গম

গমের শীষ ঝলসানো রোগ

Fusarium graminearum

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • এ রোগটি ‍দু’ধরনের লক্ষণ দিয়ে চিহ্নিত করা যায়: চারা ঝলসানো এবং শীষ ঝলসানো।
  • প্রথমটির ক্ষেত্রে চারার কাণ্ডের গোড়ায় হালকা বাদামী বর্ণের জলছিটা দাগ পড়ে এবং চারাগুলো পচে ঝলসে যায়।
  • অন্যদিকে শীষ ঝলসানোর দুটি লক্ষণ হলো জলছিটা ও ঝলসানো বাদামী রঙের শীষ।
  • শুষ্ক ও আর্দ্র আবহাওয়ায় প্রচুর ছত্রাকের উপস্থিতির জন্য শীষের রং পরিবর্তন হয়ে গোলাপী থেকে হালকা বাদামী বর্ণ ধারণ করে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

3 বিবিধ ফসল

গম

উপসর্গ

শস্যের ভিন্নতা (এ জীবাণুর উল্লেখযোগ্য পরাশ্রয় প্রদানকারী ফসল হলো গম, জই এবং বার্লি), রোগ সংক্রমণের সময় এবং আবহাওয়ার ওপর রোগের লক্ষণ প্রকাশের তীব্রতা নির্ভর করে । এ রোগটি ‍দুই ধরনের লক্ষণ দিয়ে চিহ্নিত করা যায়: চারা ঝলসানো এবং শীষ ঝলসানো। প্রথমটির ক্ষেত্রে চারার কাণ্ডের গোড়ায় হালকা বাদামী বর্ণের জলছিটা দাগ দেখা যায় এবং চারাগুলো অঙ্কুরোদগমের সময় পচনশীল হয়ে যায়। যখন সংক্রমিত বীজ ঠাণ্ডা এবং ভেজা মাটিতে বপন করা হয়, তখন রোগের লক্ষণ মারাত্মকভাবে প্রকাশিত হয়। উদ্ভিদ বৃদ্ধির পরবর্তী পর্যায়ে গমের মুকুট মূল এবং কাণ্ডের গোড়ায় পচন ধরে। শীষ ঝলসানোর দুটি স্পষ্ট লক্ষণ হলো জলছিটে ও ঝলসানো বাদামী রঙের শীষ। শুষ্ক ও আর্দ্র আবহাওয়ায় প্রচুর ছত্রাকের উপস্থিতির জন্য শীষের রং পরিবর্তন হয়ে গোলাপী থেকে হালকা বাদামী বর্ণ ধারণ করে। গমের দানাগুলো কোঁচকানোএবং খসখসে রূপ লাভ করে। সম্পূর্ণ শীষ আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত দানা থেকে দানায় সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। কিছু শস্যে এ রোগের কারণে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ফলন হ্রাস হয়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

ফিউসারিয়াম গ্রামিনিয়েরাম (Fusarium graminearum) নামক ছত্রাক দমনের জন্য কয়েকটি জৈবিক নিয়ন্ত্রক দিয়ে সফল প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এ রোগের সংঘটন ও তীব্রতা কমানোর জন্য কিংবা ফলন হ্রাস প্রতিরোধের জন্য সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স (Pseudomonas fluorescens), ব্যাসিলাস মেগাথেরিয়াম (Bacillus megatherium) এবং ব্যাসিলাস সাবটিলিস (Bacillus subtilis ) প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া সহযোগে বালাইনাশক প্রয়োগ করে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে এবং এই প্রক্রিয়া ফুল ফোটার সময়ে প্রয়োগ করে রোগের তীব্রতা ও ফসল হ্রাসের পরিমান কমানো সম্ভব হয়েছে। বেশিরভাগ পরীক্ষাই চালানো হয়েছে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায়। ট্রাইকোডার্মা হারজিয়েনাম (Trichoderma harzianum) এবং ক্লোনোস্ট্যাকিস রোজিয়া (Clonostachys rosea) প্রভৃতি প্রতিযোগী ছত্রাক দিয়েও সফল নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। বীজকে ৫ দিন ধরে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শোধন করলে গম কিংবা বার্লির বীজ থেকে ছত্রাক দূরীভূত হয়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন । শীষ ঝলসানো রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ছত্রাকনাশক প্রয়োগের সময়সূচি নির্ধারণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফুল আসা পর্যায়ে ট্রায়াজল গোত্রের (মেটাকোনাজল, টেবুকোনাজল, প্রোথায়োকোনাজল এবং থায়াবেনডাজল) ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করলে উল্লেখযোগ্য ভাবে রোগ নিয়ন্ত্রণ হয় এবং দানায় মাইকোটক্সিন নামক বিষের পরিমাণ কমে। তবে মনে রাখবেন এ ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ ফসল কাটার দিনের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে।

এটা কি কারণে হয়েছে

এ রোগের বাহক ফিউসারিয়াম গ্রামিনিয়েরাম (Fusarium graminearum) নামক ছত্রাকটি গমের মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়টুকু বিকল্প আবাস কিংবা আশ্রয়দানকারী উদ্ভিদে, শস্যের খড়কুটায় সুপ্তাবস্থায় এবং মাটিতে জৈব পদার্থের মধ্যে অবস্থান করে। অনুকূল পরিবেশে ছত্রাকগুলো বীজগুটি তৈরি করে যেগুলো বাতাসে ভেসে বহুদুর যেতে পারে। এ জীবাণু কয়েক প্রজাতির নলি মাছি কর্তৃক ছড়ায় বলেও ধারণা করা হয়। ফুল আসা পর্যায়ে উদ্ভিদ এ রোগের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়। যখন ছত্রাক উদ্ভিদ কলাতে অঙ্কুরোদগম করে, তখন প্রাকৃতিক ছিদ্রের মধ্য দিয়ে জীবাণু উদ্ভিদের কিউটিকল ভেদ করে। উদ্ভিদের পরিবাহী কলাতে ছত্রাকের বৃদ্ধি হয় বলে গমের শীষে পুষ্টি এবং জলের সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে শীষ ঝলসে যায় এবং দানাগুলো কুঞ্চিত হয়। উপরন্তু দানার বিষাক্ততা সৃষ্টি হওয়ার ফলে বাজারমূল্য কমে যায়। ছত্রাকের জীবনচক্রের ওপর আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যেমন আলোক তীব্রতা, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত এবং পাতার ভেজা অবস্থা ইত্যাদির প্রভাব রয়েছে। ২০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং পাতার দীর্ঘকালীন ভেজা অবস্থা ছত্রাকের বৃদ্ধির পক্ষে খুবই অনুকূল।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সম্ভব হলে রোগ প্রতিরোধী সহনশীল জাত চাষ করুন।
  • রৌদ্রযুক্ত এবং বাতাস প্রবাহিত হয় এমন জায়গায় জমি নির্বাচন করুন।
  • বীজ বপনের সময় চারা থেকে চারার দূরত্ব বাড়িয়ে দিন- এতে আলো বাতাস প্রবাহ ভালো হবে।
  • রোগ অনাশ্রয়ী উদ্ভিদের সাথে শস্য আবর্তন করে চাষ করুন।
  • অপরিমিত হারে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ বর্জন করুন।
  • নিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি চাষ দিন কারণ এতে ছত্রাক সহজে জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারে।
  • জমি এবং জমির চারপাশ থেকে আগাছা এবং বিকল্প আবাস ধ্বংস করুন।
  • ফসল কাটার পর জমি থেকে উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ অপসারণ করুন এবং মাটিতে পুঁতে ফেলুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন