Colletotrichum musae
ছত্রাক
এ ছত্রাকের আক্রমণে গাঢ়-বাদামী থেকে কালো দাবানো দাগ সংক্রামিত ফলের ত্বকের উপর ফুটে ওঠে। প্রাথমিক রোগের লক্ষণ কাঁচা ফলের ত্বকে ফুটে ওঠে এবং ত্বকের উপর পাণ্ডুর সীমারেখা দিয়ে ঘেরা গাঢ়-বাদামী থেকে কালো উভোত্তল, দাবানো ঝলসানো ক্ষত সৃষ্টি হয়। হলুদ হয়ে যাওয়া ফলে, এ ক্ষত বিভিন্ন আকারের হয় এবং একত্রিত হয়ে বড় কালো দাবানো দাগের সৃষ্টি করে। কমলা থেকে হালকা গোলাপী বর্ণযুক্ত ছত্রাক দাগের কেন্দ্রভাগে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফুলেল অংশে সংক্রমণের ফলাফল হিসাবে ফলের আগার দিকেও রোগের এ লক্ষণ শুরু হতে পারে। সংক্রামিত ফল অকালেই পেকে যায় এবং ফলের ভক্ষণযোগ্য অংশে ক্রমশঃ পচন ধরে। এমনকি ফল সংগ্রহের অনেক পরেও পরিবহন বা সংরক্ষণের সময়েও রোগের প্রথম লক্ষণ দেখা দিতে পারে ।
১০% আরবীয় আঠা (Arabic gum) সঙ্গে ১.০% কাইটোসান (কাইটিন থেকে প্রাপ্ত) সমৃদ্ধ জৈব-ছত্রাকনাশক ফসল চাষের সময়ে ফলের উপরে প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে সংরক্ষণের সময়ে তা রোগকে আংশিকভাবে প্রতিহত করতে পারে। উদ্ভিদ-জাত মিশ্রনের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে জীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করতে কিছুটা সাফল্য পাওয়া গিয়েছে এবং এ উপাদানগুলোর মধ্যে লেবুজাত নির্যাস (citric extracts,), জিঞ্জিবার অফিসিনেল রাইজোম নির্যাস ও এর সঙ্গে অ্যাকাসিয়া অয়লবিদা (Acacia albida), পলিয়ালথিয়া লঞ্জিফোলিয়া ও ক্লিরোডেনড্রাম ইনার্ম আছে। এ সমস্ত উপকারি উপাদানের প্রয়োগ সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ের আরও নিবিড় পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রয়োজন আছে। ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম জলে কাঁচা কলা ২ মিনিট চুবিয়ে নিলেও রোগের প্রকোপ কমে।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ফল চাষের সময় কলা ফলের ছড়াতে ম্যানকোজেব (০.২৫%) বা বেঞ্জিমিডাজোলস (০.০৫%) সমৃদ্ধ দ্রব্য স্প্রে করলে এবং পরে ফলের ছড়া প্লাস্টিক দিয়ে আবৃত করে দিলে বাইরের যে কোন রোগ থেকে মুক্ত রাখা যায়। ফলকে বেঞ্জিমিডাজোল সমৃদ্ধ ছত্রাকনাশকে চুবিয়ে নেওয়া যেতে পারে অথবা ফলের উপরে স্প্রে করা যেতে পারে। খাওয়ার উপযুক্ত রাসায়নিক বিউটাইলেটেড হাইড্রোক্সিয়ানিসোল [butylated hydroxyanisole (BHA)] দিয়ে ফলের উপর প্রলেপ দিলে তা ছত্রাকনাশকের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
ফোসকা রোগ কলিক্টোট্রিকাম মুসায়ি (Colletotrichum musae) নামক ছত্রাকঘটিত রোগ এবং এ ছত্রাক মৃত অথবা পচনশীল পাতা এবং এমনকি ফলের উপরে জন্মায়। ছত্রাকের রেণু বাতাস, জল ও কীটের মাধ্যমে এবং কলা ফল খায় এমন পাখি ও ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছত্রাক ফলের ত্বকের উপর ক্ষুদ্র ক্ষতস্থানের মাধ্যমে প্রবেশ করে এবং পরে সেখানে অঙ্কুরিত হয়ে রোগের প্রথম প্রকাশ ঘটায়। উচ্চ তাপমাত্রা, উচ্চ আর্দ্রতা ও মাঝে মাঝেই বৃষ্টিপাত রোগ সংক্রমণের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলে। পরিপক্ক কলাতেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এ রোগটি কলার অন্যান্য রোগের মধ্যে অন্যতম যা ফল পরিবহন এবং সংরক্ষণের সময়ে ফলের গুণমানের ক্ষতি করে।