কলা

কলার ব্যাকটেরিয়াজনিত পচা রোগ

Pectobacterium carotovorum

ব্যাকটেরিয়া

সংক্ষেপে

  • সাকার (চারা)-এর আভ্যন্তরীণ কোষকলা পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
  • মাটির সমান্তরালে পচে যায় এবং পাতার গোড়ায় বাদামী বা হলুদ রঙের জলে ভেজা মত স্থান দেখা যায়।
  • কাণ্ডের গোড়া স্ফীত হয়ে ফেটে যেতে পারে।
  • গাছের সবলতার অভাব ঘটে ফলে পাতা শুকিয়ে যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

কলা

উপসর্গ

সদ্য রোপনকৃত চারায় প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে আপাতকাণ্ড ও শিকড়ের আভ্যন্তরীণ কোষকলা পচে যেতে দেখা যায়। এর বৈশিষ্ট্য হল, আভ্যন্তরীণ কোষকলায় ঘন বাদামী বা হলুদ রঙের জলেভেজা স্থান এবং দূর্গন্ধ। সংক্রমিত গাছের গোড়ায় কাটা হলে হলুদ থেকে লালচে রঙের ক্ষরিত তরল দেখা যায়। গোড়ায় পচে যাওয়ার পর পাতা হঠাৎ করেই সতেজতা হারিয়ে ফেলে, যা পরবর্তীতে সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে যায়। রোগের পরবর্তী ধাপে গোড়া স্ফীত হয়ে ফেটে যায়। বয়স্ক গাছে মাটির সমান্তরালে এবং পাতার গোড়ায় পচে যায়। সংক্রমিত গাছ টান দিলে গোড়ায় মাটির সমান্তরালে ভেঙ্গে যায় এবং কন্দ ও শিকড় মাটিতে থেকে যায়। সাধারণত রোপনের ৩-৫ মাস পর এ রোগের বিস্তার ঘটতে দেখা যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

এ রোগের বিরূদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন জৈবিক দমন ব্যবস্থা সহজলভ্য নয়। একবার এ রোগ দেখা দিলে সংক্রমিত গাছের আরোগ্য লাভ বা সংক্রমণ হ্রাসের কোন সম্ভাবনা নেই। কোন জৈবিক দমনব্যবস্থা আপনার জানা থাকলে আমাদের জানান।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। একবার এ রোগ দেখা দিলে সংক্রমিত গাছের আরোগ্য লাভ বা সংক্রমণ হ্রাসের কোন সম্ভাবনা নেই। কোন রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা আপনার জানা থাকলে আমাদের জানান।

এটা কি কারণে হয়েছে

মৃৎজীবি ব্যাকটেরিয়া পেক্টোব্যাকটেরিয়াম ক্যারোটোভোরামের উপপ্রজাতি দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এরা আর্দ্র মাটি ও ফসলের অবশিষ্টাংশে বেঁচে থাকে। এরা এক গাছ থেকে আরেক গাছে বৃষ্টি ও সেচের জল এমনকি গাছের সংক্রমিত অংশ দ্বারা বিস্তৃত হয়। এ রোগে মূলত চারাগাছ আক্রান্ত হয়। জীবাণু গাছের কোষকলায় প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম ক্ষত দিয়ে মূলাঞ্চলে প্রবেশ করে। কাণ্ডের আভ্যন্তরীণ কোষকলা পচে যাওয়া এবং জল ও পুষ্টির পরিবহনে বাধার কারণে এ লক্ষণগুলো প্রকাশিত হয়। অধিক আর্দ্রতা ও ঘন ঘন বৃষ্টিপাত ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির অনুকূল। গ্রীষ্মকালে গরম ও সিক্ত আবহাওয়ায় সংক্রমণ সবচেয়ে ভয়াবহ হয়। কাঁদি বের হওয়ার সময়ে এ রোগ হলে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সঙ্গনিরোধ পদ্ধতি কঠোরভাবে মেনে চলুন।
  • বিশ্বস্ত সূত্র বা নীরোগ মাতৃগাছ থেকে নীরোগ চারা সংগ্রহ করে রোপন করুন।
  • দুটি চারাগাছের মধ্যের সঠিক দূরত্ব মেনে চলুন।
  • জমিতে জল জমে থাকা এড়াতে সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
  • শুধুমাত্র ভালভাবে পচে যাওয়া জৈব উপাদান প্রয়োগ করুন।
  • রোগের লক্ষণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে নিয়মিত কলার চারা বা বাগান নিরীক্ষা করুন।
  • জমিতে আন্তঃপরিচর্যার পর উপকরণ ও যন্ত্রপাতি ব্লিচ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করুন।
  • কমপক্ষে তিন বছর রোগপ্রতিরোধী ও অনাবাসী ফসলের সাথে শস্য চক্র অনুসরণের পরামর্শ রয়েছে।
  • চাষের সময় সযত্নে কাজ করুন।
  • যান্ত্রিক ক্ষতি এড়িয়ে চলুন।
  • পত্রপল্লব সিক্ত থাকলে জমিতে আন্তঃপরিচর্যা করবেন না বা সার প্রয়োগ করবেন না।
  • শুষ্ক আবহাওয়ায় ফসল আহরণ করুন।
  • সংক্রমিত গাছ দূর করুন এবং পুড়িয়ে ধ্বংস করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন