ভুট্টা

লালপচা রোগ

Glomerella tucumanensis

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • কাণ্ডে বিভিন্ন আকৃতির লালচে-বাদামী বর্ণের ফোস্কা দেখা যায়।
  • কাণ্ডের অভ্যন্তরে সাদা তরুমজ্জায় লালপচা অংশ দেখা যায়।
  • পাতার উপর বিশেষ করে মধ্যশিরা বরাবর লাল ডিম্বাকৃতি দাগ দেখা যায়।
  • লাল, বাদামী বা ধূসর বিবর্ণ পচা দানা দৃশ্যমান হয় এবং টক গন্ধ ছড়ায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

2 বিবিধ ফসল

ভুট্টা

উপসর্গ

সংক্রামিত ডগার বর্ণ ফ্যাকাসে হয়ে যায় ও পৃষ্ঠদেশে বড় আকৃতির লাল বর্ণের ফোস্কা দেখা যায় এবং জাতের উপর নির্ভর করে প্রকোপ কম-বেশী হতে পারে। কাণ্ডের লম্বচ্ছেদ করার পর সাদা তরুমজ্জার পরিবর্তে লাল পচা কোষকলা দেখা যায়। রোগ প্রতিরোধী জাতে রোগাক্রান্ত অংশ মধ্যপর্বের ভিতর সীমাবদ্ধ থাকে। রোগের বিস্তার যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে তরুমজ্জার ভিতরকার অংশ ফাঁপা হতে থাকে এবং শক্ত আঁশসমূহ ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে থাকে। পাতা নেতিয়ে পড়ে এবং কুঁচকে যাওয়া শুরু করে। গাছ থেকে দুর্গন্ধ আসা শুরু হয় এবং প্রতিকূল পরিবেশে সহজেই কাণ্ড ভেঙ্গে যায়। পাতার মধ্যশিরা বরাবর ছোট ডিম্বাকৃতি লাল অথবা বড় আকারের ক্ষত সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং মাঝেমধ্যে তা সম্পূর্ণ পাতা জুড়ে বিস্তৃত হয়। পাতার খোলের উপর লাল বর্ণের ছোপ ছোপ দাগ হতে পারে এবং মাঝে মধ্যে পাতার পত্রফলকে ছোট ঘন কালো দাগ দেখা যেতে পারে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

বীজ আখে ছত্রাক জীবাণু নাশ করতে অথবা লালপচা রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে গরম জলে শোধন (উদাহরণস্বরূপ ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২ ঘণ্টা) করা যেতে পারে। এছাড়াও বীজ শোধন করতে জৈবিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মধ্যে ছত্রাক প্রজাতি চিটোমিয়াম এবং ট্রাইকোডার্মা এবং ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি সিউডোমোনাস অন্তর্ভুক্ত। উপরোক্ত দ্রব্যাদি সমন্বিত দ্রবন পত্রপল্লবের উপর স্প্রে করলে রোগের বিস্তার হ্রাসে তা অত্যন্ত কার্যকরী।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ৫০-৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপী ছত্রাকনাশক (উদাহরণস্বরূপ থিরাম) মিশ্রিত গরম জলের দ্রবনে বীজ শোধন করুন। মাঠ পর্যায়ে রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা তেমন কার্যকর নয় এবং তা সুপারিশ করা উচিৎ নয়।

এটা কি কারণে হয়েছে

লক্ষণসমুহ গ্লোমেরেলা টুকুমেন্যান্সিস নামের একটি ছত্রাকের কারণে ঘটে থাকে, যা মাটিতে অল্প সময়ের (কয়েক মাস ) জন্য বেঁচে থাকতে পারে। যদিও এটি কোন প্রকৃত মৃত্তিকা বাহিত জীবাণু নয় তবুও ফসলের অবশিষ্টাংশ থেকে মাটিতে ঝরে পড়া বীজগুটি সদ্য রোপণ করা চারাতে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া, এ রোগ মধ্যশিরা বা সংক্রামিত ফসলের মধ্যশিরা বা আক্রান্ত কাণ্ডে, বায়ু, বৃষ্টি, ভারী শিশির এবং জলসেচের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শীতল, ভিজা আবহাওয়া, মাটির উচ্চ আর্দ্রতা এবং একই ফসলের বারে বারে চাষ এ রোগের অনুকূল পরিবেশ। খরাও এ রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায়। আখ ছাড়াও এ ছত্রাক গৌণ বাহক যেমন ভুট্টা এবং জোয়ার ফসলে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সম্ভব হলে রোগ প্রতিরোধী কিংবা অধিক সহনশীল জাত ব্যবহার করুন।
  • প্রত্যয়িত উৎস থেকে সুস্থ বীজ এবং চারা ব্যবহার করুন।
  • রোগমুক্ত মাঠ থেকে চারা সংগ্রহ করুন।
  • মরশুমের অত্যধিক গরম বা শীতল আবহাওয়া এড়াতে রোপণের সময় পরিবর্তন করুন।
  • নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন এবং রোগাক্রান্ত গাছ বা গোছা তুলে ফেলুন।
  • রোগাক্রান্ত আখ দিয়ে মুড়িচাষ পরিহার করুন।
  • ফসল সংগ্রহের পর গাছের অবশিষ্টাংশ তুলে ফেলুন এবং পরবর্তীতে তা পুড়িয়ে ফেলুন।
  • অন্যথায়, জমিতে একাধিক বার লাঙ্গল দিয়ে চাষ দিন যাতে ছত্রাকজাতীয় অংশ মাটির উপরে সূর্যালোকে উন্মুক্ত হয়।
  • ২-৩ বৎসর অন্তর অন্তর অ-সংবেদনশীল জাতের ফসলের সাথে শস্য আবর্তনের পরিকল্পনা করুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন