Phyllosticta citricarpa
ছত্রাক
ছত্রাক বিভিন্ন ধরনের রোগলক্ষণ প্রকাশ করতে পারে, মূলতঃ এটা ফলের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়। সুগভীর ক্ষতচিহ্ন বেশ কয়েক মিলিমিটার ব্যাসযুক্ত হতে পারে। পুষ্ট কমলালেবুর গায়ে দাগগুলি গর্ত মতো দেখতে হয় এবং হালকা বর্ণের কেন্দ্রযুক্ত, গাঢ় বাদামী বর্ণ থেকে কালো বর্ণের বেড়যুক্ত এবং প্রায়শই সবুজাভ আভা বের হয়। গাঢ় বাদামী থেকে কালো পচা দাগ কাঁচা ফলের গায়ে একসঙ্গে বেড়ে উঠতে পারে। ক্ষুদ্র চিহ্নযুক্ত দাগগুলি কমলা থেকে লাল বর্ণের, চ্যাপটা, ১ থেকে ৩ মিলিমিটার ব্যাসযুক্ত এবং মরশুমের শেষের দিকে আবির্ভূত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দাগগুলি বাদামী বর্ণে রূপান্তরিত হয়। অত্যন্ত তীব্র এই দাগগুলি সুবৃহৎ, কিছুটা পরিমানে ঝলসানো এবং পুষ্ট ফলের গায়ে অনিয়মিতভাবে অনেকটা জায়গা জুড়ে অবস্থান করে। পাতার ক্ষত খুব একটা দেখা যায় না কিন্তু মাঝেমাঝে লেবু গাছে তা দেখা যায়। এই ক্ষতগুলি ক্ষুদ্র, ঝলসানো মৃত কোষকলা সমৃদ্ধ হয়। এই দাগের কেন্দ্রগুলি হালকা বর্ণের এবং গাঢ় বেড়যুক্ত হয়। এতে পাণ্ডুর বর্ণের আভা থাকতে পারে।
ছত্রাকরেণু নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এবং বৃষ্টিপাত ও শিশিরের পরিমান গননার মাধ্যমে ছত্রাকনাশকের প্রয়োগের সঠিক সময় নির্দ্ধারন করতে সাহায্য করে। এই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইতে বেশ কয়েকটি তামার তৈরী পদার্থ ব্যবহার করা যেতে পারে। ফসল চাষের পর গরম জল প্রয়োগ বা ফলের গায়ে মোম লেপন জীবাণুর সংখ্যা কমিয়ে দেয় এবং সেই সঙ্গে রোগের প্রাদুর্ভাবও কমিয়ে দেয়।
সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। বেঞ্জিমিডাজোল (benzimidazole ) ছত্রাকনাশক দিয়ে ফসল চাষের আগে স্প্রে করলে তা প্রতিরোধকের কাজ করে এবং ফলের পরিবহন বা সংরক্ষণের সময়ে রোগ লক্ষণগুলির আবির্ভাবকে মন্থর করে। গুয়েজাটাইন (guazatine ) বা ইমাজালিল (imazalil ) দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করলে কালো দাগযুক্ত ক্ষতস্থানে রোগ জীবাণুর আক্রমণের তীব্রতাকে কমিয়ে দেয়। ছত্রাকনাশক যেমন স্ট্রোবিলুরিন্স (strobilurins), ডিথিওকার্বামেটস (dithiocarbamates ) ও বেঞ্জিমিডাজোলস (benzimidazoles )-ও ছত্রাকঘটিত রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী কিন্তু অনেক স্থানে ছত্রাকনাশকের বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধও গড়ে ওঠে।
পড়ে থাকা পাতার অবশিষ্টাংশে গোটা শীতকাল জুড়ে ছত্রাক বসবাস করে এবং বসন্তকাল জুড়ে ছত্রাকরেণু উৎপাদন করতে শুরু করে। যদি মাটিতে পড়ে থাকা পাতার স্তুপ একবার জলে ভিজে যায়, আবার পরে শুকিয়ে যায় তাহলে এই উৎপাদন প্রক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পায়। ছত্রাকরেণু বৃষ্টিপাতের সময় বা জলসেচের সময় বাইরে বেরিয়ে আসে, বাতাসে বা জলের মাধ্যমে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং আক্রান্ত কলার উপরে অঙ্কুরোদ্গম ঘটায়। পাতায় ১০ মাস বয়স পর্যন্ত রোগ সংক্রমণের আশংকা বেশী, ফলের গঠন সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে ৪ থেকে ৫ মাস বয়স পর্যন্ত ফলেও রোগাক্রমনের ভয় থাকে। রোগ সংক্রমণের পরে, ছত্রাক ক্যিউটিকল ও এপিডার্মিসের (বহিস্তক) মধ্যবর্তী অঞ্চলে কলোনী তৈরী করে। ফল পূর্ণতাপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংক্রমণ প্রচ্ছন্ন ও অদৃশ্য অবস্থায় থাকে। পাতায় সংক্রমণ সাধারণতঃ সুপ্ত অবস্থায় থাকে, কিন্তু পাতার উপরে থাকা দাগ পুরাতন পত্রে দেখা যায়। পাতার উপরে ক্ষত সাধারণতঃ নরম ও আঠালো ধরনের ছত্রাকরেণু সৃষ্টি করে যা আর্দ্র অবস্থায় জলে মিশে যায়। ক্রমাগত বৃষ্টিপাতের ফলে বা জলের ধারাপ্রবাহের সঙ্গে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।