Pyrenophora tritici-repentis
ছত্রাক
পাতায় মৃত দাগ অথবা ক্লোরোসিস কিংবা উভয় ধরনের লক্ষণই দেখা যায়। প্রথমে পাতার উপর এবং নিচে উভয় দিকেই তামাটে বাদামী, মৃত দাগের চিহ্ন প্রতীয়মান হয়। পরবর্তীতে এরা বিবর্ধিত হয়ে লেন্স আকৃতির, চারিদিকে হাল্কা সবুজ কিংবা হলুদাভ বর্ণের দাগবিশিষ্ট, বিভিন্ন আকারের তামাটে ক্ষত তৈরি করে। ক্ষতের মাঝখানটা শুকিয়ে ধূসর বর্ণের হয়ে যায়। উচ্চ আর্দ্রতাযুক্ত পরিবেশে গাছের পাতা ভিজে থাকলে ক্ষতের মধ্যভাগ কালো দেখায়। প্রথম পর্যায়ে সৃষ্ট চিহ্নগুলি একত্রিত হয়ে বড় ফুসকুড়ি তৈরি করে। যার ফলে পাতাগুলো মরে যায় এবং গাছগুলিতে পত্রমোচন জনিত সমস্যা দেখা দেয়। অন্যান্য ছত্রাকজনিত রোগের মত বিবর্ণ ও কালো হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি গমের দানাগুলোর লাল অথবা গোলাপি বর্ণ ধারণ করার প্রধান কারণ হচ্ছে এই জীবাণুটি। তবে যা কিছু হোক না কেন, খোসাগুলো আক্রান্ত হয়না।
মাটিতে বসবাস করে এমন বৈরী জীবাণুগুলোর কার্যক্রম বাড়াতে পরিমিত মাত্রায় সার ব্যবহার করুন। বিভিন্ন জীব যেমন- Alternaria alternata, Fusarium pallidoroseum, Acinetobacter calcoaceticus, Serratia liquefaciens এবং সাদা ঈস্ট ইত্যাদি এ রোগের বিরুদ্ধে উচ্চমাত্রায় কার্যকর হয়ে থাকে এবং এই ছত্রাকের ক্ষতির মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয়।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। গাছে স্প্রে করার জন্য এমন ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন যা রোগের বিরুদ্ধে উচ্চমাত্রায় কার্যকর হয়ে থাকে। পাইরাক্লসট্রোবিন (pyraclostrobin), পিকোজাইস্ট্রোবিন (picoxystrobin), প্রোপিকোনাজল (propiconazole) অথবা প্রথায়োকোনাজল (prothioconazole) জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পাইরিনোফোরা ট্রিটিসি-রেপেন্টিস (Pyrenophora tritici-repentis) নামক ছত্রাকের দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়। শীতকালে গমের নাড়া বা বীজকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকে। বসন্তকালে বীজগুটি পরিপক্ক হয় এবং বাতাসের অথবা বৃষ্টির ফোঁটার সাথে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে । এদের আকার বড় হওয়ার কারনে বেশি দূরে ছড়াতে পারে না । এ বীজগুটিগুলো নিচের পাতায় আক্রমন করে ও সেখানে পুনরায় বীজগুটি তৈরী করে উপরের দিকের পাতা এবং আশেপাশের গাছে ছড়িয়ে যায়। আলোর উপস্থিতিতে এই ছত্রাক এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ তৈরী করে যার ফলে গাছের পাতা মৃত কোষকলাময় ও হলুদ রঙ ধারন করে । বাতাসের আর্দ্রতা ৯৫% এর বেশি হলে ছত্রাকের বীজগুটির উৎপাদন বেশি হয় । দ্বিতীয় পর্যায়ের আক্রমনের জন্য পাতায় আর্দ্রতা, উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা, এবং ২ দিন ধরে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশী তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন। গমের তামাটে দাগ রোগ বিস্তৃতির জন্য ২০-২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপযুক্ত।