Phytophthora nicotianae
ছত্রাক
গাছের সকল বৃদ্ধির পর্যায়ে এবং গাছের সকল অংশে রোগের এই লক্ষণগুলি লক্ষ্য করা যায়। পাতায় অস্বাভাবিক রঙ এবং আকার দেখা যায়, এবং তা বিকৃত হয়ে গুটিয়ে যায়। ব্যাপকভাবে হলুদ হয়ে যাওয়া পাতার উপরে মৃত কোষের আবির্ভাব ঘটে। রোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, মৃত কোষ গাছ থেকে ঝরে পড়ে এবং পাতা খসখসে হয়ে যায়। ফলের আকারও অস্বাভাবিক হয় এবং এদের ত্বক কালো বা বাদামী ক্ষতে ভরে ওঠে। পরবর্তী পর্যায়ে ব্যাপক পরিমানে ছত্রাক এই ক্ষতের উপরে বৃদ্ধি পায় এবং এই স্থান থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে ক্ষরণ হতে থাকে। ফল শুকিয়ে যায় এবং ত্বকে কুঁচকে যাওয়ার স্পষ্ট চিহ্ন দেখা যায়। উদ্ভিদের বাকল গাঢ় বাদামী বর্ণে পরিবর্তিত হয় এবং কাষ্ঠল অংশে স্পষ্ট ক্ষত দেখা যায়। এই ক্ষতস্থান থেকে প্রচুর পরিমানে আঠা চুঁইয়ে নামে (গুমোসিস)। যখন কেটে দেখা হয়, তখন দেখা যায় কাণ্ড ও মূলের আভ্যন্তরীন কোষকলা বিবর্ণতা ধারণ করে (discoloration)। সামগ্রিকভাবে, ফসল নেতিয়ে পড়ে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে, ডাম্পিং-অফ পরিলক্ষিত হয়।
ফসলের ধরন এবং আবহাওয়ার অবস্থার উপরে নির্ভর করে এই ছত্রাকের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও ভিন্ন হতে পারে। অনেক বিরোধী ছত্রাক এবং ফাইটোপথো নিকোটিয়েন জীবাণু দ্বারাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, উদাহরণ হিসাবে অ্যাসপারগিল্লাস টেরাস, স্যিউডোমোনাস পুটিডা বা ট্রাইকোডার্মা হারজিয়ানাম উল্লেখযোগ্য। কপার সমৃদ্ধ ছত্রাকনাশক আর্দ্র আবহাওয়াতে প্রতি ২ থেকে ৩ মাস অন্তর ব্যবহার করলে তা রোগের আক্রমণ কমাতে পারে। ক্ষতযুক্ত গাছের ছাল অপসারণ করে কপার সমৃদ্ধ ছত্রাকনাশক পেস্টের আকারে সেই স্থানে লাগিয়ে দিতে হবে।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। কিছু ফসলের ক্ষেত্রে, মেটাল্যাক্সিল এবং ফসফোনেট উভয়েই কার্যকরী হতে দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য মেটাল্যাক্সিলের বিরুদ্ধে ছত্রাকের প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘটনার কথা জানা গিয়েছে।
অনেক প্রজাতির ক্ষেত্রে ফাইটোপথোরা নিকোটিয়েনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যা কৃষি ও উদ্যানপালন ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা নির্দিষ্টভাবে উদ্বেগ সৃষ্টিকারী জীবাণু। এটি মৃত্তিকাজাত ছত্রাক যা প্রধানতঃ উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়াতে বেড়ে ওঠে কিন্তু নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াতেও এই ছত্রাকের দেখা মেলে। জীবাণুর বিস্তারের জন্যে এবং ছত্রাকরেণু ছড়িয়ে পড়ার জন্যে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা জরুরী। বৃষ্টির ধারাপ্রবাহ বা জলসেচের মাধ্যমে ছত্রাকরেণু রোগাক্রান্ত উদ্ভিদ থেকে কাছাকাছি থাকা সুস্থ উদ্ভিদে ছড়িয়ে যায়। এই ছত্রাকরেণু জলেও টিকে থাকতে পারে এবং এইভাবে নিষ্কাশন নালা বা জলসেচ প্রণালীকে ব্যবহার করে রোগের আসল উৎসস্থল থেকে বহু দূরে অবস্থিত জমির উদ্ভিদকেও আক্রমণ করতে পারে।