গম

গমের ব্লচ বা ফুস্কুড়ি রোগ

Zymoseptoria tritici

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • প্রথমদিকে রোগাক্রান্ত গমের পাতার নিচের দিকে হালকা হলুদ বর্ণের দাগ দৃশ্যমান হয়।
  • বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে দাগগুলো ডিম্বাকৃতির অথবা ডোরাকাটা আকৃতির হালকা থেকে ঘন বাদামি রঙ ধারণ করে।
  • ক্ষতের মাঝখান দিয়ে অতি ক্ষুদ্র কালো দাগ দৃশ্যমান হয়।
  • পরবর্তীকালে ক্ষতগুলো বৃদ্ধি পেয়ে বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং ক্রমশঃ সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে যায় ।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

গম

উপসর্গ

ব্লচ বা ফুস্কুড়ি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল , চারাগাছ গজানোর পরেই পাতার নিচের দিকে হালকা হলুদ বর্ণের ছোট ছোট দাগ দেখা যায় । দাগগুলো বড় হলে হালকা থেকে ঘন বাদামি বর্ণের ডিম্বাকৃতির অথবা ডোরাকাটা ফোসকার মতো হয় যা পত্রফলক পর্যন্ত প্রসারিত হয় । কখনো কখনো দাগ গাছের কাণ্ড থেকে ফসলের দানা পর্যন্ত দৃশ্যমান হয় কিন্তু ব্যাপকতা থাকে না। ক্ষতের মাঝখানে অতি ক্ষুদ্র কালো ফ্রুটিং বডি অসংখ্য দাগের আকৃতি প্রদান করে । পরবর্তীতে সমগ্র পাতা বড় রকমের মরিচাকৃতির ক্ষত দ্বারা আবৃত হয়ে যায় এবং ভেতরে সবুজ বর্ণ বিশিষ্ট হলুদ পরিধির চক্র দ্বারা ঘেরা কিছু কোষকলা অবশিষ্ট থাকে । শেষপর্যায়ে, গাছের পাতা শুকিয়ে যায় এবং মারা যায় । কালো ফ্রুটিং বডির অনুপস্থিতিতে অ্যালুমিনিয়ামের বিষক্রিয়া অথবা জিংক ঘাটতির কারণে একই রকম ফোসকা দেখা যেতে পারে । গমের বৃদ্ধির শেষ দিকে , আক্রান্ত হবার ২-৩ সপ্তাহ পরে লক্ষনগুলো প্রতিভাত হয় ।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ও নিয়ন্ত্রিত অবস্থানে এম. গ্রামিনিকোলা র বিরুদ্ধে জৈব নিয়ন্ত্রক সফলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে । ট্রাইকোডার্মা এবং কিছু প্রজাতির সিউডোমনাডস (pseudomonads) এবং ব্যাসিলাস (bacillus) ব্যাকটেরিয়া পাতার দাগ রোগের বিরুদ্ধে গমের গাছকে রক্ষা করার জন্য বা রোগের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন । এম. গ্রামিনিকোলা (M. graminicola)-র অনেক সদস্য ছত্রাকনাশকের প্রতি দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তোলে , বিশেষ করে স্ট্রবাইলুরিন (strobilurin) শ্রেণীর রাসায়নিকগুলোর ক্ষেত্রে। অর্থনৈতিক সীমা মূলতঃ প্রত্যাশিত ফলন হ্রাস, গমের বাজারমূল্য এবং ছত্রাকনাশকের খরচের ওপর নির্ভর করে। এজোলা গ্রুপের ছত্রাকনাশক সাধারণত পাতার স্প্রে হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কার্বক্সাইড (carboxamide), বা বেনজোফেনিনের (benzophenone) মতো ছত্রাকনাশক প্রতিরোধের বিকাশ প্রশমিত করে ।

এটা কি কারণে হয়েছে

এ রোগ মাইকোস্ফ্যারেল্লা গ্রামিনিকোলা (Mycosphaerella graminicola) নামক ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট হয় যা মাটির পৃষ্ঠের উপর ফসলের ধ্বংসাবশেষ, আশ্রয়দানকারী ঘাস , স্বেচ্ছায় জন্মানো উদ্ভিদ এবং শরৎকালে বপন করা ফসলের মধ্যে শীতকাল অতিবাহিত করে । বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে এবং বায়ু প্রবাহের মাধ্যমে ছত্রাকগুটি দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দেয় । পুরোনো পাতাতে প্রথম উপসর্গ দেখা যায় এবং যখনই ছত্রাকগুটি ঊর্ধ্বমুখীভাবে ছড়িয়ে পড়ে, রোগের উপসর্গ উপরের পাতাগুলোতে উপস্থিত হতে শুরু করে। যদি শীষসংলগ্ন পাতা এবং নীচের দুটি পাতা আক্রান্ত হয় তখন ফলন হ্রাস পায় । তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ১৫ থেকে ১৮ দিনে ছত্রাকের জীবনচক্র সম্পন্ন হয়। ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং জল বা স্থায়ী উচ্চ আর্দ্রতা এর সর্বোত্তম বৃদ্ধির জন্য অনুকূল । ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপমাত্রার নীচে জীবনচক্র থেমে যায় । একটি সফল সংক্রমণের জন্য, অন্তত ২০ ঘন্টা উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা অপরিহার্য। স্যাঁতস্যাঁতে বসন্ত এবং গ্রীষ্মকাল সংক্রমণের জন্য আদর্শ মরশুম ।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • আপনার এলাকায় সচরাচর পাওয়া যায় এমন রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করুন।
  • নামলা গম চাষ করুন।
  • উত্তম আলোবাতাস যাওয়া আসার জন্য চারার মধ্যবর্তী স্থানে পর্যাপ্ত জায়গা রাখুন।
  • বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন এবং নাইট্রোজেন পরিমিত পরিমানে ব্যবহার করুন।
  • নিয়মিতভাবে জমি পরিদর্শন করুন।
  • স্বেচ্ছায় জন্মানো ফসল এবং আগাছা দমন করুন।
  • ২-১ বছর পরপর পর্যায়ক্রমে এ রোগের জীবাণুকে আশ্রয় প্রদান করে না এমন ফসল লাগান।
  • ফসলের অপ্রয়োজনীয় অংশ যাতে মাটির নিচে চাপা পড়ে সেজন্য গভীরভাবে জমি চাষ দিন ।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন