Elsinoe ampelina
ছত্রাক
দ্রাক্ষালতার সমস্ত সবুজ অংশ যেমন পাতা, ডগা, কাণ্ড ও আকর্ষকে ছত্রাক আক্রমণ করে। যা'হোক, উদ্ভিদের দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়া অংশ সবথেকে বেশী আক্রান্ত হয়। পত্রফলকের উপরের পৃষ্ঠে ছোট বাদামী দাগ বেড়ে ওঠে। এ দাগগুলো আকারে বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসম আকৃতির হয় এবং কেন্দ্রভাগ ক্রমে ধূসর ও মৃতবৎ শুষ্ক অংশে পরিণত হয়। সাধারণভাবে, মৃত অংশ গাছ থেকে ঝরে পড়ে এবং বন্দুকের গুলির মত ছিদ্র তৈরী করে। এ ধরণের দাগ ও ক্ষত কাণ্ডের গায়ে ও ডগায় দেখা যায় যা কালক্রমে এদের আবেষ্টন করে ফেলে, ফলস্বরূপ ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং মারা যায়। ফলের উপরে ছোট, বৃত্তাকার ও বেগুনী রঙের দাগ বৃদ্ধি পায়। এরা ক্রমে আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং বাদামী রঙের দাগ দিয়ে ঘেরা ছাই ধূসর রঙের দাবানো অংশে রূপান্তরিত হয়। এ দাগ যখন ফলের ত্বককে ঢেকে ফেলে, ফল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং গাছ থেকে পড়ে যেতে পারে অথবা আঙ্গুরগুচ্ছ প্রস্তরীবৎ অংশে রূপান্তরিত হয়। ছাই ধূসর কেন্দ্রভাগ সহ সুস্পষ্ট দাগ দেখা যায় বলে এ রোগ ‘পাখির চোখে পচন’ বলে পরিচিত।
জীবাণু চরম ক্ষতি করার আগে বসন্তের শুরুতে কুঁড়ি প্রস্ফুটিত হওয়ার আগে তরল চুন সালফার বা কপার স্প্রে করা হয়। নিশ্চিত হয়ে নিন যে ছত্রাকনাশক জৈব প্রত্যয়িত কার্যক্রমে অনুমোদিত হয়েছে।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। পরিচ্ছন্ন আন্তঃপরিচর্চার রীতি মেনে চললে এবং প্রতিরক্ষার জন্য ছত্রাকনাশকের স্প্রে-র মাধ্যমে আঙ্গুরের ফোস্কা রোগকে নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে। তরল চুন সালফার বা বোর্দো মিশ্রনকে স্প্রে করে কুঁড়ি প্রস্ফুটিত হওয়ার সময় প্রয়োগ করলে অ্যানথ্রাকনোজ সমস্যাকে কমাতে সাহায্য করে। ক্যাপটান (captan), ক্লোরোথ্যালোনিল (chlorothalonil ) ও ম্যানকোজেব (mancozeb) সমৃদ্ধ কীটনাশক উদ্ভিদের নতুন বৃদ্ধিকে ধরে রাখতে ও ফলকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। কুঁড়ি প্রস্ফুটিত হওয়া থেকে শুরু করে ফলে রঙ ধরতে শুরু করা পর্যন্ত প্রতি ২ সপ্তাহ অন্তর স্প্রে করুন।
এলসিনো অ্যামপেলিনা (Elsinoe ampelina) নামক ছত্রাকের সংক্রমনে এ উপসর্গ সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত দ্রাক্ষালতার ডগা ও বাকলের উপরে এ ছত্রাক শীতকাল অতিবাহিত করে। বসন্তে ছত্রাক রেণু উৎপন্ন করতে শুরু করে যা বৃষ্টির ঝাপ্টায় মুক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাস এবং বৃষ্টি এ ছত্রাকরেণুকে কচি পাতা বা মঞ্জরীতে বহন করে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে গাছ সিক্ত অবস্থায় থাকা (১২ ঘন্টা বা তার বেশী) এবং ২ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পরাগরেণুর উৎপাদন এবং অঙ্কুরোদ্গমের পক্ষে অনুকূল হয়। তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা যত বাড়বে, রোগ তত দ্রুতগতিতে ছড়াবে এবং উপসর্গ তত দ্রুত প্রকাশ পাবে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া ছত্রাকের বৃদ্ধিকে ধীর লয় সম্পন্ন করে। পত্রমোচন এবং আঙ্গুরফলে সরাসরি ক্ষতির কারনে ফলের উৎপাদন এবং গুণমানের উপরে তার প্রভাব পড়ে।