তুলা

ভার্টিসিল্লিয়াম উইল্ট

Verticillium spp.

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • কিনারা থেকে শুরু হয়ে পাতা হলুদ হয়ে যায়।
  • পাতার প্রধান শিরা সবুজই থাকে।
  • কাণ্ডের উপরে কালো সরু চিকন দাগ দেখা যায়।
  • উদ্ভিদ দুর্বল হয়ে পড়ে।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

26 বিবিধ ফসল
খুবানি
শিম
করলা
বাঁধাকপি
আরো বেশি

তুলা

উপসর্গ

বিভিন্ন শস্যের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলি একে অপরের থেকে অনেকখানি আলাদা হয়। সাধারণত পুরাতন পাতা প্রথমে বিবর্ণ হলুদ হয়ে যায়, পরবর্তীতে এর উপরে মরা কালো দাগের আবির্ভাব হয়। কিছু ক্ষেত্রে, পাতার মাত্র একধারে শুকিয়ে যেতে থাকে যাকে ক্ষেত্রীয় পাণ্ডুরতা (sectorial chlorosis) বা “একদিক বিশিষ্ট শুষ্কতা” (one-sided wilt) বলা হয়। উষ্ণ রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় এই উপসর্গ আরো তীব্র হয়। কাণ্ডের গায়ে একটি সুষম কালো রেখার আবির্ভাব হয় এবং এটি নীচের দিক থেকে উপরের দিকে বিস্তৃত হয় কিন্তু পরে তা সমগ্র কাণ্ডকে ঘিরে ফেলে। যখন সংবহন কলা (vascular tissues) ছত্রাকের বৃদ্ধিজনিত কারণে সম্পূর্ণভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়, উদ্ভিদের বিটপ অংশও শুকিয়ে যেতে থাকে এবং সংবহন কলা বাদামী পাণ্ডুর বর্ণ ধারণ করে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি প্রায় না হওয়া, পাতায় অকাল বার্ধক্য সৃষ্টি এবং উদ্ভিদের কাষ্ঠল অংশে দাগ ধরে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। কোন সময়ে যদি আতসকাঁচের সাহায্যে নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করা যায় তবে মৃতবৎ বা জীবিত কোষকলার উপরে উভয়ক্ষেত্রেই বিন্দু বিন্দু কালো দাগ দেখা যায়।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

স্ট্রেপটোমাইসেস লিডিসাস (Streptomyces lydicus) সমৃদ্ধ জৈব-ছত্রাকনাশক এ ছত্রাকের জীবনচক্রে ছেদ আনতে এবং রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। গাছ একবার রোগাক্রান্ত হলে এর থেকে মুক্ত হওয়া খুবই কঠিন। মাটিতে যদি ধোঁয়া দেওয়া যায় তবে তা কার্যকরী হয় কিন্তু তা প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ। কোন রাসায়নিক প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং প্রয়োগকালীন সময়ে আবহাওয়ার পরিস্থিতি কেমন তার উপরে এর কার্যকারিতা নির্ভর করে।

এটা কি কারণে হয়েছে

ভার্টিসিল্লিয়াম উইল্ট মাটিতে জন্মানো ছত্রাকের দ্বারা সৃষ্ট রোগ। পরাশ্রয়ী উদ্ভিদের অভাবে এ ছত্রাক মাটিতে পড়ে থাকা শস্যের অবশিষ্টাংশের উপরে জীবনধারণ করে। এ ছত্রাক উদ্ভিদের ক্ষুদ্র শিকড় বা বাকলে থাকা ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে সংবহন কলাতন্ত্রে প্রবেশ করে। যদি চারাগাছ বা উদ্ভিদের মধ্যে একবার প্রবেশাধিকার পায় তাহলে এ ছত্রাক দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায় এবং জল ও খাদ্যপ্রাণের পরিবহনে বাধার সৃষ্টি করে যার ফলে গাছ শুকিয়ে যেতে থাকে এবং উপরের অংশে (পাতা ও কাণ্ড) ক্ষয়রোগের সৃষ্টি হয়। উষ্ণ রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় এ রোগের তীব্রতা বাড়ে। রোগের পরবর্তী পর্যায়ে, এ ছত্রাক মৃতবৎ কোষকলার উপরে বাসা বাঁধে এবং আতসকাঁচের সাহায্যে লক্ষ্য করলে তা কালো বলে মনে হয়। একই জায়গায় এ ছত্রাক বছরের পর বছর ধরে টিকে থাকতে পারে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • রোগ প্রতিরোধী বা সহনশীল জাতের চারাগাছ রোপণ করুন।
  • এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী এমন ফসল আন্তঃফসল হিসাবে চাষ করবেন না।
  • নাইট্রোজেনের পরিমান বেশী আছে এমন সার ও প্রয়োজনাতিরিক্ত জল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • রোগের বিরুদ্ধে লড়তে উদ্ভিদ উজ্জীবক ব্যবহার করুন।
  • গাছের আক্রান্ত অংশ ছাঁটাই করে ছাঁটাই অংশ জমি থেকে সরিয়ে নিয়ে পুড়িয়ে দিন।
  • রোগাক্রান্ত উদ্ভিদকে নাড়াচাড়া করার পরে সমস্ত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম পরিষ্কার করুন।
  • পাতা যখন সিক্ত অবস্থায় থাকবে তখন চাষের জমিতে কাজ বন্ধ রাখুন।
  • একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে মাটিতে সরাসরি সূর্যের বিকিরণ পড়তে দিন (সোলারাইজেশন)।
  • উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ অপসারিত করে মাটির গভীরে পুঁতে দিন বা পুড়িয়ে ফেলুন।
  • পরাশ্রয় প্রদান করে না এমন শস্যের চাষ করে ফসল চক্র অব্যাহত রাখুন।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন