Colletotrichum gloeosporioides
ছত্রাক
ফোস্কা রোগ পাতা ও বৃন্তের উপরে দেখা যেতে পারে কিন্তু প্রধানতঃ এটি ফলের রোগ। পাতার উপরে গাঢ় বর্ণের কিনারাসহ ধূসর থেকে বাদামী দাগ ফুটে ওঠে এবং এক ধরনের হলুদাভ আভা এগুলিকে ঘিরে থাকে। এই দাগগুলি পরে আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং একত্রে সমবেত হয়ে প্রমান আকারের মৃত শুষ্ক কোষকলাযুক্ত অঞ্চল গড়ে তোলে। ফলের গায়ে প্রথমে ছোট হালকা বর্ণের দাগের আবির্ভাব হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দাগগুলি যথেষ্ঠ পরিমানে আকারে বেড়ে ওঠে (৫ সে.মি. পর্যন্ত) এবং গাঢ় বর্ণের গোলাকার জলসিক্ত বা সামান্য উত্থিত ধরনের ক্ষতে রূপান্তরিত হয়। ক্ষতের মধ্যে গোলাপী থেকে কমলা বর্ণের দাগ সমকেন্দ্রিকভাবে বৃদ্ধি পায়। সবথেকে ছোট, লালচে-বাদামী ও দাবানো দাগ (২ সে.মি. পর্যন্ত) যা “চকোলেট স্পট” নামে পরিচিত, দেখা যায়। ফল অকালে ঝরে পড়ার প্রবণতা দেখায়। এই উপসর্গগুলি সাধারণতঃ চাষের মরশুম শেষ হওয়ার পরে দেখা দেয়, বিশেষ করে ফলকে যদি হিমায়িত করে রাখা হয়।
ব্যাসিলাস সাবটাইলিস (Bacillus subtilis) বা ব্যাসিলাস মাইলোলিকিউফ্যাসিয়েন্স (Bacillus myloliquefaciens) সমৃদ্ধ জৈব-ছত্রাকনাশক অনুকূল আবহাওয়ায় প্রয়োগ করলে তা ভালোই কাজ করে। উষ্ণ জলে বীজ বা ফল ডুবিয়ে রাখলে (৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২০ মিনিট পর্যন্ত) ছত্রাকের অবশিষ্ট অংশও এতে নষ্ট হয়ে যায় এবং চাষের জমিতে বা পরিবহনের সময়ে পুনরায় এই রোগ ছড়িয়ে পড়া প্রতিহত করে।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। অ্যাজোক্সিস্ট্রোবিন (azoxystrobin), ক্লোরোথ্যালোনিল (chlorothalonil) বা কপার সালফেট (copper sulfate) সমৃদ্ধ ছত্রাকনাশক নিয়মিতভাবে স্প্রে করলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। এই যৌগগুলি বীজের উপরে প্রয়োগ করলেও সুফল পাওয়া যায়। সর্বোপরি, মরশুম শেষ হওয়ার পরে সমুদ্রপাড়ের বাজারে বিক্রি হওয়ার উপযুক্ত ফল জাহাজে তোলার আগে খাওয়ার উপযুক্ত মোম ও ছত্রাকনাশক একত্রে ফলের উপরে প্রয়োগ করলে তা রোগের প্রসারকে কমায়।
সারা পৃথিবীতে ফোস্কা রোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রোগ। এই রোগ সৃষ্টি হয় মাটিতে জন্মানো ছত্রাক কালেক্টোট্রিকাম গ্লোয়োস্পোরিওয়েডস (Colletotrichum gloeosporioides)-এর মাধ্যমে। ছত্রাক বীজের মধ্যে বা মাটিতে পড়ে থাকা ফসলের অবশিষ্টাংশের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে। যখন পরিস্থিতি অনুকূল থাকে, এই রোগ বাতাস ও বৃষ্টির ফোঁটার মাধ্যমে অটুট, অক্ষত ও অপরিপক্ক কাঁচা ফলে ছড়িয়ে যায়। এই জীবাণুর আশ্রয়দাতা বিকল্প উদ্ভিদ গুলির মধ্যে আম, কলা ও অ্যাভোকাডো প্রধান। সহনীয় তাপমাত্রা (সর্বোত্তম তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস), অত্যন্ত বেশী আর্দ্রতা (৯৭% বা তার বেশী) ও কম মাত্রার পি এইচ (ph) (৫.৮ থেকে ৬.৫) সমৃদ্ধ চাষের জমি এই রোগের বিস্তারের পক্ষে অনুকূল। শুষ্ক আবহাওয়া, বেশী মাত্রায় সৌর বিকিরণ বা চরমতম পর্যায়ের তাপমাত্রা এই রোগের বৃদ্ধিকে রোধ করে। আক্রান্ত ফল একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পরিপক্ক হয়ে উঠলে এই রোগের জীবাণুর জীবনচক্র সম্পূর্ণ হয়।