পেঁয়াজ

ডাউনি মাইল্ডিউ

Peronosporales

ছত্রাক

সংক্ষেপে

  • পাতার উপরের পৃষ্ঠে বিভিন্ন আকারের হলুদাভ বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো দাগের আবির্ভাব ঘটে।
  • এগুলো ক্রমে বিভিন্ন আকারের বাদামী রঙযুক্ত অনিয়মিত মরা কোষে পরিণত হয়।
  • পাতার পৃষ্ঠতলে দাগের নিচে গভীর, সাদা থেকে ধূসর তুলোর মতো আস্তরণ বেড়ে ওঠে।
  • পত্রমোচন এবং কচি মঞ্জরীর খর্বাকৃতি হওয়া বা মারা যাওয়ার ফলে ফুল বা ফলের বৃদ্ধি স্তব্ধ হয় এবং ফলন হ্রাস পায়।

এখানেও পাওয়া যেতে পারে

11 বিবিধ ফসল

পেঁয়াজ

উপসর্গ

বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কচি পাতার উপরের পৃষ্ঠভাগে বিভিন্ন আকারের হলুদাভ দাগ দেখা যায়। রোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, এই দাগগুলি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং কৌণিক আকার ধারণ করে এবং পত্রশিরা দ্বারা সীমাবদ্ধ হয়। এগুলির কেন্দ্রভাগ বিভিন্ন বাদামী রঙের মরা কোষ অংশ দিয়ে তৈরি হয়। সাধারণতঃ পরপর কয়েকদিন ধরে উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া স্থায়ী হলে এ দাগগুলোর নিচে ঘন সাদা থেকে ধূসর তুলার মতো স্তর বৃদ্ধি পায় কিন্তু রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়াতে এগুলি অদৃশ্য হয়ে যায়। কচি পত্রমঞ্জরী ঝরে পড়ে বা খর্বাকৃতি হয়। ফল এবং গাছের অন্যান্য অংশও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

সুপারিশমালা

জৈব নিয়ন্ত্রণ

ডাউনি মাইল্ডিউ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে বাণিজ্যিক জৈব চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলন আছে। রোগের মৃদু অবস্থায়, কিছু না করাটাই সব থেকে ভালো এবং আবহাওয়ার উন্নতির জন্যে অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়। কিছু ক্ষেত্রে, প্রাক্‌-সংক্রমণ জৈব ছত্রাকনাশক ব্যবহার করলে তা উদ্ভিদকে সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। এর মধ্যে তাম্র-ঘটিত ছত্রাকনাশক যেমন বোর্দো মিশ্রণ উল্লেখযোগ্য।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। রক্ষাকারী ছত্রাকনাশক উদ্ভিদের রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে কিন্তু তা পাতার নিচে সঠিকভাবে স্প্রে করতে হবে। ডাইথিয়োকার্বামেটস পরিবারের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। রোগের প্রথম লক্ষণ দেখা যাওয়া মাত্রই সংক্রমণ-পরবর্তী ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণভাবে সংক্রমণ-পরবর্তী যে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে ফোসিটিল-অ্যালুমিনাম, অ্যাজোক্সিস্ট্রবিন ও ফেনিলামাইডস (উদা. মেটাল্যাক্সিল-এম) উল্লেখযোগ্য।

এটা কি কারণে হয়েছে

রোগের লক্ষণ সৃষ্টি হয় পেরোনস্পোরালেস বর্গের ছত্রাক দ্বারা এবং যেখানে ঘনঘন বৃষ্টিপাত ঘটে ও উষ্ণ তাপমাত্রাযুক্ত ছায়াময় স্থা্ন আছে সেখানে তা ধ্বংসাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে (১৫ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা)। এই সমস্ত ছত্রাক তাদের আশ্রয়দাতার সঙ্গে সহজেই অভিযোজিত হতে পারে, এর অর্থ হলো প্রতিটা প্রধান ফসল একই সঙ্গে তার নিজস্ব প্রজাতির ছত্রাককে আশ্রয় দেয়। ছত্রাক মাটিতে পড়ে থাকা রোগাক্রান্ত উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ বা অংকুরের উপর বা বিকল্প আশ্রয়দাতা উদ্ভিদে (ফসল এবং আগাছা) আশ্রয় গ্রহণ করে শীতকাল অতিবাহিত করে দেয়। অনুকূল পরিস্থিতিতে বাতাস এবং বৃষ্টির জলের ঝাপটায় ছত্রাকরেণু চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। ছত্রাকরেণু অংকুরিত হয় এবং এমন এক গঠন প্রস্তুত করে যা পাতার নিচের স্বাভাবিক পত্ররন্ধ্র দিয়ে পাতার মধ্যে প্রবেশ করে। এবার তা টিস্যুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, অবশেষে আভ্যন্তরীন টিস্যু বাইরের দিকে বেড়ে ওঠে এবং মাইল্ডিউ বৈশিষ্ট্য গঠন করে।


প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • সুলভ হলে রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন করুন।
  • উদ্ভিদকে শুষ্ক অবস্থায় রাখার ব্যবস্থা করুন, উদাহরণ হিসাবে উদ্ভিদের ডালপালার মধ্যে দিয়ে সঠিক বায়ু চলাচল করার ব্যবস্থা করা।
  • মাটিতে নিকাশী ব্যবস্থা যাতে সঠিক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
  • উদ্ভিদের সজীবতার জন্যে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগের ব্যবস্থা করুন।
  • দুটি উদ্ভিদের মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁকা স্থান রাখুন।
  • গাছ যাতে পর্যাপ্ত পরিমানে সূর্যালোক পায় তা নিশ্চিত করুন এবং সঠিক অভিমুখ নির্দেশ করুন।
  • মাঠের মধ্যে এবং মাঠের আশেপাশে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।
  • মাঠ থেকে উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ অপসারিত করুন।
  • যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখুন।
  • মাঠ থেকে উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ সরিয়ে নিন।
  • যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম পরিষ্কার করুন।
  • সংক্রামিত মাটি ও উদ্ভিদ উপাদান সরবরাহ থেকে বিরত থাকুন।
  • উদ্ভিদকে শক্তিশালী করতে উদ্দীপক প্রয়োগ করা যেতে পারে।

প্ল্যান্টিক্স অ্যাপসকে ডাউনলোড করুন