শিম

শিমের শিকড়ের শুকনো পচা রোগ

Fusarium solani f. sp. phaseoli

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • চারা অবস্থায় পাতা হলুদ হয়ে যেতে পারে এবং পরে নেতিয়ে যাওয়া শুরু করে।
  • গাছের অঙ্কুরোদগমের পরপরই প্রধান শিকড়ে লালচে ক্ষত দৃশ্যমান হয়।
  • এ ক্ষতগুলো গাঢ় বাদামী বর্ণের এবং এগুলো একত্রিত হয়ে মূলের অক্ষ বরাবর ফাটল সৃষ্টি করতে পারে।
  • কোষকলা নরম হয় না এবং পচন ধরে না, যার ফলে এ রোগটির আরও একটি নাম হচ্ছে "শুকনো শিকড় পচা" রোগ।
  • যদি এগুলো গাছে বেঁচে থাকে, তবে সংক্রামিত গাছে কেবল স্বল্প বীজ সহ গুটিকয়েক ফল ধরে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

শিম

উপসর্গ

বপনের কয়েক সপ্তাহ পরে, সংক্রামিত চারার পাতা হলুদাভ হয়ে যায় এবং মরে যেতে শুরু করে। পরিবেশগত পরিস্থিতি এই রোগের অনুকূলে থাকলে গাছ খর্বাকৃতির হতে পারে এবং খুব শীঘ্রই মারা যায়। ভূগর্ভস্থ অংশের লক্ষণগুলো অঙ্কুরোদগমের এক সপ্তাহ পরে প্রধান শিকড়ে লালচে ক্ষত বা রেখা হিসাবে দেখা দেয়। এধরনের ক্ষতগুলো গাঢ় বাদামী বর্ণের, একত্রিত হয়ে যেতে পারে এবং শুকানোর পরে এগুলো শিকড়ের অক্ষের সাথে ফাটল সৃষ্টি করে। পার্শ্বীয় শিকড় এবং শিকড়ের আগা কুঁচকে যায় এবং মরে যেতে পারে কিন্তু গাছের সাথে লেগে থাকতে পারে। এ ক্ষতের উপরে মাটির কাছাকাছি অংশে নতুন তন্তুযুক্ত শিকড় সৃষ্টি হতে পারে। কোষকলা নরম হয় না এবং পচন ধরে না , যার ফলে এ রোগটির আরও একটি নাম হচ্ছে "শুকনো শিকড় পচা" রোগ। যদি এগুলো গাছে বেঁচে থাকে, তবে সংক্রামিত গাছে কেবল স্বল্প বীজ সহ গুটিকয়েক ফল ধরে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

জৈবনিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে বীজ শোধন, যেমন ব্যাসিলাস সাবটিলিসের সাথে রাইজোবিয়াম ট্রপিসি বেশ কার্যকর হতে পারে। অণুজীবের মাধ্যমে অন্যান্য শোধন প্রক্রিয়ার মধ্যে ট্রাইকোডার্মা হার্জিয়ানাম সংগঠিত দ্রবণ উল্লেখযোগ্য।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ছত্রাকনাশক সাধারণত ফিউজারিয়াম শিকড় পচা নিয়ন্ত্রণে খুব বেশী কার্যকর হয় না।

এটা কি কারণে হয়েছে

ফিউজারিয়াম শিকড় পচা রোগ সাধারনত ফিউজারিয়াম সোলানি ছত্রাকঘটিত রোগ যা বেশ কয়েক বছর ধরে মাটিতে ফসলের অবশিষ্টাংশের মধ্যেও বেঁচে থাকতে পারে। এ ছত্রাক অঙ্কুরোদগমের অল্পক্ষণের মধ্যেই বর্ধনশীল চারার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং জল ও খাদ্যপ্রাণ পরিবহন কোষকলায় অবস্থান করে। ছত্রাকের উপস্থিতি সাধারণত স্থিতিশীল সুস্থ সবল গাছের সামান্য ক্ষতি করে। তবে যদি পরিবেশগত পরিস্থিতি প্রতিকূল হয় ( যেমনঃ খরা, বন্যা কবলিত জমি, খাদ্যপ্রাণের ঘাটতি, বেশী গভীরে রোপন, শক্ত মাটি, বালাইনাশক জনিত ক্ষতি), এবং সেইসঙ্গে অবরুদ্ধ জল এবং খাদ্যপ্রাণ পরিবহণ সংশ্লিষ্ট সৃষ্ট চাপ লক্ষণগুলোর উপস্থিতি বাড়ায়। এক্ষেত্রে, ফলনের অভাবনীয় ক্ষতির আশঙ্কা থাকতে পারে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সম্ভাব্য ক্ষেত্রে, বাজারে সহজলভ্য রোগ সহনশীল বা প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করুন।
  • অগভীর বীজতলা বা নালাতে শিম বপন করুন।
  • মাটি খুব বেশী উষ্ণ হয়ে গেলে দেরী না করে জমিতে বীজ বপন করুন।
  • গাছের মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁকা স্থান রাখুন।
  • জমিতে উন্নত জলনিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখুন।
  • খরার ধকল পরিহারে গাছে নিয়মিত জল সেচ দিন।
  • মৃত্তিকার জমাটবদ্ধতা দূর করুন এবং শক্ত মাটির দলাগুলো ভেঙ্গে ফেলুন।
  • জমিতে ভালভাবে সার প্রয়োগ করুন।
  • জমিতে যেকোনো কাজ করার সময় গাছগুলোতে যাতে আঘাত না লাগে সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  • লিগুমিনাস নয় এমন ফসলের সাথে ৪ থেকে ৫ বছরের দীর্ঘমেয়াদী ফসল আবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
  • লাঙ্গল দিয়ে গভীরভাবে চাষ করে গাছের অবশিষ্টাংশ মাটি চাপা দিন।
  • জমি চাষ করে ফেলে রাখুন এবং সূর্যের উন্মুক্ত আলোতে রেখে দিন।
  • সংক্রামিত শিমের গাছের খড় প্রাণীকে খাওয়াবেন না।
  • পশুর গোবর ছত্রাক বহন করতে পারে।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন