Magnaporthe oryzae
ছত্রাক
গম ফসলের মাটির উপরস্থ অংশ সংক্রামিত হতে পারে তবে অকালে গমের শীষ বিবর্ণ হয়ে যাওয়া সবচেয়ে বড় উপসর্গ হিসেবে বিবেচিত। ফলনে সংক্রামন কয়েকটি দিনের ব্যাপার যেখানে কৃষকের কিছুই করার থাকে না। শস্যবীজ দানায় পূর্ণ হওয়ার সময় সংক্রমণের ফলে ছোট, কুঞ্চিত এবং বিবর্ণ দানা উৎপন্ন হয়। বয়স্ক পাতায় দুই ধরনের ক্ষত দেখা যায়ঃ মৃদু সংক্রমণের ফলে পাতায় হালকা ধূসর বর্ণের কেন্দ্রবিশিষ্ট কালো দাগ ও চোখাকৃতি বড় ক্ষত দেখা যায়। অন্যদিকে, পাতায় কালো দাগ এবং কালো বলয়ে ঘেরা ছোপ ছোপ বাদামী দাগ অথবা বিবর্ণ বলয়ের মাধ্যমে গুরুতর সংক্রমণ চিহ্নিত করা যায় । রোগের উপসর্গ অনেকটা ফিউজোরিয়াম সৃষ্ট শীষ ঝলসানোর অনুরূপ দেখা যায় বলে সহজেই ভুল হতে পারে ।
জমিতে এম. অরাইজা ছত্রাকের ক্ষেত্রে জৈবিক দমনের কোন বাস্তবিক প্রমাণ এখনো পর্যন্ত নেই। যদিও ধানের ক্ষেত্রে ঝলসানো রোগের বিরুদ্ধে বীজের চিকিৎসা এবং পত্রপল্লবে সিওডোমোনাস ফ্লুরেসেন্স এর দ্রবণ স্প্রে কার্যকরী ভুমিকা রাখে এবং দানাশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ফুল ফোটার সময় বা দানা গঠনের সময় উপর থেকে দীর্ঘক্ষন শিশির পড়লে গম পাতা ও শীষ ঝলসানো রোগের তীব্রতা বাড়ে। আন্তঃপরিবাহী ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পূর্বে আবহাওয়ার ( বৃষ্টি/তুষারপাত ) পূর্বাভাস জেনে নিন । সাধারণতঃ ছত্রাকনাশক একটি আংশিক প্রতিরক্ষা প্রদান করে থাকে । পুষ্পমঞ্জরী সৃষ্টিকালীন সময়ে বৃষ্টি বা তুষার পড়ার পূর্বে , সক্রিয় উপাদান ধারণকারী ট্রাইফ্লোক্সিস্ট্রোবিন ও টেবুকোনাজোল সংগঠিত দ্রবণ স্প্রে করুন । একই পদ্ধতিতে রাসায়নিক দ্রবণ ব্যবহার করবেন না কেননা এটি ছত্রাকের সহ্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
ম্যাগনাপোর্থে অরাইজি সৃষ্ট লক্ষণগুলো বীজ এবং ফসলের অবশিষ্টাংশে বেঁচে থাকতে পারে। গম ছাড়াও, এই প্রজাতিগুলো বিভিন্ন জাতের ফসল যেমন বার্লি এবং ধানের পাশাপাশি অন্যান্য অনেক উদ্ভিদ সংক্রামিত করে থাকে। এ কারনে ফসল আবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণও অকার্যকর হয়ে থাকে। বর্তমানে বেশিরভাগ জাতের গম এই রোগের প্রতি সংবেদনশীল। মোচা সৃষ্টি এবং শস্য ভরাট পর্যায়ে, উষ্ণ তাপমাত্রায় (১৮-৩0 ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং ৮০% এর উপরে আপেক্ষিক আর্দ্রতায় ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এবং কখনও কখনও এক সপ্তাহের মধ্যেই ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।