চিনাবাদাম

চিনাবাদামের রাস্ট রোগ

Puccinia arachidis

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • প্রথমে, পাতার তলদেশে মরিচা পরা ফুস্কুড়ি দেখা দেয়।
  • মারাত্মকভাবে আক্রান্ত পাতার দুদিকেই মরিচা পরা ফুস্কুড়ি ছেয়ে যায়।
  • অবশেষে পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং শুকিয়ে যায়।
  • পত্রমোচনের ফলে প্রচুর ফসলহানি ঘটতে পারে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

1 বিবিধ ফসল

চিনাবাদাম

উপসর্গ

চীনাবাদামের রাস্ট কমলাটে বাদামী বর্ণের (মরিচারঙা) সূক্ষ্ম ফুস্কুড়ি হিসাবে সাধারণত পাতার নিচের দিকে দেখা দেয়। ফুসকুড়িগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্লোরোফিলের অভাবে হলুদ হয়ে যাওয়া বলয় দ্বারা ঘেরা থাকে। এতে পাতা এবং ফসলের বৃদ্ধি গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। রোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে, মারাত্মকভাবে আক্রান্ত পাতাগুলোর উপরে ও নিচে উভয় পাশেই মরিচাযুক্ত ফুস্কুড়ি দেখা যায়, পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং মরিচার মতো দাগে আবৃত হয়, এবং অবশেষে শুকিয়ে যায়। বীজকোষ, কাণ্ড ও পত্রবৃন্তে লম্বাটে, লালচে বাদামী বর্ণের (এবং পরবর্তীতে কালো বর্ণের) ফুস্কুড়ি দেখা দিতে পারে। এর ফলে পাতা ঝরে যেতে পারে। এ রোগের ফলে শুঁটি এবং পশু খাদ্যের ফলন এবং তেলের মান গুরুতর ভাবে হ্রাস পেতে পারে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

বিভিন্ন জৈব দ্রব্যের ব্যবহার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। স্যালভিয়া অফিসিনালিস (Salvia officinalis) এবং পটেনশিলা ইরেক্টা (Potentilla erecta) উদ্ভিদের নির্যাস প্রয়োগ পাতার উপরে ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যান্য উদ্ভিদের নির্যাস যেমন তিসির তেল এবং চীনাবাদামের তেলও এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে কার্যকর।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমত সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। রোগের পরবর্তী ধাপগুলোতে রাসায়নিক নিয়ন্ত্রন অকার্যকর হতে পারে। যদি ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে, তবে ম্যানকোজেব (mancozeb), কার্বেনড্যাজিম (carbendazim) অথবা প্রোপিকোনাজোল (propiconazole) সংগঠিত উপাদান স্প্রে করুন। রোগের প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই সরাসরি ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে এবং ১৫ দিন পর আবার এ প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করতে হবে।

এটা কি কারণে হয়েছে

চীনাবাদামের রাস্ট মাটিতে থেকে যাওয়া ফসলের অবশিষ্টাংশে বা চীনাবাদামজাতীয় অন্যান্য যে সব উদ্ভিদ বিকল্প পরাশ্রয় প্রদানকারী হিসাবে কাজ করে সেসব উদ্ভিদে বেঁচে থাকতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিনাবাদামের নিচের দিকের পাতাগুলোতে ছত্রাকরেণু গঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ রেণু বাতাসের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। ছত্রাকটির বৃদ্ধির জন্য অনুকূল আবহাওয়ায় যেমন উষ্ণ তাপমাত্রা (২১ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং ভেজা ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া (কুয়াশা বা রাতে তীব্র শিশিরপাত) আক্রান্ত দাগগুলো দ্রুত ছড়িয়ে যায়। এতে অঙ্কুর ও শিকড়ের বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়, ফলে উদ্ভিদ খর্বাকৃতি হয়। জমিতে উচ্চ মাত্রায় ফসফরাস সার প্রয়োগ চীনাবাদামের রাস্টের বৃদ্ধি কমাতে পারে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • স্বাস্থ্যবান চারা বা প্রত্যয়িত উৎস থেকে বীজ সংগ্রহ করুন।
  • রোগপ্রতিরোধী জাত রোপণ করুন।
  • বপনের সময় দুইটি উদ্ভিদের মাঝের দূরত্ব বাড়িয়ে উচ্চ আর্দ্রতা রোধ করুন।
  • ক্ষেতের অভ্যন্তরে এবং বাইরে উৎপন্ন আগাছা ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎপন্ন অন্যান্য উদ্ভিদ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • ক্ষেতের পাশে পরাশ্রয় প্রদানকারী অন্য কোন বিকল্প উদ্ভিদ বপন করা থেকে বিরত থাকুন।
  • রাস্ট রোগের বিস্তারের হার কমাতে প্রচুর পরিমানে ফসফরাস সার প্রয়োগ করুন।
  • আক্রান্ত উদ্ভিদ ও অন্যান্য বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলুন বা কর্ষণের মাধ্যমে মাটির নিচে পাঠিয়ে দিন।
  • প্রতি তিন বা চার বছর অন্তর পরাশ্রয় প্রদান করে না এমন ফসল চাষের মাধ্যমে ফসল-চক্র অনুসরণ করুন।
  • পরপর কয়েকবার চীনাবাদামের আবাদের পর দীর্ঘমেয়াদিভাবে জমি অনাবাদী করে ফেলে রাখার পরিকল্পনা করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন