ভুট্টা

ভুট্টার দক্ষিণী মরিচা রোগ

Puccinia polysora

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • বয়স্ক পাতার উপরের পৃষ্ঠে ছোট ছোট, লালচে কমলা, চূর্ণবৎ, ঘন ফুস্কুড়ি দেখা যায়।
  • পরবর্তীতে কচি পাতা ও অন্যান্য অঙ্গে সেগুলো দেখা যেতে শুরু করে।
  • বিস্তৃত জায়গা জুড়ে পাতা হলুদ হয়ে যায় ও বাদামী হয়ে কোষকলা পচে যেতে দেখা যায়।
  • ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে কাণ্ড পচে যায়, গাছ ভূপাতিত হয় এবং দানার গুণগত মান হ্রাস পায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

ভুট্টা

উপসর্গ

দক্ষিণী মরিচা রোগে বয়স্ক পাতার উপরের পৃষ্ঠে ছোট ছোট, লালচে কমলা, আলপিনের ডগার মত ফুস্কুড়ি দেখা যায়। পাতার নিচের পৃষ্ঠে থাকলে সেগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো থাকবে। এ ফুস্কুরিগুলো চূর্ণবৎ, গোলাকার থেকে ডিম্বাকার, স্ফীত এবং ঘন ভাবে সন্নিবিষ্ট থাকে। রোগের পরবর্তী ধাপে, সেগুলো ঘন ঘন ছড়ানো থাকে এবং কচি পাতা, পাতার খোলস, ফলের খোসা ও কাণ্ডেও দেখা যায়। পাতার বিস্তৃত অংশ জুড়ে হলুদ হয়ে যায় ও বাদামী হয়ে কোষকলা পচে যেতে দেখা যায়। বয়স্ক পাতার তুলনায় কচি পাতা অধিক সংবেদনশীল হয় এবং নাবী চাষের কারণে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে কাণ্ড পচে যায়, গাছ ভূপাতিত হয় এবং দানার গুণগত মান হ্রাস পায়। এর বিস্তারের সক্ষমতা ফলনের উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

ছত্রাকরেণুর অঙ্কুরোদগম প্রতিরোধে ম্যাকানিয়া (মিকানিয়া গ্লোমেরাটা) লতার জলীয় নির্যাস ব্যবহার করুন। পুরো পাতাকে বিশুদ্ধ পাতিত জলে ডুবিয়ে ২৪ ঘন্টা রেফ্রিজারেটরে রেখে জলীয় নির্যাস প্রস্তুত করা যায়। এরপর ফিল্টার কাগজ দিয়ে ছেঁকে নিয়ে তাতে জল মিশিয়ে ৫ শতাংশ ঘনত্ব পর্যন্ত পাতলা করুন। এরপর এ মিশ্রণ ফসলের পাতায় প্রয়োগ করুন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ছত্রাকনাশকের ব্যবহারের মাধ্যমে সংক্রমিত অংশের আরোগ্য সাধন সম্ভব নয়। তাই শুধুমাত্র সংক্রমণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে সুস্থ গাছে প্রয়োগ করা যেতে পারে। গাছের বয়স চিন্তা করে রোগের প্রকোপ ও আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়মত এগুলো প্রয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজোক্সিস্ট্রোবিন, প্রোপিকোনাজল, ফ্লুট্রিয়াফল, প্রোথিওকোনাজল সমৃদ্ধ ছত্রাকনাশক এবং তাদের সমন্বিত ব্যবহার রোগের প্রকোপ হ্রাস করতে সাহায্য করে। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটা উদাহরণ হলোঃ ফুস্কুড়ি দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি লিটার জলে ২.৫ গ্রাম ম্যানকোজেব মিশিয়ে স্প্রে করা এবং ফুল আসা পর্যন্ত প্রতি ১০ দিন ব্যবধানে প্রয়োগ করে যাওয়া।

এটা কি কারণে হয়েছে

সাধারণত উদ্ভিদের বৃদ্ধির শেষ দিকে ক্রান্তীয় থেকে প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় পাকসিনিয়া পলিসোরা ছত্রাকের কারণে দক্ষিণী মরিচা রোগ হয়ে থাকে। এটি একটি বাধ্যতামূলক পরজীবী অর্থাৎ মাটি বা বীজ ব্যতীত শুধুমাত্র উদ্ভিদের জীবিত অংশে এরা বেঁচে থাকতে পারে। তাই, এক মরশুমে সংক্রমণ হলে পরের মরশুমেও হবে এমন কোন নিশ্চিত সম্ভাবনা নেই। এক জমি বা এলাকা থেকে অন্য জমিতে প্রাথমিক সংক্রমণের মাধ্যম হল বায়ুবাহিত ছত্রাকরেণু। পরবর্তীতে বাতাস ও জলের মাধ্যমে এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগের বিস্তারের জন্য সর্বোত্তম পরিস্থিতি হল ২৭ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও উচ্চ আর্দ্রতা। বৃদ্ধি পর্যায়ে আগাম সংক্রমণের ফলে ফসলের দ্রুত ও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধিত হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • রোগ প্রতিরোধী ও সহনশীল জাতের চাষ করুন।
  • ভুট্টার নাবী চাষ এড়িয়ে চলুন।
  • রোগের লক্ষণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে জমি নিরীক্ষা করুন।
  • ফসলের গাছকে সতেজ করতে সুষম সার প্রয়োগ নিশ্চিত করুন।
  • বৃদ্ধির শেষ পর্যায়ে অতিরিক্ত জল সেচ পরিহার করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন