কলা

কলার পানামা রোগ

Fusarium oxysporum

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • এ রোগে পুরাতন পাতা হলুদ হয় নেতিয়ে পড়ে।
  • পাতা বাদামী হয়ে যায় এবং অবশেষে পত্রবৃন্ত থেকে ঝরে পড়ে যায়।
  • কাণ্ড চিড়ে যায়।
  • কাণ্ডের উপরে হলদেটে থেকে লালচে আঁকাবাঁকা দাগ দৃশ্যমান হয়।
  • কাণ্ডের আভ্যন্তরীন কলাসমূহ বিবর্ণতা প্রকাশ করে।
  • অবশেষে, মাটির উপরে এবং নিচে থাকা উদ্ভিদ অংশ পচে যায় এবং সমগ্র গাছ মারা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

কলা

উপসর্গ

কলার জাত, জীবাণুর শক্তি এবং আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করে রোগ লক্ষণ কিছুটা হেরফের হতে পারে। এ রোগ প্রথমে পুরাতন পাতায় আক্রমণ করে এবং ধীরে ধীরে উপর দিকে পৌঁছে কচি পাতাকেও আক্রমণ করে। রোগের লক্ষণ হলো পত্র ও পত্রবৃন্ত হলদে ও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কাণ্ডের গোড়া থেকে ঝরে পড়ে যায়। রোগাক্রান্ত পাতা বাদামী ও শুষ্ক হয়ে যায় এবং অবশেষে পত্রবৃন্ত থেকে ঝরে পড়ে যায় ও কাণ্ডকে ঘিরে "স্কার্ট''-এর মতো অংশ তৈরি করে। কাণ্ডের উপরে হলদেটে থেকে লালচে আঁকাবাঁকা দাগ দৃশ্যমান হয়, বিশেষ করে গোড়ার দিকে বেশী করে এ দাগ দেখা যায়। প্রস্থচ্ছেদ করলে আভ্যন্তরীন টিস্যুতে লালচে থেকে কালচে-বাদামী বিবর্ণতা দেখা যায় যা ছত্রাকজনিত বৃদ্ধির লক্ষণ নির্দেশ করে এবং টিস্যুর পচন লক্ষ্য করা যায়। অবশেষে, মাটির উপরে এবং নিচে থাকা অংশ পচে যায় ও সমগ্র গাছই মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

রোগের কার্যকারিতা এবং তীব্রতা কমাতে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি বা ব্যাকটেরিয়া সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্সেস ছত্রাক মাটিতে প্রয়োগ করলে তা জৈবিক নিয়ন্ত্রণকারী হিসাবে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। যদি একবার চিহ্নিত হয় তবে অন্যান্য ছত্রাকঘটিত রোগের মতো কলার ফিউজারিয়াম উইল্ট রোগকে ছত্রাকনাশক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। নির্দিষ্ট ছত্রাকনাশকের তরল দ্রবণে (প্রতি ১০ লিটার জলে ১০ গ্রাম ছত্রাকনাশক) চারাগাছ চুবিয়ে নিয়ে রোপণের ৬ মাস পর থেকে শুরু করে প্রতি দ্বিতীয় মাসে একবার করে এ ছত্রাকনাশক দিয়েই গাছের গোড়ার দিকের মাটিকে ভিজিয়ে দেওয়ার সুপারিশ রয়েছে।

এটা কি কারণে হয়েছে

পানামা রোগ (এ রোগ ফিউজারিয়াম উইল্ট নামেও পরিচিত) ফিউজারিয়াম অক্সিপোরাম নামক ছত্রাকের উপপ্রজাতির আক্রমণে ঘটে থাকে যা মাটির বুকে কয়েক দশক ধরে টিকে থাকতে পারে। এ ছত্রাক শিকড়ের ক্ষুদ্র রোমের মাধ্যমে এমন এক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রবেশ করে যা হালকা, দুর্বল নিকাশী ব্যবস্থা সম্পন্ন মাটিতে আরো অনুকূল হয়। এ ছত্রাক স্বল্প দূরত্বে মাটির পৃষ্ঠদেশের জল, যানবাহন, যন্ত্রপাতি এবং জুতার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে রোগাক্রান্ত উদ্ভিদ অংশের মাধ্যমে বেশী দূরত্বে এ রোগ ছড়িয়ে পড়াটা একটা সাধারন ঘটনা। তাপমাত্রার বৃদ্ধি এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। পাতায় ক্লোরোসিস এবং উদ্ভিদের জীবনীশক্তির অভাব দেখা যায় যার কারণ হলো কাণ্ডের পরিবহন কলার ক্ষয়ের ফলে জল ও পুষ্টি জাতীয় উপাদানের পরিবহন বাধাপ্রাপ্ত হয়। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে, ফিউজারিয়াম উইল্ট রোগ কলার ক্ষেত্রে খুবই ধ্বংসাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • প্রত্যয়িত উৎস থেকে সুস্থ চারা ব্যবহার করুন।
  • সম্ভব হলে রোগ প্রতিরোধী প্রজাতির চারা ব্যবহার করুন।
  • ভাল নিকাশী ব্যবস্থা গড়ে তুলুন।
  • প্রতি দ্বিতীয় সপ্তাহে উদ্ভিদের তদারকি করুন।
  • রোগগ্রস্ত উদ্ভিদকে জায়গাতেই আগাছানাশক ব্যবহার করে মেরে ফেলুন।
  • মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কলাগাছ মূলসহ উপড়ে ফেলুন এবং ঐ জায়গাতেই আলাদা করে পুড়িয়ে ফেলুন।
  • আক্রান্ত স্থানের মাটি যাতে রোগবিহীন এলাকায় অসাবধানতাবশতঃ না চলে আসে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
  • চাষের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি , সরঞ্জাম এবং খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট ব্লিচ ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত করুন।
  • বেশী মাত্রায় সংক্রমিত হয়েছে এমন মাটিতে পরবর্তী ৩ থেকে ৪ বছর কলার চারা রোপণ করবেন না।
  • রোগের সংক্রমণ কমাতে পর্যায়ক্রমে আখ, ধান বা সূর্যমুখী চাষ করুন।
  • কলা চারার সারির মাঝে মাঝে চাইনিজ রসুনের কলি (অ্যালিয়াম টিউবারোসাম) চাষ করুন।
  • ছত্রাকের বৃদ্ধি যাতে প্রতিহত হয় সেজন্যে মাটিতে অণুজীবকে বেড়ে উঠতে দিন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন