চিনাবাদাম

চিনাবাদামের অল্টারনেরিয়া দাগ রোগ

Alternaria sp.

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • হলুদাভ বলয়ের মাঝে বাদামী বর্ণের ক্ষুদ্র দাগের সৃষ্টি হয়।
  • ক্ষতগুলি মধ্যশিরার দিকে অগ্রসর হয়।
  • পাতাগুলি ভিতরের দিকে কুঁকড়ে যায় এবং ভঙ্গুর হয়ে ওঠে।
  • পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে ও নিস্তেজ হয়ে যায়।
  • অকালে পত্রমোচন হয়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

চিনাবাদাম

উপসর্গ

এ. আরাচিডিসের কারণে পাতায় হলুদাভ বলয়ের মাঝে বাদামী বর্ণের ক্ষুদ্র, অনিয়মিত আকৃতির দাগের সৃষ্টি হয় (পাতার দাগ)। এ. টেনুইসিমার কারণে কচিপাতার আগায় ‘ভি’ আকৃতির ক্ষয়যুক্ত রোগ দেখা দেয়। পরবর্তীতে, এই গাঢ়-বাদামী বর্ণের ক্ষত পাতার মধ্যশিরা ও সমগ্র পাতায় ছড়িয়ে যায় এবং বর্ণহীন হয়ে শুকিয়ে যায়, ভেতরের দিকে কুঁচকে যায় এবং ভঙ্গুর হয়ে ওঠে (লিফ ব্লাইট)। এ. অলটারনাটার কারণে সৃষ্ট ক্ষতগুলো হয় ক্ষুদ্র, গোলাকৃতির বা অনিয়মিত আকৃতির এবং সমগ্র পাতাজুড়ে ক্ষত ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতগুলো প্রথমে ক্লোরোফিল শূন্য হয় এবং জলসিক্ত থাকে, কিন্তু এদের আকৃতি বৃদ্ধির সাথে সাথে এগুলো পাতার টিস্যুকে নষ্ট করে ফেলে; এছাড়াও পার্শবর্তী পত্রশিরাকেও আক্রান্ত করে (লিফ স্পট ও ভেইনাল নেক্রোসিস)। পাতার মধ্যভাগ শীঘ্রই শুকিয়ে যায় এবং ভেঙে পড়ে, এতে পাতা খসখসে হয়ে যায় এবং উদ্ভিদের পাতা ঝরে যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

এই রোগগুলো প্রতিরোধে এখনো পর্যন্ত কোন কার্যকর বিকল্প নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা কার্যকরী হয় নি।সাধারণত ৩ গ্রাম/লিটার কপার সংগঠিত ছত্রাকনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে পাতায় ম্যানকোজেব (৩ গ্রাম/লিটার পানিতে ) ছত্রাকনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এটা কি কারণে হয়েছে

এ রোগ অলটারনেরিয়া প্রজাতির তিনটি ভূমিজাত ছত্রাকের কারণে ঘটে। আক্রান্ত বীজ সংক্রমণের মুখ্য কারণ হিসাবে কাজ করতে পারে। যদি আক্রান্ত বীজ বপন করা হয় এবং আবহওয়া ও অন্যান্য অবস্থা অনুকূল থাকে, তবে তীব্র ফসলহানি ঘটতে পারে। অন্যান্য উদ্ভিদে রোগের পরবর্তী বিস্তার ঘটে বায়ুর চলাচল ও পোকামাকড়ের মাধ্যমে। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা, দীর্ঘক্ষণব্যাপী পাতা সিক্ত থাকা, এবং উচ্চ আর্দ্রতা এ রোগের বিস্তারের পক্ষে অনুকূল। বর্ষা পরবর্তী সময়ে চীনাবাদাম গাছে সেচকার্য প্রদানের সময় এটি ঘটতে পারে। রোগের প্রাদুর্ভাব ও তীব্রতার উপর ভিত্তি করে, শুঁটি ও বিচালির পরিমাণ যথাক্রমে ২২% থেকে ৬৩% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ থেকে সংগৃহীত অথবা প্রত্যয়িত উৎস থেকে প্রাপ্ত জীবাণুমুক্ত বীজ ব্যবহার করুন।
  • রোগ প্রতিরোধী ও সহিষ্ণু জাত ব্যবহার করুন।
  • ক্ষেত থেকে আগাছা, বিকল্প পোষক গাছ এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে জন্ম নেওয়া উদ্ভিদ অপসারণ করুন।
  • জীবাণুর জন্য আবহাওয়া অনুকূল হওয়ার সাথে সাথেই ফসলের ক্ষেতে রোগের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে কিনা লক্ষ্য করুন।
  • বীজতলা বা ক্ষেত থেকে রোগাক্রান্ত গাছকে হাতে করে তুলে ধ্বংস করে ফেলুন।
  • অন্তত তিন বছর পরপর পরাশ্রয় প্রদান করে না এমন ফসলের সাথে পর্যায়ক্রমে চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • গাছের পাতা ভেজা থাকলে ক্ষেতে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
  • জমিতে থেকে যাওয়া জীবাণু দূর করতে গভীরভাবে জমি চাষ করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন