Uromyces viciae-fabae
ছত্রাক
পাতা, কাণ্ড ও শুঁটি রোগাক্রান্ত হতে পারে। রোগের প্রথম লক্ষণ হিসাবে পাতার উপরের পৃষ্ঠে ক্ষুদ্র, সাদাটে ও কিছুটা উত্থিত ধরনের গুটি দেখা যায়। এগুলি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমলা বর্ণের পাউডারের মতো মিহি গুঁড়ো দিয়ে পূর্ণ হয় এবং প্রায়ই হালকা বর্ণের আভা দিয়ে ঘেরা থাকে। এই গুটিগুলি পাতার উপরের ও নিচের পৃষ্ঠে, কাণ্ড ও শুঁটির উপরে দৃশ্যমান হয়। পরবর্তী সময়ে, প্রাথমিক গুটিগুলির মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের গুটি বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার ফলে কেন্দ্রভাগে বিন্দুর মতো দাগসহ ইংরাজী O বর্ণের মতো আকার গঠন করে। মরিচা রোগের আবির্ভাব ও তীব্রতা প্রায় সবটাই আবহাওয়ার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। যখন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকে তখন তা উদ্ভিদে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আক্ষরিক অর্থেই তা সমগ্র উদ্ভিদকে ছেয়ে ফেলে।
এ জীবাণুকে নিয়ন্ত্রন করতে কোন জৈব-নিয়ন্ত্রক উপলব্ধ নেই। নিম তেল, জ্যাট্রোফা তেল বা সর্ষের তেলের সাহায্যে প্রোফাইল্যাক্টিক স্প্রে করলে রোগের তীব্রতা হ্রাস পায় এবং তুলনামূলকভাবে ফসলের দানার গুণমান বৃদ্ধি পায়।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ফিনাইলমার্কারি অ্যাসিটেট ( phenylmercury acetate) ও ডাইক্লোবিউট্রাজোল (diclobutrazole) দিয়ে বীজ পরিশোধন করলে বীজের মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। রোগ লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছত্রাকনাশক দিয়ে পাতার উপরে স্প্রে করলে এবং ১০ দিনের ব্যবধানে আরো দু’বার স্প্রে করলে রোগ ছড়ানো ও রোগের তীব্রতা হ্রাস পায়। ফ্লুট্রিয়াফোল (Flutriafol), মেটালাক্সিল (metalaxyl) মসুরের মরিচা রোগের ব্যবস্থাপনায় কার্যকরী হয়। অন্য যে উৎপাদনগুলি ব্যবহার করা হয় তা হল ম্যানকোজেব (mancozeb), ক্লোরোথ্যালোনিল (chlorothalonil) ও কপার।
মরিচা রোগ ইউরোমাইসেস ভিসিয়া-ফ্যাবি (Uromyces viciae-fabae) নামক ছত্রাকের দ্বারা সৃষ্টি হয় এবং যখন মাঠে ফসল থাকে না তখন উদ্ভিদের দেহাংশ, স্ব-ইচ্ছায় জন্মানো উদ্ভিদ ও আগাছার উপরে জীবনধারন করে। এই রোগ যেমন উদ্ভিদকে আক্রমণ করে তেমনি একইসঙ্গে তা বীজকেও সংক্রামিত করে। এ রোগের জীবাণুকে পরাশ্রয়দান করে এমন উদ্ভিদের সংখ্যা সীমিত। মসুরের পাশাপাশি সীম ও ছোলা গাছেও এই জীবাণু পরাশ্রয় গ্রহণ করতে পারে। যখন পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে (তাপমাত্রা হয় ১৭ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং পাতায় দীর্ঘকালীন আর্দ্রভাব বজায় থাকে), তখন এ ছত্রাকরেণু উৎপন্ন করে এবং বাতাসের সাহায্যে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে নতুন উদ্ভিদ বা চাষের মাঠে নতুন ফসলে আক্রমণ করে। অন্য যে উপায়ে রোগ ছড়ায় তা হলো চাষের মাঠগুলির মধ্যে রোগাক্রান্ত উদ্ভিদ দেহাংশ বহন করা, রোগাক্রান্ত খড়, পোষাক, যন্ত্রপাতি ও চাষের সরঞ্জামের মাধ্যমে। এ রোগকে উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ বলে মনে করা হয় কারণ ছত্রাকরেণু বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে রোগ ছড়ায়।