজোল দিয়ে বীজ শোধন করে পড়ে ফ্লুট্রিয়াফোল বা ট্রিটিকোন্যাজোল স্প্রেয় করা যেতে পারে। রোগ নিরাময়কারী রাসায়নিক যেমন ফেনপ্রোপিডিন (fenpropidin), ফেরানিমোল (feranimol), টেবুকোন্যাজোল (tebuconazole), সিপ্রোকোন্যাজোল (cyproconazole) এবং প্রোপিকোন্যাজোল (propiconazole) নামক ছত্রাকনাশক কার্যকরী। অন্য যে উপায়ে দানাশষ্যেকে রক্ষা করা সম্ভব তা হলো সিলিকন বা ক্যালসিয়াম সিলিকেট সমৃদ্ধ দ্রবণ, যা এ জীবাণুর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলে।

এটা কি কারণে হয়েছে

রোগের এ লক্ষণ ব্লুমেরিয়া গ্র্যামিনিস (Blumeria graminis) নামক ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা সেইধরনের বায়োট্রফ জাতীয় ছত্রাক যা আশ্রয়দাতার জীবন্ত কোষের উপর বেড়ে ওঠে ও বংশবিস্তার করে। যদি আশ্রয়দাতার সন্ধান না পাওয়া যায়, এ ছত্রাক মাঠে পড়ে থাকা উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশের উপরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় গোটা শীতকাল অতিবাহিত করে। দানাশস্য ছাড়া, এ ছত্রাক অসংখ্য অন্য উদ্ভিদের উপরেও বাসা তৈরি করে যাতে দুটো মরশুমের মধ্যে একটা যোগসূত্র গড়ে ওঠে। যখন পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে, এ ছত্রাকের বৃদ্ধি শুরু হয় এবং রেণু উৎপন্ন করে যা বাতাসের সাহায্যে ছড়িয়ে অন্য সুস্থ উদ্ভিদকেও আক্রান্ত করে। একবার তা পাতাকে আক্রান্ত করতে পারলেই রেণুর অংকুরোদ্গম হয় এবং এমন একটা পদ্ধতি গড়ে তোলে যাতে আশ্রয়দাতার জীবন্ত কোষ থেকে খাদ্যপ্রাণ সংগ্রহ করে বৃদ্ধি পায়। আপেক্ষিকভাবে ঠাণ্ডা ও আর্দ্র পরিবেশ (৯৫% আর্দ্রতা) এবং মেঘলা আবহাওয়া এ ছত্রাকের বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল। যাহোক, রেণুর অংকুরোদ্গমের জন্য পাতায় আর্দ্রতা থাকার প্রয়োজন নেই কারণ তা আসলে রেণুর অংকুরোদ্গমকে বাধা দেয়। আদর্শ তাপমাত্রা হলো ১৬ ডিগ্রি থেকে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশী তাপমাত্রা এ ছত্রাকের পক্ষে ক্ষতিকারক। এ জীবাণুর জন্যে কোন কোয়ারান্টাইন বিধি প্রচলিত নেই কারণ এ ছত্রাক প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায় এবং বাতাসের সর্বত্রই তা ছড়িয়ে থাকে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • যদি সম্ভব হয়, রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করুন।
  • মরশুমের শুরুতেই বীজ বপন করবেন না।
  • ঘন করে বীজ বপন না করে ফাঁকা ফাঁকা করে বপন করুন যাতে চারাগাছের মধ্যে ভালোভাবে বায়ু চলাচল করতে পারে এবং আর্দ্রতা কম হয়।
  • রোগের প্রথম লক্ষণ চিহ্নিত করার জন্যে মাঠ নিয়মিত তদারকি করুন।
  • নাইট্রোজেন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন কেননা মাটিতে এর অতিরিক্ত প্রয়োগ এ জীবাণু বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল হয়।
  • জীবাণুকে আশ্রয় প্রদান করে না এমন ফসল চাষ করে ফসল-চক্র অনুসরণ করুন।
  • স্বেচ্ছায় জন্মানো গাছ এবং আগাছা জমি থেকে অপসারিত করে জীবাণুর জীবন চক্র বিনষ্ট করুন।
  • দানাশষ্যের প্রতিরোধ শক্তি বাড়ানোর জন্যে সারের পরিবর্তে সিলিকন বা ক্যালসিয়াম সিলিকেট ব্যবহার করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন