Alternaria macrospora
ছত্রাক
পাতায় আগাম সংক্রমণ হলে ১ থেকে ১০ মিলিমিটার ব্যাসযুক্ত ছোট, বৃত্তাকার এবং বেগুনী কিনারাযুক্ত বাদামী থেকে তামাটে দাগ উৎপন্ন হয়। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই দাগগুলির কেন্দ্রভাগ থেকে বৃদ্ধি হয় যার ফলে কেন্দ্র থেকে গোলাকার নকশার মতো অংশ গড়ে ওঠে যা পাতার উপরের পৃষ্ঠভাগে আরো ভালোভাবে ফুটে ওঠে। দাগগুলি বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এদের কেন্দ্রভাগ শুকনো ও ধূসর বর্ণের হয়ে যায় এবং এতে প্রায়ই চিড় ধরে ও ঝরে পড়ে যায় (শট-হোল প্রভাব)। এই দাগগুলি একসঙ্গে জুড়ে যেতে পারে এবং পাতার মধ্যবর্তী অংশে অসমানাকার মৃত কোষময় অংশ গড়ে ওঠে। যাইহোক, আর্দ্র পরিবেশে, ছত্রাক যথেষ্ঠ পরিমানে ছত্রাকরেণু উৎপন্ন করে যার কারণে ক্ষতস্থান কালো ছত্রাকরেণু দিয়ে ঢাকা থাকতে পারে। ছোট জলসিক্ত দাগ থেকে কাণ্ডের উপর ক্ষতস্থানের বৃদ্ধি শুরু হয় যা পরে দূষিত, এলোমেলো হয়ে যায় ও কোষকলায় চিড় ধরে। মারাত্মক আক্রমণে ফুলের কুঁড়ি ঝরে পড়ে যায়, যার ফলে শুঁটি তৈরি হতে পারে না।
স্যিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স (প্রতি কেজি বীজে ১০ গ্রাম) দিয়ে বীজ পরিশোধন করলে ফসলকে তা কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। প্রতি ১০ দিন অন্তর স্যিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্সের ০.২% দ্রবণ স্প্রে করলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে সংক্রমণ হ্রাস করে।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। সাধারণত, এ রোগের ফলে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে তেমন কিছু প্রভাব ফেলে না যার জন্যে নির্দিষ্ট ছত্রাকনাশকের প্রয়োজন হবে। মারাত্মক আক্রমণের ক্ষেত্রে, ছত্রাকনাশক যেমন ম্যানেব, ম্যানকোজেব (২.৫ গ্রাম/লিটার), হেক্সাকোন্যাজোল (১ মিলি./লিটার), টেবুকোন্যাজোল ও ডিফেনোকোন্যাজোল প্রয়োগ করে অল্টারনেরিয়া দাগ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। স্টোবিলুরিন্স (যেমন ট্রাইফ্লোক্সিস্ট্রোবিন) বা স্টেরল বায়োসিন্থেসিস ইনহিবিটরস (যেমন, ট্রাইঅ্যাডিমেনল, ইপকোন্যাজোল) ব্যবহার করে বীজ পরিশোধন করলে তা জীবাণু প্রতিরোধে সাহায্য করে।
রোগের এই লক্ষণ অল্টারনেরিয়া ম্যাক্রোস্পোরা নামক ছত্রাকের কারনে ঘটে। জীবন্ত কোষকলা বা পরাশ্রয়ী উদ্ভিদের অভাবে এ ছত্রাক তুলো গাছের অবশিষ্টাংশের উপর টিকে থাকে। জীবাণু বাতাসের সাহায্যে ছড়িয়ে যায় এবং বৃষ্টির জলের ঝাপটায় সুস্থ উদ্ভিদকে রোগাক্রান্ত করে। পাতায় থাকা ক্ষতদাগ থেকে রেণু উৎপন্ন হওয়া এবং রোগের সংক্রমণের পিছনে আর্দ্র আবহাওয়া ও প্রায় ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অনুকূল হয়। চারা অবস্থায় থাকাকালীন ও মরশুমের শেষে পাতার অকাল মৃত্যু ঘটার সময়ে উদ্ভিদ রোগের প্রতি বেশী সংবেদনশীল হয়। নীচের পাতার তুলনায় উপরে থাকা পাতায় সংক্রমণের ঝুঁকি কম হয়। ছত্রাকের বিকাশের পক্ষে অনুকূল তাপমাত্রায়, রোগের প্রতি সংবেদনশীল এমন জাতের চারাগাছে ক্রমাগত অনেক বেশী পরিমানে পত্রমোচন হয়, বিশেষ করে যেক্ষেত্রে তুলোর গুটি সংক্রামিত হয়। যখন শারীরবৃত্তীয় কারণ বা খাদ্যপ্রাণের অভাবজনিত কারণ যুক্ত হয় তখন রোগ লক্ষণ প্রকাশের ক্ষেত্রে তা আরও অনুকূল হয় যেমন, উদ্ভিদ অত্যধিক ফলভারে ক্লান্ত হলে বা অকালে পত্রমোচন হলে।