অন্যান্য

গমের পাতা ও খোসা ঝলসানো রোগ

Parastagonospora nodorum

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • নিচের দিকের পাতাগুলোতে জলে-ভেজা ছোপছোপ দাগ অথবা ছোটছোট বিবর্ণ ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
  • পরবর্তীতে হলুদ কিনারা বিশিষ্ট তামাটে বাদামী বর্ণের ডিম্বাকৃতি আঁচিল দেখা যায়।
  • মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত পাতাগুলোতে ক্ষুদ্র বাদামী আঁচিল বিশিষ্ট বড় ধূসর বর্ণের ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
  • খোসাগুলোতে গাঢ় বাদামী থেকে বেগুনী বর্ণের ক্ষত দেখা যায়।
  • চারাগাছে কাণ্ডের অগ্রভাগ বাদামী বর্ণবিশিষ্ট হয়ে বেড়ে উঠতে থাকে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

2 বিবিধ ফসল
বার্লি
গম

অন্যান্য

উপসর্গ

নিচের দিকের পাতাগুলোতে জলসিক্ত ও ছোট ছোট বিবর্ণ ক্ষত দেখা যায়। গোড়ার পাতা থেকে শুরু করে উপরের পাতা পর্যন্ত এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। পরবর্তীতে এগুলো বিবর্ধিত হয়ে ডিম্বাকৃতি, চারিদিকে হলুদাভ বর্ণের কিনারা বিশিষ্ট, বিভিন্ন আকারের তামাটে ক্ষত তৈরি করে। রোগ বৃদ্ধি পেলে বৃহৎ আকারের ক্ষতগুলো বিবর্ধক কাঁচ বা মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখলে ছত্রাকের গুটিগুলো দৃশ্যমান হয়। অধিক আক্রান্ত পাতাগুলোতে ফুস্কুড়ি ছড়িয়ে পড়লে পাতা অগ্রভাগ থেকে শুকিয়ে যেতে থাকে। ফুল ফোঁটার পরে আর্দ্র জলবায়ু আক্রান্ত খোসাগুলোতে ক্ষতের চিহ্ন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। পাতার অগ্রভাগে লক্ষণ তৈরি হয় কিন্তু ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ পাতাতেই গাঢ় বাদামী থেকে বেগুনী ও ধূসর ছাই বর্ণের ক্ষত ছড়িয়ে পড়ে। মারাত্মক আক্রমণের ফলে হাল্কা ওজনের কুঁচকানো দানা তৈরি হয়, আক্রান্ত বীজগুলো অনিয়মিতভাবে গজায় এবং চারাগুলোতে কাণ্ডের অগ্রভাগ বাদামী বর্ণ বিশিষ্ট হয়ে থাকে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

দুঃখিত, Phaeosphaeria nodorum-এর বিরুদ্ধে বিকল্প কোন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে, এমন কিছু পদ্ধতির কথা যদি আপনার জানা থাকে তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের জানান। আপনার কাছ থেকে জানার অপেক্ষায় রইলাম।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

এ রোগের ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ বেশ কার্যকর, কিন্তু স্বল্প পরিসরের ফসল চাষাবাদে তা সম্ভবপর নয়। ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে যেমনঃ ট্রাই-এডিমেনোল (triadimenol), ডাইফেনোকোনাজল (difenoconazol) ও ফ্লুকুইনকোনাজল (fluquinconazol) ইত্যাদি। চাষাবাদের ধরন এবং সংক্রমণের সময়ের উপর ভিত্তি করে প্রয়োগ পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে।

এটা কি কারণে হয়েছে

পাতার এ রোগের লক্ষণগুলো সৃষ্টি হয় বীজবাহিত ছত্রাক Parastagonospora nodorum-র সংক্রমনের দ্বারা এবং এরা দীর্ঘ সময় ধরে গমের অবশিষ্টাংশে, আক্রান্ত বীজ, আশ্রয় প্রদানকারী উদ্ভিদে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখে। এরা জলের মাধ্যমে ফসলে ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতাগুলো ১২-১৮ ঘণ্টা ভেজা অবস্থায় থাকলে সংক্রমণ ঘটে। মাটির কাছাকাছি থাকা পুরনো পাতাগুলোতেই প্রাথমিক আক্রমণ ঘটে। পরে ছত্রাক বাতাস কিংবা বৃষ্টির ফোঁটার মাধ্যমে উপরের পাতাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে এবং আশেপাশের উদ্ভিদগুলোও আক্রান্ত হয়। ছত্রাক উদ্ভিদের শীর্ষ পর্যন্ত পৌঁছালে পরবর্তী পর্যায়ে দানার খোসা ঝলসে দেয় যার ফলস্বরূপ কুঁচকানো দানা তৈরি করে এবং ফলন কমিয়ে দেয়। গুটিগুলো ঐ মৌসুমের শেষভাগে বাতাসের মাধ্যমে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়ে পাশের অন্যান্য ক্ষেতের উদ্ভিদগুলোকেও আক্রমণ করে। যার ফলে পরবর্তীতে চাষ করা ফসলগুলোতেও শুরু থেকেই সংক্রমণ ঘটে এবং উদ্ভিদের অনিয়মিত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে ছত্রাকের জীবনচক্র বন্ধ হয়ে যায়। ছত্রাকের বৃদ্ধির জন্য অনুকূল তাপমাত্রা হল ২০ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সুস্থ গাছের অথবা প্রত্যয়িত রোগমুক্ত বীজ উৎসের বীজ ব্যবহার করুন।
  • স্থানীয়ভাবে চাষযোগ্য সহনশীল অথবা লম্বা কাণ্ড বিশিষ্ট জাত ব্যবহার করুন।
  • দেরীতে পরিপক্ক হয় এরকম জাত ব্যবহার করুন বা মরশুমের শেষভাগে চারা রোপণ করুন।
  • বীজ বপনের সময়ে পরিমিত দূরত্ব বজায় রাখুন।
  • বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক পদার্থ মধ্যম হারে ও পরিমিত মাত্রায় সার ব্যবহার করুন।
  • সুস্থ চারা উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে পটাশিয়াম সারের প্রয়োগ নিশ্চিত করুন।
  • চারা গজানোর পরে ক্ষেত ও উদ্ভিদে রোগের কোন চিহ্ন আছে কিনা তা নিয়মিত যাচাই করুন।
  • পরিমিত মাত্রার আগাছানাশক প্রয়োগ নিশ্চিত করুন।
  • আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেনা এমন উদ্ভিদের সাথে ফসল আবর্তন করুন।
  • গভীরভাবে চাষ দিয়ে উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশগুলো মাটির নিচে চাপা দিন।
  • খড় এবং অন্যান্য উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশগুলোকে সরিয়ে নিন।
  • স্বেচ্ছায় জন্মানো উদ্ভিদগুলোকে সরিয়ে ফেলুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন