বাঁধাকপি

শিকড়ের গুটি রোগ।

Plasmodiophora brassicae

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে মরা শুরু করে।
  • মূল গোটা গোটা ধরে স্ফীত হয়।
  • খর্বাকৃতির বৃদ্ধি।
  • ফলন কম।
  • রোগাক্রান্ত উদ্ভিদের ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পচন ধরে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

2 বিবিধ ফসল
বাঁধাকপি
ফুলকপি

বাঁধাকপি

উপসর্গ

মাটির ওপর এবং নিচে রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। সর্বোপরি, উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং পাতা হলুদ হয়ে যায়। জমি শুষ্ক থাকলে গাছ নেতিয়ে পড়ে, কিন্তু সিক্ত অবস্থায় গাছ পুনরায় সজীব হয়ে যায়। পাতার রং বেগুনিও হতে পারে। মাটির নিচের অংশের লক্ষণ হিসেবে মূলের গিঁটযুক্ত হয়ে ফুলে যাওয়া এবং ক্ষুদ্র মূলের (মূলরোম) বিলুপ্তি ঘটে। ক্রমশ এ গিঁট ফুলে যাওয়ার ফলে মূলের বিকৃতি ঘটে। ফলে স্বাভাবিক মূল গদাকৃতির হয়ে যায় (এ কারণেই এ রোগের এমন নামকরণ)। ফসলের বৃদ্ধি এবং ফলন গুরুতরভাবে হ্রাস পায় ও মারাত্মকভাবে আক্রান্ত গাছ মারা যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

এ রোগের একমাত্র জৈবিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হচ্ছে ঝিনুক চূর্ণ বা ডলোমাইট ব্যবহার করে মাটির পিএইচ মাত্রা ৭.২ পর্যায়ে বাড়িয়ে তোলা। শরৎকালে ছোট চাষী এবং বাগানকারীগন এ ব্যবস্থা নিতে পারেন। মাটির পিএইচ মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য কিছু সহজলভ্য যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ১০০ শতাংশ কার্যকর নয় বলে মাটি ধূমায়িত করা সুপারিশযোগ্য নয়। চারা রোপণের পূর্বে চুনাপাথর (ক্যালসিয়াম কার্বোনেট) কিংবা ভেজা চুন (ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড) প্রয়োগ করে পিএইচ মাত্রা বাড়িয়ে নিলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব হ্রাস পায়।

এটা কি কারণে হয়েছে

মাটিস্থ জীবাণু প্লাজমোডাইয়োফোরা ব্রাসিকি বাঁধাকপির মূলে আক্রমণ করার ফলে রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এ জীবাণু বিভিন্ন শস্য যেমন ব্রাসেলস স্প্রাউট, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগম এবং মূলাতে আক্রমণ করে। এ জীবাণু সুপ্ত স্পোর তৈরি করতে পারে যা ২০ বছর পর্যন্ত মাটিতে সুপ্তাবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। সংবেদনশীল মূলের সংস্পর্শে এসে স্পোরগুলো অঙ্কুরোদগম করে এবং মূলরোম সংক্রমিত হয়। ফলে শিকড় ফুলে যায় এবং এ লক্ষণটির সাপেক্ষেই রোগের নামকরণ করা হয়েছে। ফুলে যাওয়া অঞ্চল থেকে ক্রমশ আরো জীবাণু তৈরি হয় এবং মাটিতে সে জীবাণু প্রবেশ করে। এভাবে রোগের জীবনচক্র সম্পন্ন হয়। আর্দ্র এবং উষ্ণ মাটিতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পিএইচ মাত্রা বাড়ালে এ রোগের তীব্রতা হ্রাস পেলেও সম্পূর্ণ রোগমুক্তি ঘটে না।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • প্রত্যয়িত উৎস থেকে সু্স্থ সবল বীজ সংগ্রহ করুন।
  • রোগ প্রতিরোধী সহনশীল জাত ব্যবহার করুন।
  • অতিরিক্ত জল এড়িয়ে যাওয়ার জন্য উঁচু জমিতে চাষ করুন।
  • জমিতে উত্তম জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা বজায় রাখুন।
  • কখনোই অতিরিক্ত জল সেচ দেবেন না।
  • সংক্রমিত জল দিয়ে সেচ দেবেন না।
  • কয়েক বছর এর জন্য শস্য আবর্তন পরিকল্পনা করুন।
  • পূর্বে এ রোগ হয়েছে এমন জমিতে বাঁধাকপি চাষ করবেন না।
  • জমির গঠন এবং অধিক পিএইচ মাত্রা(৭.২) সমুন্নত রাখুন।
  • চুন প্রয়োগের মাধ্যমে এমনটি করতে পারেন।
  • যন্ত্রপাতি কিংবা জুতার মাধ্যমে যেন রোগ সংক্রমণ না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
  • জমির ভেতরে এবং চারপাশ থেকে আগাছা অপসারণ করুন।
  • জীবাণুর মাত্রা হ্রাস করার জন্য ফসল কাটার পর সূর্যালোকে জমি উন্মুক্ত রাখুন।
  • জমি থেকে আক্রান্ত মূল অপসারণ করে ধ্বংস করুন, এতে জীবাণুর পরিমাণ হ্রাস পাবে।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন