টমেটো

গোড়া ও আগা পচা রোগ

Athelia rolfsii

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • কাণ্ড এবং চারপাশের মাটিতে এ ছত্রাক সাদা রঙের তুলতুলে গোলাকার এক ধরণের মাদুর গঠন করে।
  • পাতাগুলো নেতিয়ে পড়ে।
  • চারাগাছ মাটিতে পড়ে যায় বা মারা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

29 বিবিধ ফসল
বার্লি
শিম
করলা
বাঁধাকপি
আরো বেশি

টমেটো

উপসর্গ

প্রাথমিকভাবে ছত্রাক গাছের কাণ্ডে সংক্রমণ ঘটায়, যদিও উপযুক্ত পরিস্থিতি পেলে চারাগাছের অন্যান্য অঙ্গে সংক্রমণ করে। উদ্ভিদের কোষকলায় তা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মাটির চারিদিক ঘিরে সাদা, তুলতুলে ছত্রাকের মাদুর তৈরী করে যার গঠন গোলাকার, কালো থেকে বাদামী হয়। কাণ্ডের কোষকলা বিবর্ণ বাদামী এবং নরম হয়ে যায় কিন্তু সিক্ত থাকে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাণ্ড সম্পূর্ণ বেষ্টিত হয়ে যায় এবং পাতাগুলো আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ে ও হলুদ হয়ে যায়। এমনকি চারাগাছ মাটিতে পড়ে যায় বা মারা যায় এবং সম্পূর্ণ সারি বা জমির বিস্তৃত এলাকা জুড়ে চারাগাছ মারা যেতে দেখা যায়। চারাগাছগুলো বিশেষত অধিক সংবেদনশীল হয় এবং একবার সংক্রমিত হলে দ্রুত মারা যায়। মাঝে মাঝে ফলগুলো ছত্রাকের চাদরে আবৃত হয়ে দ্রুত পচে যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

বৈরীভাবাপন্ন ছত্রাক (প্রায়ই অন্যান্য পদ্ধতির সাথে যৌথভাবে) ব্যবহারের মাধ্যমে এ জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যেতে পারে। লক্ষ্য রাখুন, ফলাফল অনেকাংশে ফসলের ধরণ ও আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। বহুল ব্যবহৃত জৈবিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে ট্রাইকোডার্মা হারজিয়ানাম (Trichoderma harzianum), ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি (Trichoderma viride), ব্যাসিলাস সাবটিলিস (Bacillus subtilis), স্ট্রেপটোমাইসেস ফিলানথিসাম (Streptomyces philanthisome), গ্লাইওক্ল্যাডিয়াম ভাইরেনস (Gliocladium virens) এবং পেনিসিলিয়াম (Penicillium) এর কিছু প্রজাতি।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। চাষের পূর্বে ধোঁয়া দিয়ে মাটি শোধনের মাধ্যমেও এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মূল্যবান ফসলের ক্ষেত্রে বীজতলা বা মূল জমি মেটাম সোডিয়াম (metam sodium) ভিত্তিক রাসায়নিক দিয়ে শোধন করতে পারেন।

এটা কি কারণে হয়েছে

এ লক্ষণগুলো অ্যাথেলিয়া রল্ফসি (Athelia rolfsii) ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে, যা স্ক্লেরোশিয়াম রল্ফসি (Sclerotium rolfsii) নামেও পরিচিত। একইসাথে, এ রোগের সাধারণ নামও এটি। এ ছত্রাক মাটি বা ফসলের অবশিষ্টাংশে থেকে শীত অতিক্রম করে। এটি অনেক কৃষিজ ও উদ্যান ফসলে রোগের বিস্তার ঘটায় (এর মধ্যে কয়েকটি হল মসুর, মিষ্টি আলু, কুমড়া, ভুট্টা, গম এবং বাদাম)। অনুকুল পরিবেশে এর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে এবং মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই মাটির নিকটবর্তী গাছের কোষকলায় ব্যাপক আক্রমণ করে। অম্লত্ব (৩ থেকে ৫), ঘন ঘন জলসেচ বা বৃষ্টি, ঘন করে চারা রোপন এবং উচ্চ তাপমাত্রা (২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ছত্রাকের জীবনচক্র ও সংক্রমণকে উৎসাহিত করে। অপরদিকে, অধিক পিএইচ সম্পন্ন ক্ষারীয় মাটিতে কোন সমস্যা হয় না। সংক্রমিত মাটি, জল, সংক্রামিত চাষের যন্ত্রপাতি, আক্রান্ত গাছ ও প্রাণীর অংশ (বীজ ও গোবর) স্থানান্তরের উপর রোগের বিস্তার নির্ভর করে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • প্রত্যয়িত উৎস থেকে প্রাপ্ত সুস্থ বীজ ব্যবহার করুন।
  • সহজলভ্য হলে রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করুন এবং চাষের জন্যে সেই জমি নির্বাচন করুন যেখানে এ রোগের পূর্ব ইতিহাস নেই।
  • বীজের হার যেন খুব বেশি না হয় এবং চারাগাছগুলোর মধ্যে অন্তবর্তী ফাঁকা স্থান যথেষ্ট পরিমাণে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
  • ফসলের নামলা/নাবী চাষ রোগের সংক্রমণ হ্রাস করতে সহায়তা করে।
  • মাটির অতিরিক্ত আর্দ্রতা প্রতিহত করতে জমির জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা যাতে উন্নতমানের হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • যদি প্রয়োজন হয় তাহলে গাছকে খাড়া রাখতে খুঁটি ব্যবহার করুন।
  • গাছে অতিরিক্ত জলসেচ দেবেন না কারণ তা ছত্রাকের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।
  • উপকরণ, সরঞ্জামাদি জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার রাখুন।
  • এক জমির মাটি অন্য জমিতে নেবেন না।
  • ফসলের মাঠ আগাছামুক্ত রাখুন।
  • রোগের লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে সপ্তাহে অন্ততঃ একবার জমি তদারক করুন।
  • রোগাক্রান্ত অংশ বা গোটা চারাগাছ তুলে ফেলুন এবং মাটির গভীরে পুঁতে ফেলুন বা পুড়িয়ে ফেলুন।
  • আন্তঃপরিচর্যা করার সময় চারাগাছ যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
  • মাটি ঢেকে দিতে এবং ছত্রাকের বৃদ্ধি ব্যাহত করতে কালো প্লাস্টিকের মালচ্‌ ব্যবহার করুন।
  • চুন প্রয়োগ করে জমির অম্লত্ব (পিএইচ)নিয়ন্ত্রণ করুন।
  • ফসলের গাছ শক্তিশালী ও সতেজ করতে উন্নত সার ব্যবস্থাপনা মেনে চলুন।
  • ছত্রাকের বৃদ্ধি ব্যাহত করতে ফসলের অপ্রয়োজনীয় অংশ মাটির ২০-৩০ সে.মি. গভীরে পুঁতে ফেলুন এবং রৌদ্রের আলোতে মাটি উন্মুক্ত রাখুন।
  • অনাবাসী ফসলের সাথে কয়েক বছরের জন্য শস্যচক্র অনুসরণ করুন।
  • চারাগাছে অতিরিক্ত জল দেবেন না কারণ তা ছত্রাকের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।
  • মাটির আর্দ্রতা যাতে অত্যধিক হয়ে না যায় সেজন্য জমিতে উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
  • প্রয়োজন হলে চারাগাছ সোজা রাখার জন্য খুঁটি ব্যবহার করুন।
  • ছত্রাকের বৃদ্ধি ব্যাহত করতে ফসলের অপ্রয়োজনীয় অংশ মাটির গভীরে পুঁতে ফেলুন এবং রৌদ্রের আলোতে মাটি উন্মুক্ত রাখুন।
  • অনাবাসী ফসলের সাথে কয়েক বছরের জন্য শস্যচক্র অনুসরণ করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন