Glomerella tucumanensis
ছত্রাক
সংক্রামিত ডগার বর্ণ ফ্যাকাসে হয়ে যায় ও পৃষ্ঠদেশে বড় আকৃতির লাল বর্ণের ফোস্কা দেখা যায় এবং জাতের উপর নির্ভর করে প্রকোপ কম-বেশী হতে পারে। কাণ্ডের লম্বচ্ছেদ করার পর সাদা তরুমজ্জার পরিবর্তে লাল পচা কোষকলা দেখা যায়। রোগ প্রতিরোধী জাতে রোগাক্রান্ত অংশ মধ্যপর্বের ভিতর সীমাবদ্ধ থাকে। রোগের বিস্তার যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে তরুমজ্জার ভিতরকার অংশ ফাঁপা হতে থাকে এবং শক্ত আঁশসমূহ ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে থাকে। পাতা নেতিয়ে পড়ে এবং কুঁচকে যাওয়া শুরু করে। গাছ থেকে দুর্গন্ধ আসা শুরু হয় এবং প্রতিকূল পরিবেশে সহজেই কাণ্ড ভেঙ্গে যায়। পাতার মধ্যশিরা বরাবর ছোট ডিম্বাকৃতি লাল অথবা বড় আকারের ক্ষত সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং মাঝেমধ্যে তা সম্পূর্ণ পাতা জুড়ে বিস্তৃত হয়। পাতার খোলের উপর লাল বর্ণের ছোপ ছোপ দাগ হতে পারে এবং মাঝে মধ্যে পাতার পত্রফলকে ছোট ঘন কালো দাগ দেখা যেতে পারে।
বীজ আখে ছত্রাক জীবাণু নাশ করতে অথবা লালপচা রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে গরম জলে শোধন (উদাহরণস্বরূপ ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২ ঘণ্টা) করা যেতে পারে। এছাড়াও বীজ শোধন করতে জৈবিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মধ্যে ছত্রাক প্রজাতি চিটোমিয়াম এবং ট্রাইকোডার্মা এবং ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি সিউডোমোনাস অন্তর্ভুক্ত। উপরোক্ত দ্রব্যাদি সমন্বিত দ্রবন পত্রপল্লবের উপর স্প্রে করলে রোগের বিস্তার হ্রাসে তা অত্যন্ত কার্যকরী।
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ৫০-৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপী ছত্রাকনাশক (উদাহরণস্বরূপ থিরাম) মিশ্রিত গরম জলের দ্রবনে বীজ শোধন করুন। মাঠ পর্যায়ে রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা তেমন কার্যকর নয় এবং তা সুপারিশ করা উচিৎ নয়।
লক্ষণসমুহ গ্লোমেরেলা টুকুমেন্যান্সিস নামের একটি ছত্রাকের কারণে ঘটে থাকে, যা মাটিতে অল্প সময়ের (কয়েক মাস ) জন্য বেঁচে থাকতে পারে। যদিও এটি কোন প্রকৃত মৃত্তিকা বাহিত জীবাণু নয় তবুও ফসলের অবশিষ্টাংশ থেকে মাটিতে ঝরে পড়া বীজগুটি সদ্য রোপণ করা চারাতে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া, এ রোগ মধ্যশিরা বা সংক্রামিত ফসলের মধ্যশিরা বা আক্রান্ত কাণ্ডে, বায়ু, বৃষ্টি, ভারী শিশির এবং জলসেচের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শীতল, ভিজা আবহাওয়া, মাটির উচ্চ আর্দ্রতা এবং একই ফসলের বারে বারে চাষ এ রোগের অনুকূল পরিবেশ। খরাও এ রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায়। আখ ছাড়াও এ ছত্রাক গৌণ বাহক যেমন ভুট্টা এবং জোয়ার ফসলে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।