পেঁয়াজ

হোয়াইট রট রোগ

Stromatinia cepivora

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • পাতা হলুদ হতে শুরু করে এবং আগা থেকে শুকিয়ে যেতে থাকে।
  • উদ্ভিদের গোড়ায় তুলোর মতো সাদা ছত্রাক বৃদ্ধি পায়।
  • শিকড় নষ্ট হয়ে যায় এবং কাণ্ড ও কন্দের ক্ষয় হয়।
  • সাদা ছত্রাকদেহের মধ্যে ছোট কালো বিন্দু দেখা যায়।
  • ফসলের মাঠে দলে দলে গাছ নষ্ট হয়ে যায় ও মারা যেতে থাকে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

3 বিবিধ ফসল
রসুন
পেঁয়াজ
মটর

পেঁয়াজ

উপসর্গ

বৃদ্ধির যে কোন পর্যায়ে এ সংক্রমণ সৃষ্টি হতে পারে কিন্তু সাধারণতঃ বয়স্ক গাছেই প্রথম তা দেখা যায়। এ রোগের বৈশিষ্ট্য হলো পাতার আগা থেকে শুরু করে নীচের দিকে হলুদ হয়ে যায়। গাছ শুকিয়ে পরে মারা যেতে পারে। যখন উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলি সুস্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়, জীবাণু তখন গাছের শিকড়ে, কন্দে, কাণ্ডে ও পাতার খোলকে দলবদ্ধ হয়ে একসাথে বসবাস করে। সাদা ছত্রাকজনিত বৃদ্ধি গাছের গোড়ায় মাটি বরাবর দৃশ্যমান হয় এবং গাছের শিকড়ে ক্ষয়ের চিহ্ন দেখা যায়। যখন টেনে তোলা হয়, কন্দের গোড়ায় সাদা ফুঁয়োফুয়ো ছত্রাকের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায় এবং আগাম পচনের লক্ষণ দেখা যায়। সাদা ছত্রাকদেহের মধ্যে ছোট্ট, কালো ও গোলাকার বিন্দুবৎ দাগ লক্ষ্য করা যায়। প্রধান শিকড় ক্রমশঃ নষ্ট হয়ে গিয়ে একেবারে হারিয়ে যায়। গৌণ শিকড় বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সমান্তরালভাবে বৃদ্ধি পেয়ে অন্য উদ্ভিদদেহে সংক্রমণের সরাসরি পথ তৈরি করে দেয়। কয়েকদিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে গাছ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। মাঠে কেন দলে দলে উদ্ভিদে এ লক্ষণ প্রকাশ পায় এর দ্বারা তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

জৈবিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে কয়েক স্তরীয় নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আছে এবং তা মূলতঃ বিনাশকারী ছত্রাক হিসাবে কাজ করে। উদাহরণ হিসাবে ট্রাইকোডার্মা (Trichoderma), ফুসারিয়াম (Fusarium), গ্লিয়োক্লাডিয়াম (Gliocladium) বা ক্যাটোমিয়াম (Chaetomium)-এর প্রজাতিকে হোয়াইট রটের পরজীবী হিসাবে ব্যবহার করে এ ছত্রাকের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অন্য কিছু ছত্রাক যেমন ট্রাইকোডার্মা হারজিয়ানাম (Trichoderma harzianum), টেরাটোস্পার্মা অলিকোক্ল্যাডাম (Teratosperma oligocladum) বা ল্যাটেরিস্পোরা ব্রেভির‍্যামা (Laterispora brevirama)-ও দারুন কার্যকরী হয়। যখন মাঠ অনুর্বর থাকে তখন রসুনের নির্যাস ব্যবহার করে এ ছত্রাকের বৃদ্ধি ও ছত্রাকরেণুর উৎপাদনকে উদ্দীপিত করা যায়। এর ফলে পরবর্তী মরশুমে এ রোগের আক্রমণ হ্রাস পায়। রসুনের কন্দের খোসা ছাড়িয়ে, থেঁতো করে ১০ লিটার জলের সঙ্গে মেশাতে হয়। এবার মাঠে প্রতি ২ বর্গ মিটারে ১০ লিটার হারে তা প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই দ্রবণ প্রয়োগের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে কারণ তা এ ছত্রাকের পক্ষে অনুকূল হয়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। বিশেষ করে হোয়াইট রট রোগের ক্ষেত্রে প্রচলিত ও জৈবিক পদ্ধতি এ রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। যদি ছত্রাকনাশক প্রয়োজন হয়, তবে টেবুকোন্যাজোল (tebuconazole), পেন্থিওপাইরাড (penthiopyrad), ফ্লুডিওক্সোনিল (fludioxonil ) বা আইপ্রোডিওন (iprodione) সমৃদ্ধ ছত্রাকনাশক মাটিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে বা চারাগাছ রোপনের পরে পাতায় স্প্রে করা যেতে পারে। নিয়ন্ত্রণকারী হিসাবে কি ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপরে প্রয়োগ পদ্ধতি নির্ভর করে এবং আগেভাগেই তা দেখে নেওয়া দরকার।

এটা কি কারণে হয়েছে

হোয়াইট রট রোগ মাটিতে জন্মানো ছত্রাক স্কেরোটিয়াম সেপিভোরাম (Sclerotium cepivorum) দ্বারা সৃষ্ট হয়। উদ্ভিদ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাটির মাধ্যমে রোগাক্রান্ত হয় এবং এ জীবাণু প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। মাটিতে কত পরিমান ছত্রাক থাকবে তার উপরে এই রোগের তীব্রতা নির্ভর করে। একবার আক্রমণ করলে এ ছত্রাকের হাত থেকে রেহাই পাওয়া প্রায় অসম্ভব। অ্যালিয়াম (Allium) শিকড়ের নির্যাস এ ছত্রাকের জীবনচক্র এবং বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল হয়। ঠাণ্ডা আবহাওয়া (১০ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা) ও আর্দ্র পরিবেশে এ রোগের আবির্ভাব ঘটে এবং মাটির নিচে ছত্রাকের বৃদ্ধির মাধ্যমে, বন্যার জলের মাধ্যমে, যন্ত্রপাতি ও সংক্রমিত উদ্ভিদ দেহাংশের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার ঘটে। পেঁয়াজ বা রসুনের ক্ষেত্রে হোয়াইট রট একটি অন্যতম ক্ষতিসাধক রোগ এবং এর ফলে দারুনভাবে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পায়। অন্য জমিতে কাজ করার আগে চাষের সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করে নিন।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • রোগে কম আক্রান্ত হয় এমন জাত রোপন করুন, যেমন লাল পেঁয়াজ।
  • প্রত্যয়িত উৎস থেকে সুস্থ বীজ বা উদ্ভিদ উপাদান সংগ্রহ করে ব্যবহার করুন।
  • রোপনের পূর্বে কন্দের গোড়ায় ছত্রাকের কোন চিহ্ন দেখা যায় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন।
  • যদি প্রত্যয়িত উদ্ভিদ উপাদান না পাওয়া যায়, কন্দের বদলে বীজ ব্যবহার করুন।
  • মাঠে যাতে জলবদ্ধতা না হতে পারে সেজন্যে উত্তম জল নিকাশী ব্যবস্থা গড়ে তুলুন।
  • নাইট্রোজেন সারের অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না।
  • রোগের কোন লক্ষণ দেখা যায় কিনা তা বুঝতে উদ্ভিদ বা মাঠ নিয়মিতভাবে তদারকি করুন।
  • সংক্রমিত উদ্ভিদ সরিয়ে নিয়ে পুড়িয়ে নষ্ট করে দিন।
  • রোগ যাতে ছড়িয়ে না যায় সেইজন্যে সংক্রমিত উদ্ভিদ দিয়ে মিশ্র জৈব-সার প্রস্তুত করবেন না।
  • মাঠে কাজ করার আগে চাষের সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ভালো করে ধুয়ে নিন বা জীবাণুমুক্ত করুন।
  • এ রোগের জীবাণুকে পরাশ্রয় প্রদান করে না এমন বিকল্প ফসল চাষ করে ফসল-চক্র অনুসরণ করুন।
  • গভীর ভাবে জমি কর্ষণ করুন এবং মাটি যাতে রৌদ্রের সরাসরি সংস্পর্শ লাভ করে তা দেখুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন