গম

গমের পাতার রাস্ট রোগ

Puccinia triticina

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • পাতা, পত্রবৃন্তের আবরণ এবং খোসায় অনেক ছোট ছোট লালচে কমলা থেকে বাদামী ফুসকুড়ির মত দাগ দেখা যায়।
  • রোগ প্রতিরোধে অক্ষম এমন উদ্ভিদের ক্ষেত্রে, প্রাথমিকভাবে খোসার চারপাশে ছোট ছোট ফুসকুড়ির মত দাগ এবং ফ্যাকাসে সবুজ বা হলুদ অস্বচ্ছাকার বলয়ের মত দাগ দেখা যায়।
  • অধিক রোগ প্রতিরোধী গমের জাতের ক্ষেত্রে, কমলা ফুসকুড়িগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট হয় এবং ক্লোরোটিক বা নেক্রোটিক দাগযুক্ত ক্ষেত্র দিয়ে আবদ্ধ থাকে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

গম

উপসর্গ

পাতার রাস্ট গমের সবচেয়ে প্রচলিত রাস্ট রোগ। এ রোগের লক্ষণসমূহ সংক্রমিত উদ্ভিদের সংবেদনশীলতার উপর নির্ভর করে। পাতার উভয় পৃষ্ঠে, পত্রবৃন্তের আবরণ এবং খোসায় ছোট ছোট লালচে কমলা থেকে বাদামী ফুসকুড়ির উপস্থিতি এ রোগের উপসর্গ প্রকাশ করে। এ ফুসকুড়ির মত দাগগুলোর ব্যাস ১.৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে, সামান্য উত্থিত এবং গোলাকার থেকে আয়তাকৃতি হয়। রোগ প্রতিরোধে অক্ষম জাতের ক্ষেত্রে, প্রথম পর্যায়ের ফুসকুড়িকে ঘিরে খোসার চারপাশে ছোট ছোট দ্বিতীয় পর্যায়ের ফুসকুড়ির মত দাগ এবং ফ্যাকাসে সবুজ বা হলুদ অস্বচ্ছাকার বলয়াকৃতি দাগ দেখা যায়। ধীরে ধীরে এ রঙ গাঢ় বাদামী বা কালোতে পরিবর্তিত হয়। অধিক রোগ প্রতিরোধী জাতের ক্ষেত্রে, কমলা রঙের ফুসকুড়ি অপেক্ষাকৃত ছোট হয় এবং ক্লোরোটিক বা নেক্রোটিক দাগযুক্ত ক্ষেত্র দিয়ে আবদ্ধ থাকে। এ সংক্রমণ গমের কোষের ক্ষতি করে, উদ্ভিদে জলের চাপ কমে, এবং গমের উৎপাদনশীলতা কমায়। এ লক্ষণসমূহ যখন কম ফুল ফোটা এবং দানার খর্বাকৃতি হওয়ার মতো লক্ষণের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন ফলন প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম হয়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

আমরা দুঃখিত যে,পাকচিনিয়া ট্রিটিসিনার (Puccinia triticina) বিরুদ্ধে কোন বিকল্প নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা আছে কিনা তা এখনো আমাদের অজানা। যদি আপনি এ রোগের বিরুদ্ধে বিকল্প কোন নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা প্রয়োগ করে সফল হয়ে থাকেন তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমত সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। এ রোগ এড়ানোর জন্য প্রোপিকোনাজল (propiconazole) বা ট্রাইয়াজোল (triazole) সমৃদ্ধ ছত্রাকনাশক প্রতিশোধক হিসাবে পাতায় স্প্রে করা যেতে পারে। কীভাবে পণ্যটি ব্যবহার করতে হবে তার নির্দেশাবলী সাবধানতার সাথে পড়ুন। ছত্রাকের প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে গড়ে উঠতে না পারে সেজন্যে ছত্রাকনাশকটি কোন সময়ে ও কি মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে তা মেনে চলুন।

এটা কি কারণে হয়েছে

এ রোগ পাকচিনিয়া ট্রিটিসিনা (Puccinia triticina) নামক ছত্রাক দ্বারা সৃষ্টি হয়, যা উদ্ভিদের টিস্যুর জন্য একটি অপরিহার্য পরজীবি। এর জীবনচক্র সম্পন্ন করতে গম গাছ বা পরাশ্রয় প্রদান করে এরকম বিকল্প উদ্ভিদের প্রয়োজন হয়। এ ছত্রাকের রেণু বাতাসের প্রবাহে তাদের উৎসস্থল থেকে কয়েকশত কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এর অঙ্কুরোদ্গমের জন্য উচ্চ আর্দ্রতা বা দীর্ঘকালীন সময়জুড়ে পাতার আর্দ্রতা এবং ১০° সেলসিয়াস থেকে ৩০° সেলসিয়াস পর্যন্ত (১৬ ডিগ্রি থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হল আদর্শ) তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন হয়। এ অবস্থায়, প্রথমবার পাতার সংস্পর্শে আসার ৩০ মিনিটের মধ্যে এর রেণুর অঙ্কুরোদ্গম সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে। নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সারের উচ্চমাত্রার প্রয়োগও অনুকূল হয়। ছত্রাকটি পাতা বা পত্রবৃন্তের আবরণে থাকা পত্ররন্দ্র দিয়ে উদ্ভিদের ভেতরে প্রবেশ করে। জমির অবস্থার উপর নির্ভর করে, ছত্রাকটি ৭ থেকে ৮ দিনে তাদের জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারে। দানাশস্য পরিবারে পাকচিনিয়া ট্রিটিসিনার বিভিন্ন ধরণের পরাশ্রয় প্রদানকারী বিকল্প উদ্ভিদ রয়েছে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সহজলভ্য হলে টেঁকসই এবং রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করুন।
  • শীতকালীন গম নির্ধারিত সময়ের পরে এবং গ্রীষ্মকালীন গম নির্ধারিত সময়ের পূর্বে বপন করুন।
  • স্বেচ্ছায় জন্মানো আগাছা অপসারণ করুন।
  • রোপণ করার সময় চারাগাছগুলির মধ্যে যথেষ্ঠ পরিমানে জায়গা ছেড়ে রাখুন।
  • শস্য পর্যায়ক্রমে চাষ করার জন্য ফসল-চক্রের পরিকল্পনা করুন এবং তা বাস্তবায়িত করুন।
  • জমিতে পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার প্রয়োগ করুন।
  • ফসল উত্তোলনের পর শস্যের অবশিষ্টাংশ অপসারণ ও ধ্বংস করে ফেলুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন