Puccinia graminis
ছত্রাক
সংক্রমণের ৭-১৫ দিনের মাথায় প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। কাণ্ড, পাতার খোলে, পাতা এবং মাঝেমধ্যে পুষ্পমঞ্জরীতেও লালচে-বাদামি, ডিম্বাকৃতি থেকে লম্বাকৃতির ফুস্কুড়ি ছড়িয়ে পড়ে। মূলত কাণ্ড, ও পাতার খোল আক্রান্ত হয়। পাউডারের ন্যায় ফুস্কুড়িগুলো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও সংযুক্ত হয়ে বৃহৎ জায়গা দখল করে নেয়। গাছের বহিঃত্বকে ক্ষতির ফলে আক্রান্ত স্থানগুলো খসখসে হয়ে যায়। আক্রমণ মাত্রাধিক হলে কাণ্ড দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং প্রবল বৃষ্টি ও বাতাসে গাছ ঢলে পড়ে। ছত্রাকটি জল ও পুষ্টি পরিবহনে বাধা দেয় এবং উদ্ভিদরস নষ্ট করে। ফলে গাছের সতেজতা কমে যায় এবং দানায় পুষ্টি সরবরাহ হ্রাস পায়। দানাগুলো কুঁচকে যায়, যার ফলে উৎপাদন হ্রাস পায়। সম্পূর্ণ গাছের দুর্বল হয়ে যাওয়া অন্যান্য রোগজীবাণুর আক্রমনের কারন হয়। দানা পুরোপুরি পূর্ণ হওয়ার আগেই রোগটি মাত্রাধিক হলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আমরা দুঃখিত যে, পুচিনিয়া ট্রাইটিসিনার (Puccinia triticina) বিরুদ্ধে কোনও বিকল্প নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে কিনা তা এখনো আমাদের অজানা। যদি আপনি এ রোগের বিরুদ্ধে বিকল্প কোন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করে সফল হয়ে থাকেন তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই।
সম্ভাব্যক্ষেত্রে, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ছত্রাকনাশক যেমন, টেবুকোনাজল (tebuconazole) অথবা প্রথায়োকোনাজল (prothioconazole) দিয়ে ছত্রাক নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। প্রতিরোধমূলক বাবস্থা হিসেবে ট্রায়াজোলস (triazoles) এবং স্ট্রোবিলিউরিন্স (strobilurins) জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। স্ট্রোবিলিউরিন্সে প্রতিরোধমূলক কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
এ রোগের লক্ষণগুলো সৃষ্টি হয় ছত্রাক Puccinia graminis এর সংক্রমণের কারনে, এটি একটি সার্বক্ষণিক নির্ভরশীল পরজীবী যার বেঁচে থাকার জন্য জীবিত উদ্ভিদ কোষকলা প্রয়োজন। এ ছত্রাকের রেণুগুলো বাতাসের মাধ্যমে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এবং কোথাও জলের সংস্পর্শ পেলেই অঙ্কুরিত হয়। রোগ ছড়ানোর অন্যান্য মাধ্যমগুলো হচ্ছে চাষের যন্ত্র, জিনিসপত্র, পোশাক, জুতো এবং যানবাহন । এ ছত্রাক পত্ররন্ধ দিয়ে প্রবেশ করে গাছকে আক্রমন করে, যে প্রক্রিয়াটির জন্য প্রয়োজন হয় কম তীব্র আলো (যেমন- খুব সকালে কিংবা বিকেলের শেষ দিকে) এবং বৃষ্টি বা শিশিরের কারনে দীর্ঘ সময় ধরে পাতার সিক্ত অবস্থা। দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরম (২৫ ডিগ্রি-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং শিশিরস্নাত রাত (১৫ ডিগ্রি- ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কাণ্ডের মরিচা পড়া রোগের জন্য খুবই অনুকূল। এ রোগ সাধারণত গমে হয় তবে অন্যান্য কিছু উদ্ভিদও আক্রান্ত হয় কিংবা পোষক হিসেবে কাজ করে (যেমন- দানাশস্য, বিভিন্ন ঘাস, বারবেরিস প্রজাতির উদ্ভিদ ইত্যাদি)।