লেবু জাতীয় ফসল

লেবুজাতীয় ফসলের গুমোসিস্ রোগ

Phytophthora spp.

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • মাটির সমতল থেকে লেবু জাতীয় গাছের বাকলে কালো জল-সিক্ত অংশ দেখা যায়।
  • শুষ্ক আবহাওয়ায় জলে দ্রবনীয় আঠা গাছের বাকলে উপস্থিত ফাটলের মধ্যে দিয়ে বের হয়ে আসে।
  • মাটির নীচের অংশের বাকল জল-সিক্ত, কর্দমাক্ত ও লালচে-বাদামী থেকে কালো বর্ণের হয়।
  • মৃত কোষকলা সমন্বিত বর্ণহীন অংশ আভ্যন্তরীন কোষকলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং বাকলকে বৃত্তাকারে ঘিরে ধরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

লেবু জাতীয় ফসল

উপসর্গ

গোড়া পচে যাওয়া বা গাছ থেকে আঠা বের হয়ে আসার মত উপসর্গ মাটির কাছাকাছি অংশ থেকে শুরু হয়। গাছের ছাল বা বাকলের উপর কালো জল-সিক্ত অংশ তৈরী হয় এবং আর্দ্র পরিবেশে এর থেকে একটা টক গন্ধ নিঃসৃত হয়। বিশেষ করে শুষ্ক আবহাওয়ায় গাছের বাকলে সৃষ্ট উলম্ব ফাটল থেকে জলে দ্রবণীয় আঠা নিঃসৃত হয়। পরবর্তী পর্যায়ে মাটির নীচে থাকা বাকল জল-সিক্ত, কর্দমাক্ত এবং লালচে-বাদামী বা কালো বর্ণে পরিণত হয়। বাদামী বর্ণের মৃত কোষকলাযুক্ত অঞ্চল কাঠের অভ্যন্তর ভাগের দিকেও সম্প্রসারিত হতে পারে। পুষ্টির অভাবে গাছের পাতা হলুদ বর্ণে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তী পর্যায়ে, মৃত বাকল শুকিয়ে যায়, কুঁচকে ছোট হয়ে যায় এবং বাকলে চিড় ধরে বাকল গাছ থেকে পড়ে যায়, ফলে কাণ্ডের গায়ে ক্ষত সৃষ্টির সম্ভাবনা আরো বেড়ে যায়। ছত্রাক বাকলকে পরিবেষ্টন করে ফেললে গাছের বৃদ্ধি থমকে যেতে পারে এবং গাছের মৃত্যুও হতে পারে । সংক্রামিত ফলে বাদামী বর্ণের নরম পচা স্থানের সৃষ্টি হয় যা থেকে সাধারণতঃ একটা ঝাঁঝালো গন্ধ উৎপন্ন হয় যাত রোগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

গরম জলে (প্রায় ৪৯ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায়) বীজ ৪-১০ মিনিট পর্যন্ত রেখে দিলে বীজ-বাহিত রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা নির্মূল করা যায়। সূক্ষ-সেচ ব্যবস্থায় ক্লোরিনের সন্নিবেশ করা গেলে Phytophthora –র সংক্রমণ কার্যকরীভাবে কমে। ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি (যেমন Trichoderma spp. ও Bacillus spp.)- ফাইটোপথোরার (Phytophthora) নিয়ন্ত্রণকারী জীবাণু হিসেবে পরীক্ষিত হয়েছে। কপার (Copper ) সংগঠিত ছত্রাকনাশক প্রথমাবস্থায় ব্যবহারে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। মেটালেক্সিল (metalaxyl ) ও ফোসেটাইল-অ্যালুমিনিয়াম (fosetyl-aluminium) সংঘটিত ছত্রাকনাশক ফলবাগিচায় প্রয়োগ করলে ছত্রাকের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ও জৈবিক নিয়ন্ত্রণ ভালভাবে কার্যকরী হয়। পাতায় ফোসেটাইল-অ্যালুমিনিয়াম (fosetyl-aluminium) প্রয়োগ করে এবং মাটি মেটালেক্সিল (metalaxyl ) দিয়ে সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। ফসল তোলার আগে স্প্রে এবং ফসল তোলার পরে জলে ভিজিয়ে এবং/বা সংরক্ষনের জন্য সম্পৃ্ত মোড়ক সপারিশকৃত।

এটা কি কারণে হয়েছে

ফাইটোপথোরা (Phytophthora) ছত্রাকের বিভিন্ন প্রজাতি এ রোগ সৃষ্টি করে। এ রোগ বিপুল পরিমাণে জলবাহিত ছত্রাকরেণু সৃষ্টি করে যা অনুকূল পরিবেশে (উচ্চ আর্দ্রতা ও উচ্চ তাপমাত্রা) জলে ভেসে স্বল্প দূরত্ব সাঁতরে অতিক্রম করতে পারে। ছত্রাকরেণু সংক্রামক যা বৃষ্টি বা জলসেচের মাধ্যমে গাছের শিকড় পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এ ঞ্জীবানু অঙ্কুরিত হয়ে শিকড়ের অগ্রভাগে প্রবেশ করে সমগ্র অনুশিকড়কে পচিয়ে দেয়, পরে শিকড়ের বাকি অংশকে গ্রাস করে। ছত্রাকরেণু কাণ্ডের নীচের অংশ ঘিরে থাকা বাকলের চিড় ধরা অংশের মাধ্যমে অথবা কাণ্ডের গায়ে ক্ষতে প্রবেশ করে এবং পাদদেশ পচে যায় বা গাছে সৃষ্ট ফাটল দিয়ে আঠার নিঃসরণ শুরু হয়। গাছ সংক্রামিত হবে কিনা তা নির্ভর করে কোন ধরনের ফাইটোপথোরা (Phytophthora) প্রজাতি সেখানে উপস্থিত এবং একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোন ধরনের পরিবেশগত অবস্থা বিরাজ করে তার উপরে (মাটির প্রকারভেদ, জলের উপস্থিতি ইত্যাদি)।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • বিশ্বস্ত উৎস থেকে প্রাপ্ত বীজ কেবল ব্যবহার করুন।
  • ফলবাগিচার জন্য রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন বা রোগসহনশীল প্রজাতির চারাগাছ ব্যবহার করুন।
  • নার্সারী তৈরীর জায়গায় যেন নিকাশী ব্যবস্থা ভালো থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • জমিতে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের আগে তা সংক্রামক-রোগবীজ মুক্ত করুন।
  • রোগাক্রমণ থেকে ক্ষতি এড়িয়ে চলার জন্য ক্যাম্বার্ড বেডের উপরে চারাগাছ রোপণ করতে হবে।
  • বিশেষ করে কাণ্ডের নীচের দিকে যাতে আঘাতে ক্ষত তৈরী না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • গাছের মৃত অথবা সংক্রামিত অংশবিশেষ তৎক্ষণাৎ সরিয়ে ফেলুন।
  • প্রথম পার্শ্বীয় মূলে রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠে কিনা তা দেখতে ফলবাগিচা নিয়মিত পরিদর্শন করুন।
  • নালা কেটে জলসেচ দেওয়ার সময় গাছের প্রধান কাণ্ড যাতে এ জলের সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন