Sarocladium oryzae
ছত্রাক
প্রাথমিকভাবে শীষ আবৃতকারী পাতায় (০.৫-১.৫ মিমি) অনিয়মিত কিংবা এবড়ো থেবড়ো দাগ দেখা যায়। দাগগুলো সাধারণত কেন্দ্রের দিকে ধূসর বর্ণের এবং পরিধির দিকে বাদামী বর্ণের হয়, এরপর এ দাগ গুলো একত্রিত হয়ে খোলের পচন শুরু করে যার ফলে পাতার খোল বিবর্ণ হয়ে যায়। মারাত্মক সংক্রমণ হলে শীষ নাও বের হতে পারে। আক্রান্ত খোলে প্রচুর পরিমাণে সাদা পাউডারের মত ছত্রাকের জীবাণু দৃশ্যমান হয়। আক্রান্ত শীষ থেকে বের হওয়া দানাগুলো বিবর্ণ ও বন্ধ্যা হয়। অনুত্থিত শীষ থেকে লালচে বাদামী অথবা ঘন বাদামী রঙের পুষ্পিকা বের হয়। থোড় বের হওয়ার শেষ দিকে এ রোগ হলে সংক্রমণ তীব্র হয় এবং ক্ষতির পরিমাণও মারাত্মক হয়।
লেবু অথবা ধানগাছ থেকে পরিশ্রুত রাইজোব্যাকটেরিয়া (Rhizobacteria) অথবা সুইউডোমনাস ফ্লুরোসেন্স (Pseudomonas fluorescens) নামক ব্যাকটেরিয়া ধানের খোলপচা ছত্রাকের জন্য বিষাক্ত, ফলে এটি থাকলে রোগের প্রাদুর্ভাব কমার পাশাপাশি ফলনও বাড়ে। বাইপোলারিস জিকোলা (Bipolaris zeicola) নামের একটি ছত্রাক এ রোগের জন্য দায়ী স্যারোক্লেডিয়ামম ওরাইজি (S. oryzae) ছত্রাকের অঙ্গজ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। গাদাফুলের পাতা ও ফুলের ছত্রাকনাশী নির্যাস এ ছত্রাকের অঙ্গজ বৃদ্ধি শতভাগ দমন করতে পারে।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। সংক্রমণ তীব্র হলে ছত্রাকনাশক যেমন বেনোমিল (benomyl), কার্বেন্ডাজিম (carbendazim), ম্যানকোজেব (mancozeb), কপার অক্সিক্লোরাইড (copper oxychloride) অথবা প্রোপিকোনাজল (propiconazole) প্রয়োগ করলে রোগের প্রাদুর্ভাব কমে। বীজ শোধক ছত্রাকনাশক যেমন কার্বেন্ডাজিম (carbendazim), এডিফেনফস (edifenphos) অথবা ম্যানকোজেব (mancozeb) ৩ গ্রাম/কেজি হারে প্রয়োগ করলেও উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যাবে।
খোলপচা রোগ মূলত একটি বীজবাহিত রোগ। স্যারোক্লেডিয়াম ওরাইজি (Sarocladium oryzae) নামক ছত্রাক থেকে এ রোগ হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে স্যারোক্লেডিয়াম এটেনুয়েটাম (Sacroladium attenuatum) নামক ছত্রাক থেকেও এ রোগ হতে পারে। ধানের পরিত্যক্ত অবশিষ্টাংশে এ রোগের জীবাণু বেঁচে থাকে এবং পরবর্তী মৌসুমে আবার বিস্তার লাভ করে। চারা রোপণের ঘনত্ব বাড়লে এ রোগের বিস্তার বাড়ে। ধানের শীষ আসার পর্যায়ে পোকামাকড় দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতস্থান ছত্রাকের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। ফলে তখনও রোগের তীব্রতা বাড়ে। কুশি পর্যায়ে পটাশিয়াম (potassium), ক্যালসিয়াম সালফেট (calcium sulphate) বা জিংক (zinc) সার দিলে কাণ্ড ও পাতার কোষকলা দৃঢ় হয়, ফলে ক্ষতির পরিমাণ কম হয়। এ রোগ ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত দুর্বল ধানগাছের সাথেও সম্পর্কযুক্ত। উষ্ণ তাপমাত্রা (২০-২৮ সেলসিয়াস) এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়।