কলা

হলুদ ও কালো সিগাটোকা রোগ

Mycosphaerella sp.

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • প্রথমে, পাতার উপরে বাদামী দাগ দেখা যায়।
  • পত্রশিরার সমান্তরালে হলুদাভ আভাযুক্ত সংকীর্ণ, কালো দাগের আবির্ভাব ঘটে।
  • বৃহৎ জায়গা জুড়ে মৃত কোষকলার আধিক্য দেখা যায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

কলা

উপসর্গ

উভয়প্রকার সিগাটোকা ছত্রাকজনিত রোগের প্রথম লক্ষণ দেখা যায় তৃতীয় ও চতুর্থতম খোলা পাতায়। ক্ষুদ্র, হালকা হলদে দাগ ( ১-২ মিলিমিটার দীর্ঘ) পাতার উপরের পৃষ্ঠতলের কিনারায় উপশিরার সমান্তরালে আবির্ভূত হয় (হলুদ সিগাটোকা) এবং পাতার নিচের পৃষ্ঠে লালচে বাদামী ছিট ছিট দাগ দেখা যায় (ব্ল্যাক সিগাটোকা)। এ দাগ বৃদ্ধি পেয়ে পরে চরকার টাকুর মতো আকৃতির সংকীর্ণ, বাদামী বা গাঢ় সবুজ বর্ণের দাগে রূপান্তরিত হয়। এ ক্ষতগুলো বিস্তার লাভ করে পুনরায় শিরার সমান্তরালে অবস্থান করে এবং আয়তাকার মরিচা লাল বর্ণের দাগে পরিণত হয় যার কেন্দ্রস্থল জল-সিক্ত ও হলুদাভ আভা যুক্ত থাকে (৪ থেকে ১২ মিলিমিটার দীর্ঘ)। এই দাগের কেন্দ্রস্থল ধীরে ধীরে ধূসর বাদামী থেকে বাদামী বর্ণে রূপান্তরিত হয় যা পাতার ঐ অংশে মৃত কোষকলার লক্ষণ। পাতার কিনার বরাবর লক্ষ্য করলে দেখা যায় এ দাগগুলো সমবেত হয়ে বৃহৎ কালো বা বাদামী ক্ষতস্থানে পরিণত হয় যা হলুদাভ আভাযুক্ত অঞ্চল দিয়ে ঘেরা থাকে। পাতায় চিড় ধরলে তা খসখসে বলে মনে হয়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

ট্রাইকোডার্মা অ্যাট্রোভিরিডি সংঘঠিত জৈব-ছত্রাকনাশকের এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা রয়েছে এবং জমিতে সম্ভাব্যক্ষেত্রে হাতেকলমে প্রয়োগের পরীক্ষাও চলছে। গাছের ছাঁটাইকৃত অংশে বোর্দো মিশ্রণ স্প্রে করা হলে, তা রোগের সংক্রমণ রোধ করতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। রোগের বিস্তার কম থাকতেই ম্যানকোজেব, ক্যালিক্সিন বা ক্লোরোথ্যালোনিল সমৃদ্ধ ছত্রাকনাশক পত্রপল্লবে স্প্রে হিসাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রোপিকোনাজোল , ফেনবুকোনাজোল বা অ্যাজোক্সিস্ট্রোবিন পর্যায়ক্রমিকভাবে ব্যবহার করলেও ভালো কাজ করে। পর্যায়ক্রমিকভাবে ব্যবহার, ছত্রাকনাশকের বিরুদ্ধে ছত্রাকের প্রতিরোধ গড়ে না ওঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপৃর্ণ।

এটা কি কারণে হয়েছে

হলুদ ও কালো সিগাটোকা রোগ মাইকোস্ফ্যারেল্লা sp. নামক ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং এ রোগ গোটা পৃথিবী জুড়েই পরিলক্ষিত হয়। এ রোগ কলার সব থেকে ধ্বংসাত্মক রোগগুলির মধ্যে অন্যতম রোগ। এ ছত্রাক মৃত বা জীবন্ত উদ্ভিদ কোষকলায় বেঁচে থাকে এবং ছত্রাকরেণু বা বীজগুটি উৎপন্ন করে যা বাতাস বা বৃষ্টির ঝাপটার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। রোগ ছড়ানোর অন্য আর একটি উপায় হলো সংক্রামিত উদ্ভিদের তাজা অংশ, উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ বা সংক্রামিত ফলের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর। সমতলপৃষ্ঠ থেকে অতিউচ্চ স্থানে বা ঠান্ডা আবহাওয়ায়, অথবা গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্থান যেখানে উষ্ণ পরিবেশ ও উচ্চ আপেক্ষিক তাপমাত্রা বজায় থাকে সেখানে বর্ষাকালে এ রোগ হতে দেখা যায়। এ ছত্রাকের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা প্রায় ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং কচি পাতা এ রোগের আক্রমণের প্রতি ভীষণ অসহনশীল। এ রোগে গাছের উৎপাদনশীলতা কমে যায়, যার ফলস্বরূপ ছড়ার ফলের আকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফল পাকতে যে সময় লাগে তার থেকে কম সময়ে ফল পেকে যায়।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • রোগ প্রতিরোধী জাতের চারাগাছ ব্যবহার করুন (মনে রাখুন এর কারণে ফলের স্বাদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে)।
  • ভারী মাটি যেমন ভারী কাদামাটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং মাটিতে যাতে আর্দ্রভাব বেশী না থাকে তার জন্যে ভাল নিকাশী ব্যবস্থা রাখুন।
  • সকালের সূর্যের আলো পর্যাপ্ত পরিমানে পেতে পারে বা সবসময়ে বাতাসের প্রবাহ অক্ষুণ্ণ থাকে এমন জায়গা রোপণের জন্য নির্বাচন করুন কারণ তা যতটা সম্ভব পাতাকে শুষ্ক রাখে।
  • দুটি চারাগাছের মধ্যে পর্যাপ্ত জায়গা ছেড়ে রাখুন যাতে ভালোভাবে বায়ু চলাচল করতে পারে।
  • মাথার উপর থেকে জলসেচ করবেন না।
  • চাষের জমি ও এর আশপাশ থেকে আগাছা পরিষ্কার করুন।
  • গাছ যাতে সুষম পুষ্টি পায় সেদিকে নজর রাখুন।
  • রোগের সংক্রমণ কম রাখতে উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সার ব্যবহার করুন।
  • মাটিতে ছত্রাক যাতে বৃদ্ধি না পেতে পারে সেইজন্য নাইট্রোজেনের উৎস হিসাবে ইউরিয়া ব্যবহার করুন।
  • সংক্রামিত পাতা কেটে ফেলে চাষের জমি থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দিন অথবা গর্ত করে পুঁতে দিন।
  • গাছের অবশিষ্টাংশ অপসারিত করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন