ক্যাপসিকাম ও মরিচ

মরিচের ফোস্কা রোগ

Colletotrichum sp.

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • ফলে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
  • পাতা এবং কাণ্ডে ধূসর-বাদামী বর্ণের দাগ দেখা যায় যার প্রান্ত গাঢ় বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে।
  • ফলের উপরে দাগগুলিকে ঘিরে এককেন্দ্রিক বলয় তৈরী হয়।
  • শাখা-প্রশাখা মরে যায় এবং ফল পচে যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে


ক্যাপসিকাম ও মরিচ

উপসর্গ

ফলের গায়ে জলে ভেজা গোলাকার কিংবা কৌণিক ক্ষত দেখা যায় যা পরবর্তীতে নরম এবং সামান্য দাবানো হয়। ক্ষতস্থানের কেন্দ্র কমলা অথবা বাদামী বর্ণের হয় যা পরবর্তীতে কালো বর্ণ ধারন করে এবং আশেপাশের কোষকলা হালকা বর্ণের হয়ে থাকে। ফলের অধিকাংশ পৃষ্ঠ জুড়ে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে এবং একাধিক ক্ষত তৈরী হতে পারে। সাধারণত ফলের দাগে এককেন্দ্রিক একাধিক বলয় দেখা যায়। কাঁচা মরিচ প্রচ্ছন্নভাবে আক্রান্ত থাকতে পারে কিন্তু ফল পাকার আগে পর্যন্ত কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়না। পাতা এবং কাণ্ডে ছোট, অনিয়মিত আকৃতির গাঢ় বাদামী প্রান্তযুক্ত ধূসর-বাদামী বর্ণের দাগের মাধ্যমে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। মরশুমের শেষ ভাগে, শাখা-প্রশাখা মরে যায় এবং পরিপক্ক ফল পচে যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

আক্রান্ত বীজ ৩০ মিনিট ধরে ৫২°সে. তাপমাত্রার গরম জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আশাতীত ফলাফল নিশ্চিত করতে এ শোধন ব্যবস্থায় তাপমাত্রা এবং সময় সঠিকভাবে অবলম্বন করতে হবে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। যদি ছত্রাকনাশক প্রয়োজন হয় তবে ম্যানকোজেব অথবা কপার সংগঠিত পণ্য স্প্রে করুন। ফুল আসার সময় থেকেই দমন ব্যবস্থা নিতে শুরু করুন।

এটা কি কারণে হয়েছে

এ রোগ মুলত কলিটোট্রিকাম বর্গের ছত্রাক এবং বিশেষকরে সি. গ্লোইয়োস্পোরিওইডিস এবং সি. ক্যাপসিসির কারনে ঘটে। এ জীবাণু মরিচ গাছের বৃদ্ধির যে কোন পর্যায়ে যেমন অপরিপক্ক, পরিপক্ক কিংবা ফসল উত্তোলনের পরেও আক্রমণ করতে পারে। এ জীবাণু মরিচের বীজ, গাছের ধ্বংসাবশেষ কিংবা সোলানেসি জাতীয় বিকল্প আবাসে বেঁচে থাকে। জীবাণুগুলো আক্রান্ত চারা রোপনের মাধ্যমেও নতুনভাবে প্রবর্তিত হতে পারে। উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে এ ছত্রাকগুলো সতেজ থাকে এবং বৃষ্টি কিংবা সেচের জলের মাধ্যমে বিস্তৃত হতে পারে। সাধারণত ১০-৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মরিচের ফলে সংক্রমণ ঘটতে পারে কিন্তু ২৩-২৭° সেলসিয়াস তাপমাত্রা রোগ ক্রমবর্ধনের জন্য অনুকূল। ফলের পৃষ্ঠের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে ফোস্কা রোগের বৃদ্ধি ঘটে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • কার্বনের ভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রোপন করার আগে মাটিতে গোবর সার প্রয়োগ করুন।
  • জলাবদ্ধতা দূর করতে উন্নত নিকাশি ব্যবস্থার পরিকল্পনা করুন।
  • মাটি ও উদ্ভিদের মধ্যে স্পোর ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে দুটি সারির মাঝে মালচ্‌ বা আস্তরণ প্রয়োগ করুন।
  • আপনার অঞ্চলে উপলব্ধ হলে রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করুন।
  • নীরোগ গাছ অথবা প্রত্যয়িত উৎস থেকে বীজ সংগ্রহ করুন।
  • চারা রোপনের আগে রোগের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় কিনা তা দেখতে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করুন।
  • জমিতে এবং আশপাশ থেকে বিকল্প আবাস এবং আগাছা দমন করুন।
  • গাছের মাথার উপর থেকে জলসেচ পরিহার করুন এবং শুধুমাত্র সকালবেলায় উপর থেকে জলসেচ দিন।
  • সুষম সার প্রয়োগের পরিকল্পনা করুন এবং নাইট্রোজেন সার ধাপে ধাপে প্রয়োগ করুন।
  • সংগৃহীত ফসলের আবর্জনা সরিয়ে ফেলুন কিংবা পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলুন।
  • শস্যচক্র মেনে চলুন তবে মরিচ, টমেটো, স্ট্রবেরী গাছ এড়িয়ে চলুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন