জোয়ার

ভুট্টার অ্যানথ্রাকনোজ ঘটিত পাতা ঝলসানো রোগ

Colletotrichum graminicola

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • গাছের পাতার শীর্ষভাগ কিংবা মধ্যশিরার নিকটবর্তী অঞ্চলে ছোট, ডিম্বাকার, জল-সিক্ত ক্ষতদাগ সৃষ্টি হয়।
  • পরে দাগগুলো বৃদ্ধি পেয়ে পরিধির দিকে বেগুনি বর্ণ এবং কেন্দ্রের দিকে তামাটে বাদামী বর্ণ ধারণ করে।
  • দাগগুলো একত্রে মিশে ছোপ ছোপ আকারে ঝলসে যায়।
  • গাছের অগ্রভাগ শুকিয়ে যায় এবং কাণ্ডে পচন ধরে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

2 বিবিধ ফসল

জোয়ার

উপসর্গ

ভুট্টা গাছের জাতের প্রকারভেদ, আবহাওয়া এবং জীবাণুর ক্ষমতার উপর এ রোগের প্রাদুর্ভাব নির্ভর করে। সংবেদনশীল জাতসমূহে এ রোগের সংক্রমণ তিনটি ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত যথা- পাতা ঝলসানো, গাছের অগ্রভাগ শুকিয়ে যাওয়া এবং কাণ্ডে পচন। রোগ সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে গাছের নিচের দিকের পাতার শীর্ষভাগ কিংবা মধ্যশিরার নিকটবর্তী অঞ্চলে ছোট, ডিম্বাকার, জল-সিক্ত দাগ সৃষ্টি হয়; পরবর্তী পর্যায়ে উপরের দিকের পাতাও সংক্রমিত হয়। দাগগুলো ক্রমশ স্বচ্ছ এবং পরিধির দিকে বেগুনি রং ও কেন্দ্রের দিকে তামাটে বাদামী রং ধারণ করে। দাগগুলো পরে একত্রে মিশে ছোপ ছোপ আকারে পুরো পাতাকে ঝলসিয়ে দেয় । গাছের বৃদ্ধির পরবর্তী পর্যায়ে রোগ সংক্রমণের অনুকূল পরিবশে থাকলে গাছের মৃত কোষকলাগুলোতে কালো বর্ণের উত্থিত দাগ দেখা যায়। কাণ্ডে এবং ডালপালায় ক্ষত থাকলে এ রোগের জীবাণু ভুট্টা গাছে আভ্যন্তরীণ কলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এবং যার ফলে অন্যান্য উপসর্গ যেমন আগা শুকিয়ে যাওয়া এবং কাণ্ডে পচন দেখা দেয়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

এ রোগের জন্য দায়ী ছত্রাক কোলেটট্রিকাম গ্রামিনিকোলা (Colletotrichum graminicola)-র বিরুদ্ধে কোন জৈবিক নিয়ন্ত্রণের কথা আমাদের জানা নেই। এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এমন জৈবিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কথা যদি আপনার জানা থাকে তাহলে অনুগ্রহপূর্বক আমাদেরকে জানান। আপনার কাছ থেকে কিছু জানার অপেক্ষায় রইলাম।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। এখন পর্যন্ত এ রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ছত্রাকনাশক নেই।

এটা কি কারণে হয়েছে

এ ছত্রাক মাটির অভ্যন্তরে গাছের অবশিষ্টাংশে বেঁচে থাকে, সেখান থেকে বাতাসের মাধ্যমে কিংবা বসন্তকালে বৃষ্টির ফোঁটার মাধ্যমে ভুট্টা গাছের নিচের দিকের পাতায় ছড়ায়। পাতায় সৃষ্ট দাগ থেকে ক্রমশ ছত্রাক উপরের পাতাসমূহে এবং কাণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে। কাণ্ডে ক্ষত থাকলে আভ্যন্তরীণ কোষ কলায় সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পায়। অনুকুল পরিবেশ থাকলে ক্রমশ অন্যান্য উপসর্গ যেমন ডগা শুকিয়ে যাওয়া এবং কাণ্ডে পচন দেখা দেয়। অপেক্ষাকৃত উষ্ণ তাপমাত্রা (২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস), বেশি সময় ধরে বিদ্যমান অধিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং ঘন ঘন বৃষ্টিপাত এ ছত্রাক এবং রোগের জীবনচক্র সম্পন্ন করতে সহায়তা করে। এ ছত্রাক চারা অবস্থায়ও ভুট্টা গাছকে সংক্রমিত করতে পারে কিন্তু সুষম সার প্রয়োগ করা সম্ভব হলে, এ রোগ তেমনটা ফলন হ্রাস করতে পারে না। দ্রুত বর্ধনশীল পাতা রোগের প্রতি বেশ সহনশীল।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সম্ভব হলে, স্থানীয় বাজার থেকে রোগ প্রতিরোধী সহনশীল জাত সংগ্রহ করুন।
  • এ রোগের জীবাণুকে আশ্রয় প্রদান করে না এমন শস্য (অ-ঘাস শস্য কিংবা সয়াবিন)-র সাথে একটি দীর্ঘমেয়াদি শস্য আবর্তনের পরিকল্পনা করুন।
  • রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ যেমন কাণ্ডে পচন ধরেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিয়মিত জমি পরিদর্শন করুন।
  • মাটির সুষম পুষ্টি এবং স্থির অম্ল মাত্রা বজায় রাখুন।
  • জমির জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত রাখুন।
  • জমির ভেতরে এবং আশেপাশের জায়গাসমূহ আগাছা মুক্ত রাখুন।
  • ভুট্টা সংগ্রহের পর জমিতে গভীর চাষ দিন এবং অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে ফেলুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন