অন্যান্য

ভুট্টার কালো ডগা পচা রোগ

Macrophomina phaseolina

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • পরিণত কাণ্ডের কোষকলা কালো হয়ে যায় এবং অভ্যন্তরীণ কোষকলাকে দগ্ধ বলে মনে হয়।
  • কাণ্ড মধ্যকের ভিতরে শক্ত আঁশযুক্ত কোষকলাগুলোতে ছত্রাকের কালো ক্ষুদ্র দাগ দেখা যায়।
  • গাছ অকালে পরিণত হয়ে যায় এবং কাণ্ড দুর্বল হয় ফলে, তা ভেঙ্গে যায় বা ঢলে পড়ে।
  • প্রথমে উপরের পাতাগুলো হলুদ হয় এবং পরে শুকিয়ে যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে


অন্যান্য

উপসর্গ

মাটিতে বসবাসকারী ছত্রাক চারাগাছের মূলে আক্রমণ করে এবং স্পষ্ট কোন লক্ষণ প্রকাশ করা ছাড়াই ক্রমান্বয়ে কাণ্ডে পৌঁছায়। পরবর্তীতে, পরিণত কাণ্ডের কোষকলা কয়লার মত কালো হয়ে দগ্ধ বলে মনে হয়। সংক্রমন আস্তে আস্তে পরিবহন কলাতে কলোনী আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং কাণ্ড মধ্যকের ভিতরে শক্ত আঁশযুক্ত কলাতে ছত্রাকের কালো ক্ষুদ্র দাগ দেখা যায়। পরিবহন কলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে যে লক্ষণ প্রকাশ পায়, তা জলের অভাবে গাছে যে লক্ষণ দেখা যায় তার অনুরূপ। গাছ অকালে পরিণত হয়ে যায় এবং কাণ্ড দুর্বল হয়ে ভেঙে যায় বা ঢলে পড়ে। উপরের পাতা হলুদ ও পরে শুকিয়ে যায়। মূলে বাদামী বর্ণের জল-সিক্ত ক্ষত থাকে। ব্যাপক আক্রমণ হলে ভুট্টা ক্ষেতের ৫০ শতাংশেরও বেশি গাছ ভেঙে যেতে পারে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

জৈবিক ব্যবস্থাপনা সমূহ যেমন খামার বাড়ির উচ্ছিষ্টাংশ, নিম তেলের নির্যা্‌স ও সরিষার তৈল ব্যবহার করে ম্যাক্রোফোমিনা ফ্যাসেওলিনা রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। উর্বরতা বাড়াতে কাউন এবং আগাছা ভিত্তিক কম্পোস্ট ব্যবহার করলে মাটিতে ছত্রাকের মাত্রা ২০-৪০ শতাংশ কমানো যায়। বীজ বপনের সময় ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ( ৫ কেজি পরিমান ২৫০ কেজি ভার্মিকম্পোস্ট বা খামার বাড়ির জৈব সার) প্রয়োগে সুফল দেয়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। যেহেতু প্রথম লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথে ক্ষতি হয়ে থাকে, সেহেতু পাতায় ছত্রাকনাশক কার্যকরী হয় না। ছত্রাকনাশক দ্বারা শোধিত ( যেমন, ম্যানকোজেব) বীজ চারাগাছের বৃদ্ধির সময়ে গাছকে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। প্রতি হেক্টরে ৮০ কেজি এম ও পি দুই ধাপে প্রয়োগ করলে এ ছত্রাকের প্রতি প্রতিরোধী হয়।

এটা কি কারণে হয়েছে

এ রোগ ম্যাক্রোফোমিনা ফ্যাসেওলিনা ছত্রাকের দ্বারা হয়ে থাকে, উষ্ণ এবং শুষ্ক আবহাওয়া এ ছত্রাকের জন্য উপযোগী। বাহক ফসলের অবশিষ্টাংশে বা মাটিতে এ ছত্রাক তিন বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। মূল এবং কাণ্ডের পরিবহন কলা আক্রান্ত হলে, জল এবং পুষ্টি উপাদানের পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে গাছের উপরের অংশ শুকিয়ে যায়, গাছ অকালে পরিণত হয় এবং কাণ্ড দুর্বল হয়। পরবর্তীতে পোকামাকড়, ক্ষতিগ্রস্ত মূল ও কাণ্ড এবং অন্যান্য রোগসমূহ এ ছত্রাকের বিস্তারের জন্য অনুকূল হয়। খরার কারনে ও মাটির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ( ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) এবং গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশের শেষ পর্যায়ে অতিরিক্ত সার প্রয়োগের ফলে রোগের লক্ষণ আরও প্রকট হয়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • খরা সহনশীল জাত চাষ করুন।
  • ঢলে পড়া প্রতিরোধী জাত চাষ করুন।
  • বপনের সময়কে সমন্বয় করতে হবে যাতে ফুল ধরার পরবর্তী পর্যায়টি ফসলের মরশুমের শুষ্কতম সময়ে না পড়ে।
  • চারার মধ্যবর্তী দূরত্ব বাড়াতে হবে।
  • বিশেষভাবে ফুল ফোটার পরবর্তী পর্যায়ে জমিতে পরিমিত পরিমানে সার দিন এবং অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের প্রয়োগ পরিহার করুন।
  • ফলনের হ্রাস কমাতে আগাম ফসল তুলুন।
  • তিন বছরের জন্য বাহক নয় এমন যেমন ছোট গম, জই, ধান, যব, রাই এ ফসলগুলো পর্যায়ক্রমিক ভাবে চাষ করুন।
  • গভীর চাষের মাধ্যমে ফসলের অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে ফেলুন।
  • মাটিতে ছত্রাকের পরিমাণ কমাতে এটি সাহায্য করে থাকে।
  • আরও একটি কার্যকরী উপায় হল জমিতে চাষ দেওয়ার পরে ফসলের অবশিষ্টাংশ রোদে শুকিয়ে ফেলা।
  • যেসব এলাকায় আক্রমণ বেশি হয়, সেসব এলাকায় চাষিদের ভুট্টা বপনের পূর্বে সবুজ সার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া যায়।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন