Tilletia tritici
ছত্রাক
ফুলে পরাগমিলন ঘটার কিছুদিন পরেই সংক্রমণের আগাম চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়। সংক্রমিত অণুমঞ্জরীতে আঠালো ভাব দেখা যায় এবং গমের খোসা গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করে। বীজের আবরণে কোন ক্ষতি হয় না কিন্তু বীজের অভ্যন্তরভাগ কালো মিহি পাউডারের মতো “বান্ট বল” দিয়ে ভর্তি থাকে। দানা আকার ও আয়তনে একই রকম থাকে কিন্তু ধূসর-বাদামী বর্ণ ধারণ করে। যখন দানা হাত দিয়ে চিপে ধরা হয়, কালো ছত্রাকরেণু বেরিয়ে আসে যার গন্ধ পচা মাছের মতো। সংক্রমিত গম গাছ সুস্থ গাছের তুলনায় সামান্য খর্বাকৃতি হয়। এদের শীষে শস্যশূক কম থাকে বা থাকেই না। সাধারণতঃ, মঞ্জরীর মধ্যে থাকা দানা সংক্রমণের ফলে প্রভাবিত হয় কিন্তু সম্ভবতঃ গাছের সমস্ত মঞ্জরীই সংক্রমিত হয় না।
মাঠা তোলা গুঁড়ো দুধ, ময়দা বা সমুদ্র-শ্যাওলার চূর্ণ জলে মিশিয়ে মাঠে ব্যবহার করলে এ ছত্রাকের প্রায় সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটে। বপনের আগে গরম জলে (৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বীজ ২ ঘন্টা ধরে ডুবিয়ে রাখলে ছত্রাকরেণু অপসারিত হয়।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। সরাসরি প্রয়োগ করা যায় এবং অন্তঃক্রিয়াশীল ছত্রাকনাশক (বৃদ্ধিপ্রাপ্ত চারাগাছের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশ করে) যেমন টেবুকোনাজোল (tebuconazole), বেঞ্জিমাইডাজোল (benzimidazoles), ফেনিলপাইরোলস (phenylpyrroles) এবং ট্রাইজোলস (triazoles), টিলেটিয়া ক্যারিস নামক ছত্রাকের হাত থেকে বীজকে রক্ষা করতে কার্যকরী হয়।
টিলেটিয়া ক্যারিস (Tilletia caries) নামক ছত্রাক এই রোগ লক্ষণ সৃষ্টির জন্য দায়ী যা বীজের অভ্যন্তরভাগে ও মাটিতে সুপ্ত অবস্থায় রেণু হিসাবে দু’বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। যে সমস্ত অঞ্চলে মাটির মধ্যে রেণু হিসাবে টিকে থাকে, সেখানে গাছের বৃদ্ধির একেবারে প্রথমাবস্থা থেকেই অর্থাৎ অঙ্কুরোদ্গমের পর থেকেই রোগের সংক্রমণ শুরু হয়। ছত্রাক কচি গম গাছ মাটির মধ্যে থেকে মাথা তোলার আগেই মঞ্জরীর রোঁয়া অংশকে সংক্রমিত করে। ধীরে ধীরে গাছ বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ছত্রাক গাছের আভ্যন্তরীন টিস্যুতে বসতি তৈরি করে এবং অবশেষে পুষ্পবিন্যাস ও দানা অংশে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়। কিছু স্মাট-রোগগ্রস্ত গমের দানা ফসল তোলার সময়ে ফেটে গিয়ে নতুন ছত্রাকরেণু বেরিয়ে আসে এবং বাতাসের প্রবাহে দূরে ছড়িয়ে গিয়ে মাটিতে নতুনভাবে জীবন-চক্র শুরু করে। বাকি দানা ফসল হিসাবে উত্তোলিত হয় এবং ভবিষ্যতে এ ছত্রাকের বাহক হিসাবে কাজ করে। ছত্রাকের অঙ্কুরোদ্গমের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো ৫ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।