তুলা

তুলার ধূসর-মাইল্ডিউ রোগ

Mycosphaerella areola

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • পুরাতন পত্রে ক্ষুদ্র, হালকা সবুজ থেকে হলুদাভ, কৌণিক দাগ দেখা যায় যা শিরা-উপশিরা দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে।
  • পাতার নিচে যেখানে দাগ হয় তার উপর সাদা ধূসর বর্ণের ছত্রাকের উৎপত্তি দেখা যায়।
  • মারাত্মকভাবে আক্রান্ত গাছের পাতা ধীরে ধীরে শুকিয়ে অকালে ঝরে পড়ে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

তুলা

উপসর্গ

মরশুমের শেষের দিকে সাধারণতঃ এ উপসর্গ দেখা দেয়। পুরাতন পাতার উপরিভাগে ক্ষুদ্র, হালকা সবুজ থেকে হলুদাভ, কৌণিক দাগ দেখা যায় যা শিরা দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। পাতার নিচে রূপালী ধূসর ছত্রাকে ছেয়ে যায়। চরম আর্দ্রতার সময়ে, পাতার উভয় পৃষ্ঠে রূপালি সাদা ছত্রাক দ্বারা ছেয়ে যায়। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত পাতা মৃত কোষকলা সমৃদ্ধ হয়, কুঁকড়ে যায় ও শুষ্ক হয়ে লালচে-বাদামী বর্ণে রূপান্তরিত হয়ে অকালেই ঝরে পড়ে। পত্রমোচনের ফলে গাছ দুর্বল হয় এবং উৎপাদনশীলতা কমে আসে। কচি পাতায় উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। আক্রান্ত ফল জীবনীশক্তি হারায় ও অকালে ফেটে যায়, টানলে ভেঙ্গে যায় এবং মাড়াই করার সময় ভেঙে যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

সুইডোমোনাস ফ্লু্রেসেন্স প্রতি কেজি বীজ ১০ গ্রাম ব্যবহার করে শোধন করতে হবে। ১০ দিন অন্তর অন্তর এ ব্যাক্টেরিয়ামের তরল দ্রবণ স্প্রে করে উল্লেখযোগ্যভাবে রোগ সংক্রমণ কমানো সম্ভব। অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া যেমন, ব্যাসিলাস সার্কুলান্স এবং সেরাসিয়া মারকেসেন্স ব্যবহার করে মাইকোস্ফারেলা অন্য প্রজাতিকেও দমন করা যায় এবং অন্য ফসলের ক্ষেত্রেও এ রোগের সংক্রমণ কমানো যায়। জলে দ্রবণীয় সালফার ৩ গ্রাম/লি অথবা হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি সালফারের পাউডার ডাস্ট হিসাবে ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যায়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় বা রোগ যখন সীমিত থাকে, সে সময়ে জৈবিক দমন ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগের চরম ধাপে, প্রপিকনাজল (Propiconazole) বা হেক্সাকনাজল (Hexaconzole) ২ মিলি/ লি হারে ছত্রাকনাশক প্রয়োগের সুপারিশ আছে। ১ সপ্তাহ থেকে ১০ দিন অন্তর অন্ত্রর স্প্রে করতে হবে।

এটা কি কারণে হয়েছে

মাইকোস্ফারেলা এরিওলা (Mycosphaerella areola) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয় যা আগের মরশুমের ফসলের অবশিষ্টাংশ বা জমির চারিপাশে আপনা আপনি বেড়ে ওঠা আগাছা থেকে রোগ ছড়ায়। এগুলোই হচ্ছে রোগ বিস্তারের প্রধান মাধ্যম। ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, উচ্চ আর্দ্রতা ( ৮০% বা তারও বেশি) এবং অন্তর্বর্তীকালীন বৃষ্টিপাত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি করে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও দীর্ঘসময়ব্যাপী রাত্রিকালীন কুয়াশা, বৃষ্টি না থাকলেও এ রোগ বিস্তারে সহায়ক। পাতার ক্ষতের মধ্যে ছত্রাক রেণু উৎপন্ন হয় এবং এর পরবর্তীকালে বায়ুবাহিত হয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের সূচনা করে। মৌসুমের শেষ ভাগে তুলা ফসল পাকার সময়ে বা আগে এ রোগের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করুন ( এ ধরনের বেশ কিছু জাতের বীজ বাজারে সহজলভ্য)।
  • কেবল উঁচু করে রোপণের ব্যবস্থা নিন, যাতে নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল থাকে।
  • মৌসুমের খুব আগাম অথবা নামলা ফসল চাষ করবেন না।
  • বৃষ্টির পর যাতে গাছ দ্রুত শুকাতে পারে সে কারনে পাতলা করে গাছ রোপণ করুন।
  • রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিনা তা নিয়মিতভাবে তুলা ক্ষেত তদারকি করুন।
  • যে সকল পাতায় রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে সে গুলো সরিয়ে মাটির নিচে ধংস করে ফেলুন।
  • আগের মরশুমে জমি এবং জমির চারিপাশে আপনা আপনি বেড়ে ওঠা আগাছা নষ্ট করে দিন।
  • ড্রিপ-সেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করুন এবং ফসলের মাথার উপরে জলসেচ দেওয়া বর্জন করুন যাতে পাতা তেমন আর্দ্র না থাকে।
  • সকালে জল সেচের ব্যবস্থা করুন যাতে বিকালে গাছ শুকিয়ে যায়।
  • ফসলের পত্রপল্লব এবং মাটির উপরিভাগের শুষ্কতা বজায় রাখতে ঘন ঘন সেচ এড়িয়ে চলুন।
  • নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার বা গোবর সার অতি মাত্রায় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • যখন উদ্ভিদ জলে সিক্ত অবস্থায় থাকবে তখন জমিতে কাজ করবেন না।
  • ফসলের অবশিষ্টাংশ তুলা ক্ষেত থেকে সরিয়ে দূরে কোথাও নিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন।
  • ২-৩ বছর পর পর অনাবাসী ফসল যেমন দানা শস্য চাষ করে একটি শক্তিশালী ফসল চক্র বাস্তবায়ন করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন