Phoma tracheiphila
ছত্রাক
রোগ লক্ষণের প্রথম আবির্ভাব ঘটে কোন একটি শাখা বা অঞ্চলে, এবং যদি কোন আপৎকালীন ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে তা গাছের বাকি অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলস্বরূপ গাছের মৃত্যু হতে পারে। বসন্তকালে ডগা ও পাতায় হলুদাভ বিবর্ণতা দেখা দেওয়ার পরেই ডালপালা ও শাখা-প্রশাখা মাথা থেকে শুকিয়ে গাছ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। শুকিয়ে যাওয়া শাখাপ্রশাখার উপর গাঢ় নীলাভ ধূসর বর্ণ বা ধূসর ছাই সীমানা দিয়ে ঘেরা অংশের মধ্যে ফুটে ওঠা কালো বিন্দু ছত্রাকরেণুর উপস্থিতি নির্দেশ করে। রোগাক্রান্ত শাখাপ্রশাখা ও মূলের শোষক অংশের গোড়া থেকে ফোলা অংশের উদ্ভব হয়। সংক্রামিত ডালপালা, শাখাপ্রশাখা বা উদ্ভিদের প্রধান কাষ্ঠল অংশ কাটা হলে বা গাছের বাকল ছেঁটে ফেলা হলে কাঠের বর্ণ বিবর্ণ-গোলাপী থেকে কমলা-লাল বর্ণ দেখায়। আভ্যন্তরীন উপসর্গগুলির প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আঠাও বের হতে থাকে।
জীবাণু দমনে মূলতঃ কপার সংঘটিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যায়। শরৎকাল থেকে বসন্তকালে যখন রোগাক্রমণের সম্ভাবনা সবথেকে বেশী থাকে তখন কপার সংঘটিত প্রোটেকট্যান্ট কীটনাশক উদ্ভিদের পত্ররাজি ও শাখা-প্রশাখায় বারে বারে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। মূলের রাইজোস্ফিয়ার অংশে বাস করা সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়া, যেমন সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ও সিউডোমোনাস পুটিডা , প্রয়োগ করলে তা ফোমা ট্র্যাকিফিলিয়ার (Phoma tracheiphila) বৃদ্ধিকে বাধা দেয় বলেই দেখা গেছে।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। জিরাম (জিঙ্ক ডাইমিথাইলডাইথায়োকার্বামেট) সমৃদ্ধ পদার্থ ফোমা ট্র্যাকিফিলিয়ার (Phoma tracheiphila) নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী হয়। আন্তঃবাহী উপকরণ যেমন কার্বোক্সিন (carboxin ) ও বেঞ্জিমিডাজোলের (benzimidazole ) ব্যবহারও রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কার্যকরী হয়। তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি বা শক্তিশালী ঝড়ো হাওয়ার ফলে গাছের গায়ে যদি ক্ষত সৃষ্টি হয় তাহলে প্রোটেকট্যান্ট ও আন্তঃবাহী ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
পাতা, শাখাপ্রশাখা ও শিকড়ের ক্ষত দিয়ে ছত্রাক প্রবেশ করে। আক্রমণকারী জীবাণু জলবাহিত ছত্রাকরেণু। ডালপালা বা মাটির সংস্পর্শে থাকা শাখাপ্রশাখায় চারমাসেরও বেশী সময়কাল পর্যন্ত ছত্রাক বেঁচে থাকতে পারে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ছত্রাকটি জন্মানোর জন্যে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে কাজ করে। বৃষ্টির জলের ধারা প্রবাহে বা উদ্ভিদের মাথার উপরে জলসেচনের মাধ্যমে ছত্রাকরেণু গাছ ও মাটিতে পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিছু বায়ু-বাহিত হয়ে আক্রমণ করতে পারে। প্রাথমিক উৎস থেকে ছত্রাক সাধারণতঃ স্বল্প দূরত্ব অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ মিটার পর্যন্তই ছড়িয়ে পড়ে, যদিও একটানা হাওয়ার দাপটে এই দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে। রোগের আক্রমণের জন্য ১৪ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন এবং ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলো সবচেয়ে উপযুক্ত।